somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিক্রিয়া

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাইমারি কালচার ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও সিডিএলজির সদস্য মোশাররফ হোসেন মুসা চলার পথে একটি চিরকুট বিলি করেন, তাতে লেখা আছে -“চিন্তা সাধারণত চার প্রকার। যথা; সংকীর্ণ চিন্তা, সাধারণ চিন্তা, মহৎ চিন্তা ও শ্রেষ্ঠ চিন্তা। প্রথমতঃ সংকীর্ণ চিন্তার লোকেরা পরনিন্দা-পরচর্চায় সময় কাটান; দ্বিতীয়তঃ সাধারণ চিন্তার লোকেরা প্রতিদিনকার ঘটনা বিশ্লেষণ করতে ভালোবাসেন; তৃতীয়তঃ মহৎ চিন্তার লোকেরা সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজেন; চতুর্থতঃ শ্রেষ্ঠ চিন্তার লোকেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।”

বাস, ট্রেন, টেম্পুতে সাধারণের মুখে, রাস্তাঘাট ও ফুটপাথে মিটিং- মিছিল- মানববন্ধনে সবখানে শুধু অভিযোগ, “নাই নাই, চাই চাই”। যেন প্রতিক্রিয়াই আমাদের একমাত্র পৈতৃক সম্পত্তি। আমজনতার প্রতিক্রিয়া তাও যেন মানা যায়। কিন্তু জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়তে অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী-কলামিস্টের জ্ঞানসিদ্ধ লেখনীতেও কেবলই প্রতিক্রিয়ার গন্ধ !

কথায় কথায় আমরা সরকারের মুন্ডুপাত করে তৃপ্তবোধ করি। সরকারি-বিরোধী দলও পরস্পরের নিন্দাপাঠের মধ্য দিয়ে নিজেদের ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ প্রমাণের প্রয়াস চালিয়ে থাকে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সভা-সেমিনার, টক শোতে দেশ ও জাতির বর্তমান-ভবিষ্যত গণনা করে পাণ্ডিত্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। সবখানেই চুলচেরা প্রতিক্রিয়া বিনে প্রগতির দেখা পাওয়া ভার। সবার মুখের সার কথা, “চাই-চাই, আরও চাই, না দিলে তোর মুখে ছাই”। যা মূলত অসহায় দাসবর্গের (!) একমাত্র হাতিয়ার। দাস সমাজ ব্যবস্থা গত হয়েছে বহু আগেই, তবে দাস মনোবৃত্তি এখনো আমাদের ডিজিটাল অন্তরে সদর্পে আসীন । আমাদের দেশটি দু’দুবার স্বাধীনতা লাভ করেছে। আমাদের সকলের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা । কিন্তু আমাদের নেতা-নেত্রীদের আচরণে মালিকানা বোধের পরিচয় পাওয়া যায় না। অর্থাৎ তারাও সংকীর্ণ চিন্তা আর সাধারণ চিন্তায় বন্দি হয়ে আছেন ।

বার্ট্রান্ড রাসেল যেমনটি বলেছেন, “গণতন্ত্র সব সময় সঠিক রায় দিবে, এমনটা নয়।” অন্যদিকে মুহাম্মদ(সঃ) এর ভাষায়, একটি দেশের শাসকবর্গ তেমনই হবে, যেমন তার জনগণ। মোদ্দা কথায়, নষ্ট দুধের সর বিষাক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। আপাদমস্তক প্রতিক্রিয়াশীল সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেশকে স্বর্গসুখে দোল খাওয়াবে, এহেন কল্পনাকারীকে নির্বোধ বিচার্য করলে গুণাহ হবার কথা নয়।

এই অনুন্নত দেশটিতে কিঞ্চিৎ উন্নত কপাল নিয়ে জন্মানো যেসকল নাগরিক বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পান, তাদের অনেকেই দেশে ফিরে অভাগা জন্মভূমিকে গালমন্দ করে বিশেষ পুলক অনুভব করেন। এর কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে তেনাদের উন্নত কপালের আড়ালে গজিয়ে ওঠা মস্তিষ্কের দলা যথোচিত উন্নয়নের ছোঁয়া পায় না। তাই তাদের প্রতিক্রিয়শীলতার ভোল্টেজ ধিরাধির বেড়ে চলে। তারা উন্নত দেশের সুব্যবস্থাপনার সাথে সাম্রাজ্যবাদের অনুগত দেশটির কুব্যবস্থাপনার তুলনা করে কপাল চাপড়ান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের কি মানুষের মত হাত-পা, জ্ঞান-গরিমা আছে যে সে নিজে নিজেই ভদ্রবেশ ধারণ করবে? দেশকে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্ব আমাদের নীতি নির্ধারক তথা সরকারের। আর সরকারকে সঠিক পথে চালনার কাজ বর্তায় সুমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের উপর। সেই সাথে র্নিবিশেষ জনতার সুবিবেচনাপ্রসূত অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তাই দেশের প্রকৃত উন্নয়নের মূলমন্ত্র অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র। যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখনিঃসৃত বাণী হয়েও এসেছিলো গত ৫ই আগস্ট, ২০১২ তারিখে এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে। যদিও সেই বাণী নি®প্রাণ প্রতিক্রিয়ার মাঝেই গণ্ডিবদ্ধ। বাস্তবমূখী কোনো পদক্ষেপের প্রতিফলন তাঁর এবং তাঁর স্বগোত্রীয়দের কর্মচেতনায় অদৃশ্য। আমরা জানি, জনগণ থাকে স্থানীয় ইউনিটগুলোতে। স্থানীয় সরকারকে অকার্যকর রেখে সরকার কীভাবে অংশগ্রহণ মূলক গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চান, তা বোধগম্য নয়। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার গবেষক আবু তালেব প্রণীত ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’ নিয়ে গবেষণা ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সিডিএলজি (সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক লোকাল গর্ভনেন্স)। তাদের মতে, দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থা তথা কেন্দ্র্রীয় সরকার আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাই সমাধান । সে সঙ্গে উক্ত রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতে হবে না পুরো দেশকে। স্থানীয় সমস্যাগুলো স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ‘স্থানীয় সরকার’ সমাধানে উদ্যোগী হতে পারবে। সাধারণ মানুষ কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে সরকারের কার্যক্রম। এতে নিশ্চিত হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। মানুষ প্রশাসনের সাথে নিজেদের জড়িত রাখতে পারবে, বিধায় প্রশাসনের সাথে তাদের দূরত্ব লাঘব হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রত্যেকে নিজেদের তথা স্থানীয় সমস্যা সমাধানে আত্মনিয়োগের তাগিদ অনুভব করবে। আমজনতার চিন্তাধারা প্রতিক্রিয়ার ঘাড়ে পা দিয়ে প্রগতির পথে উন্নীত হবার পথ পাবে। তাদের অংশগ্রহণে সমগ্র দেশটি গণতন্ত্র ও গণতন্ত্র্রায়নের দিকে যাত্রা শুরু করবে । মনে রাখা দরকার, প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রাখা মানে আমরা এখনো দেশের মালিক হতে পারিনি অথবা মালিক হতে আগ্রহী নই, তা প্রমাণ করা ।

View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×