তোমরা সব তোমাদের, আমার থাকা না থাকার প্রশ্নে কেউ আন্দোলিত হয় না। কেউ জানে না বাংলা বর্ণমালার কিছু অক্ষর সাজিয়ে একটি নামে পরিচিত এই আমার কোন প্রাপ্তি ছিল না। আমার কোন অবদান ছিল না তোমাদের মনে এবং এ চরাচরের কোন উপলক্ষে। আমার কোন কথা ছিল না। কাউকে কাছে পাবার ব্যাকুলতা আমাকে কখনো চঞ্চল করেনি। তুমুল কোন বসন্ত দিনে একা থাকার বিপরীতে কারো কাঁধে মাথা রাখার এক দুর্বার নির্ভরতার সাক্ষী হবার প্রয়োজন হয়নি আমার। আমার দু চোখে জল গড়িয়ে পরার ইতিহাস জানার প্রয়োজন বোধ করনি তোমরা কেউ। তবুও আমি শুনে গেছি তোমাদের কথামালা। আমি তোমাদের খুব আপনজন হয়ে পাশে থেকে গেছি। হয়তো এ পাশে থাকা কোন শুণ্যস্থান পূরণ ছিল, পূর্ণাজ্ঞ কোন উপস্থিতি ছিল না। আমি খুব ভীত সন্ত্রস্ত মনে কথা বলে গেছি। মেপে মেপে অনুভূতি প্রকাশ করেছি। দমিয়ে রাখতে রাখতে বুঝেছি আমার কোন সংজ্ঞায়িত মন নেই। আমার কোন পরিচয় নেই। যা গ্রহণ করেছি তা তোমাদেরই সৌজন্যতাবোধের প্রকাশে। সেখানে আমার কোন অবদান ছিল না। দুঃখে কাতর কারো কাঁধে পরম নির্ভরতার হাত ছিল না। এসব কেউ মনে রাখেনি। আমার তাই কোন উপস্থিতি নেই। আমার জন্যে বরাদ্দ পৃথিবীর আলো, বাতাস, খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র আর কিছু কবিতার লাইন; আমি গ্রহণ করেছি অথবা করিনি। আমি ঋণী থেকেছি তাদের সহযোগিতার কাছে। আমার বেঁচে থাকার জন্য দু হাতে বিলিয়ে দেয়া ঐসব সম্পদ বুক ভরে গ্রহণ করেছি। বুকে ধারণ করেছি কৃতজ্ঞ চিত্তে। আমি জেনেছি এই কৃতজ্ঞতা আমার নিজস্বতা নয়। বই পুস্তকে পড়ার সৌভাগ্যের কারণে পরিচয় এই কৃতজ্ঞতা বোধের সাথে। বই পুস্তকের কথা ধ্রুব সত্য জেনে জীবন সাজানোর পর থেকেই বুঝেছি ধ্রুবকের মানের নিম্নমুখী থেকে ঊর্ধ্বগামী হবার ইতিহাস। তবুও রাগত স্বরে প্রতিবাদ করিনি। সয়ে গেছি, যতোটা সয়ে গেলে পচে যায় নিজস্বতা, ততোটা। চুপ থেকেছি, যতোটা চুপ থাকলে মানুষ ভুলে যায় আমার একটি নির্দিষ্ট নামের পরিচয়। একটি ব্যক্তিকে ভুলে যাওয়া এবং তার যাবতীয় স্পর্শ থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাবার ইতিহাস পড়েছি। আমি এখন বুঝেছি যা কিছু ঘটেছিল, যা কিছু ঘটছে এবং যা কিছু ঘটবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, সে সবের কোন আদিখ্যেতা নেই। সে সবের কোন মূল্য নেই। গ্রহণ করতে করতে আমি নুয়ে গেছি। ভারাক্রান্ত দেহে সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে জেনেছি, তোমরা নিজ কাঁধ ছাড়া অন্য কাঁধে ভালবাসার হাত রাখতে পছন্দ বোধ কর না। তবুও গোপন চোখে দেখেছি তোমরা হাত রাখ, নিজ কাঁধে আর নিজ ভাললাগার কাঁধে। কাঁধে হাত রাখো, চোখে চোখ রাখ আর ঠোঁটে স্পর্শ রাখ ঠোঁট দিয়ে অথবা আঙ্গুলের আলতো স্পর্শে। আমার কোন দৈব্য চোখ নেই যা দিয়ে তোমাদের গোপন অভিসার দেখে ফেলেছি। আমার দৈব্য কোন শক্তি নেই যা দিয়ে তোমাদের মনের কথা, সন্ধ্যার অন্ধকারে তোমাদের কৃত কর্মের গল্প জেনে ফেলেছি। তোমাদের প্রতি আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমি বলি, যে আমার চোখে চোখ রাখতে লজ্জিত বোধ করে, তার কাছে আমার কাঁধে হাত রাখার মতো এতো বড় অন্যায় আবদার করতে পারি না। তোমাদের কোন দোষ ত্রুটি নেই। এ আমার একান্ত অপরাধ, ভাল থাকতে চাওয়ার অপরাধ। পৃথিবীতে এমনও মানুষ থাকে যারা কখনো হাতের স্পর্শে পুলকিত হবার মতো সহজ এবং আনন্দময় অনুভূতি গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে না। আমি তাদেরই দলে। কেউ নাই বা থাকল আমার, নাই বা কেউ হল আমার। অবদমিত মানুষের আপনজন থাকে না। জেনে রেখো, তোমাদের এ উপেক্ষা গ্রহণ করেছি তোমাদের খুব বেশি ভালবাসি বলে। এ ভালবাসাও আমার নিজস্বতা নয়। পুস্তকে পড়া অমীয় বাণী থেকে জেনেছি, দ্বীন মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাও। আমি সম্পদশালী নই তবে পবিত্র এক স্পর্শ দিয়ে তোমাদের যাবতীয় শোক শুষে নিচ্ছি। তোমরা ভাল থেকো না, এ আমার নিজস্ব চাওয়া। নীল বিষে যার আহার হয়, তার আহারদাতা ভাল থাকলে যে আমার মরণ হয়। আর আমার মরণ হলে পৃথিবীর পরিহাস করার মানুষ অবশিষ্ট থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২০