কিয়ৎকাল পূর্বে ভারতীয় বাংলা একখানা নাটক দেখিয়াছিলাম। প্রারম্ভ দেখা হয়নাই, তবে কিছু সময় অতিবাহত হইবার পরে বুঝিলাম ইহা ঐতিহাসিক দেবদাস ও পার্বতীকে নিয়া।
নাটকে দেবদাস পটকা মার্কা চেহারার এক ছোকরা যে পার্বতীর প্রমে হাবুডুবু খাইতেছে। তারপরের ঘটনা আমরা সকলেই অবহিত। দেবদাস গৃহ ত্যাগ করে ও চুনীলাল আর চন্দ্রমুখীর সহিত সখ্য গড়িয়া ওঠে। লক্ষনীয় পার্থক্য এই যে এইখানে পার্বতী অদ্যাবধি অবিবাহিতা থাকে।
যাহা হউক, ঘটনাচক্র তাহার আদি রূপ পরিগ্রহ করিয়া শেষ হইবার উপক্রম হয়। ভাবি, এই বুঝি দেবু মরিয়া গেল। কিন্তু না, এইখানে শরৎ বাবুর মত অবিবেচকের ভুমিকায় অবতীর্ন হননাই পরিচালক। পাঠক ও দর্শকের দীর্ঘদিনের অনাকাঙ্খিত বাসনা তিনি পূরণ করেন; দেবদাস ও পার্বতীর মিলন হয়।
শরৎববু বিশ্বাস করিতেন; ব্যর্থ প্রেম মাত্রেই ইতিহাস রচনা করে। ঠিক যেমন রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ( লক্ষ্য করুন, প্রথমোক্ত ব্যতীত সর্বক্ষেত্রেই নারীর নাম আগেআসিয়াছে )। কিন্তু আমাদের এ পরিচালক দর্শককে অশ্রুজলে স্নান করাইতে রাজী নহেন।
যাহা বলিতেছিলাম, দেবদাস ও পার্বতীর মিলন হয়। তাহারা সুখের সাগরে অবগাহন করিতে থাকে। দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়.. অনেক বছর।
এরপরেই বুঝিতে পারি, উহা ছিল স্মৃতি রোমন্থন বা ফ্লাশব্যাক। পরের দৃশ্যে সেই পটকা দেবদসকে দেখা যায় খাটে চিৎ হ্ইয়া পড়িয়া থাকিয়া দেয়ালে টানানো পার্বতীর একখানা বিবাহের ফটোর পানে মুখ খানা বাংলার পাঁচের মত করিয়া চাহিয়া রহিয়াছে। পাশে কে যেন মেঝ গর্জনের মত করিয়া নাসিকা গর্জন করিয়া ঘুমাইতেছে।
দেবুর দক্ষিন হস্ত ও পায়ে ব্যান্ডেজ। দেখিলে অনুমান করিতে কষ্ট হয়না উভয়ই ভাঙ্গা। হঠাৎ দেবদাস 'আউ..' বলিয়া ককাইয়া উঠিল ও কহিল 'আস্তে'। সাথে সাথে কাহার যেন গুরুগম্ভীর আওয়াজ শোনা গেল "আ মরণ, ঢং দেখে আর বাঁচিনে। বলি ঘুমিয়েও কি শান্তি নেই?"
ক্যামেরায় এবার যাহাকে দেখা গেল তাহাকে হাতী বলিয়া ভ্রম হইতে পারে। বিশাল দশাসই এক রমনী। তিনি পাশ ফিরিতে গিয়া আচম্বিতে একখানা একমণী পা দেবুর গায়ে উঠাইয়া দিয়াছিল বলিয়াই দেবুর এহেন আকুতি।
দেবদাস এইবার দর্শকের সহিত ঘুমন্ত রমনীর পরিচয় করাইয়া দিল। ইহাই সেই পার্বতী যাহার জন্য শরৎবাবু এক ঐতিহাসিক কাহিনী রচনা করিয়াছিলেন নিজে ইতিহাস হইয়াছিলেন।
পার্বতী পুজোয় একজোড়া স্বর্ণের বালা চাহিলে দেবদাস তাহার অপারগতা প্রকাশ করে। তাহাতেই ক্রুদ্ধ হইয়া পার্বতী এক হাতের ঝটকা মারিলে দেবদাস পপাত ধরণী তল হয়। আর তাহাতেই অস্থিভঙ্গ।
দেবদাসের সেই করুন মুখ দেখিয়া আপসুস হয়।! বারংবার সে বলিতেছিল, শরৎবাবুই উচিৎ করিয়াছিলেন।
কাহিনী এইখানেই সমাপ্ত।....
পরিশেষে একখানা উক্তি যাহা আমার এক শিক্ষক মহাশয়ের, " সিনেমার যেখানেই শেষ, বাস্তবতার শুরু সেখানেই"।
সবই ভাল থাকিবেন। আর ভাবিবেন, " ব্যাটা দেবদাস (আসল টা) মরিয়া বাঁচিয়াছে"।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩০