রাজধানীর বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম শ্রেণীতে শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে যে অন্যায় প্রথা প্রচলিত রয়েছে বছরের পর বছর ধরে, সেটি অবসানের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথম শ্রেণীতে পরীক্ষার বদলে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবিদার। এর আগে এসওএস হারমান মেইনার, হলিক্রস ও ওয়াইডব্লিউসিএ বিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতি চালু করেছিল। বিদ্যালয়গুলোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি যে সমস্ত বিদ্যালয় এখনো প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে, তাদেরকেও অমানবিক এ পদ্ধতিটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানাই।
প্রথম শ্রেণীতে শিশুদের ভর্তি পরীক্ষা শুধু অমানবিক নয়, অন্যায়ও বটে। শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শেখানোর জন্য যেগুলোকে ভিত্তি করে সে পরবর্তী জীবনে সফলকাম হতে পারবে। কিন্তু যে শিশু সেই কর্মকাণ্ডের জগতে প্রবেশই করে নি, তার পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাইয়ের প্রচলিত পদ্ধতিটি যে পুরোপুরি অন্যায় কাজ, সেটা উপলব্ধি করতে আমরা অনেক সময় পার করে ফেলেছি। সন্দেহ নেই, আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি শিশুর ভর্তিচাহিদাই এই ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোও চেয়েছে তুলনামূলক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি করতে যাতে তারা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে। পদ্ধতিটি যে আদতে শিশুর জন্য ক্ষতিকর, তা হয়তো তখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয় নি। তাছাড়া এ পদ্ধতি শিশুদের জন্য অমানবিকও বটে। নিয়মানুযায়ী ছয় বছর বয়সে শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা। বয়স বিবেচনা করলে ভর্তির সময় শিশুকে কোনো ধরনের পরীক্ষায়ই অংশগ্রহণ করার কথা না; কারণ এটা কোনোভাবেই শিশুদের জন্য আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার বয়স হতে পারে না। তাছাড়া কোনো কিছু না শিখেই যার বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা, তাকে কেন কিছু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর ওপর পরীক্ষা দিতে হবে? যে সমস্ত বিষয়ের ওপর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু শিশুদের পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেগুলো তো তার বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই শেখার কথা! ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের ও তাদের অভিভাবকদের এক ধরনের চাপে ফেলা হয় যাতে তারা বিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই অনেক কিছু শিখে আসে। এতে বিদ্যালয়ের লাভ কিছুটা- তাদেরকে নতুন করে কিছু শুরু করতে হয় না বরং তারা বাড়তি কিছু পড়াতে পারে। এতে মূল ক্ষতি হয় শিশুদের। প্রতিটি শিশুরই বয়স অনুসারে ধারণক্ষমতা আছে এবং একটি শিশুকে যখন ধারণক্ষমতার বেশি শেখার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপ দেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মানসিক বিকাশ ব্যহত হয়। শিক্ষামনোবিজ্ঞানীরা শিশুদের এ শিক্ষাকে পরবর্তী জীবনের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন।
প্রথম শ্রেণীতে এই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও নানা কথাবার্তা হয়েছে; প্রতি বছরই অনেকে এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। পরীক্ষার হলে শিশুর ঢুকতে না চাওয়া ও তাকে জোর করে ঢুকানো; পরীক্ষার হলে কান্না বা পরীক্ষা শেষ হওয়ামাত্রই শিশুর মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার ছবি আমরা প্রতি বছরই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই। ভয়কাতুরে শিশুর মায়ের কোলে আসার এই ছবি খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়া পাখির ছটফটানির সমতূল্য। ভর্তি পরীক্ষা শিশুর মনে প্রথম দিনই পরাধীনতা ও খাঁচায় আবদ্ধতার যে অনুভূতি সৃষ্টি করে, তা সব শিশু কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা জানি না; কিন্তু এটি কোনো অর্থেই শিশুর মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
অবাক হলেও সত্য, এই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রচুর কোচিং সেন্টারও গড়ে উঠেছে এবং শিশুকে বছর ধরে সেখানে কিংবা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে প্রস্তুতি নিতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় যেসব ভয়াবহ প্রশ্ন আসে, সেগুলো না বুঝেই তাকে মুখস্ত করানো হয়। অভিভাবকদের টাকার হিসাব না হয় বাদই দিলাম। বিদ্যালয়ে নানা খেলাধুলা ও আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যার বর্ণপরিচয় ঘটার কথা, তাকে ভর্তি পরীক্ষায় লিখতে হয় কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর। যারা ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেন, তারা শিশুদের মনস্তত্ব যে একেবারেই বুঝেন না, তা ওই প্রশ্নপত্র দেখলেই টের পাওয়া যায়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশের আগেই এই পরীক্ষা শিশুকে বুঝিয়ে দেয় যে, সারাজীবন তাকে এরকম নিরানন্দ মুখস্তবিদ্যার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপই হবে তার পড়ালেখা জীবনের একমাত্র সঙ্গী। শিশুর মধ্যে এমন ভয়াবহ ধারণা প্রবেশ করিয়ে তার সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার অযৌক্তিক আকাঙ্ক্ষা অভিভাবকদের মধ্যে থাকলেও শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা এই পদ্ধতিটিকে কীভাবে প্রশ্রয় দিলেন, তা বোধগম্য নয়। তারপরও আমাদের শিশুরা জীবনযুদ্ধে সাফল্যলাভ করেছে বা করছে; কিন্তু ব্যতিক্রম ছাড়া সম্ভবত প্রতিটি মানুষকেই পড়ালেখার ভূত তাড়িয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন।
প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর ভর্তির বয়স যদিও ছয় কিন্তু পরীক্ষায় সম্ভবত এর চেয়েও অধিক বয়সের শিক্ষার্থীই অংশ নেয় বেশি। অনেক অভিভাবকই তার শিশুকে পছন্দনীয় নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য দু-তিন বছর লস দেন বা তাকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একাধিক বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করান। জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কিছু বিদ্যালয়ের সুনাম দেখে বা এসব বিদ্যালয়ের পড়ালেখা ভালো হয় মনে করে অভিভাবকরা এ কাজগুলো করেন। এতে দুধরনের ক্ষতি হয়। যেসব শিক্ষার্থী যথাযথ বয়সে ভর্তি হয়, তারা ‘সিনিয়র সহপাঠী’দের সাথে পড়ালেখা বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডে পেরে উঠে না যা তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্বের সৃষ্টি করে। অপরদিকে যারা বেশি বয়সে ভর্তি হয়, তাদের একাধিক শিক্ষাবছর নষ্ট হয়, যার প্রভাব পড়ে পরবর্তীতে- জীবনযুদ্ধে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার এ ভয়াবহ চিত্রগুলো প্রতিবছরই উঠে আসে নানা আলোচনা ও লেখায়। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো বিদ্যালয়ই বোধহয় এ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়।
প্রশ্ন হলো, এই লটারি পদ্ধতিই কি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির শেষ সমাধান? কিংবা আদৌ কি এটি সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? রাজধানীর বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে একে আপাতত সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে; কিন্তু কোনোমতেই এটিকে একমাত্র বা শেষ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। যেহেতু কিছু কিছু বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নিয়ে ভাবছে এবং এদের অনেকে এ পদ্ধতিকে আপাতসমাধান হিসেবে বিবেচনা করছে, এখন নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে এর একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। লটারি পদ্ধতি বিদ্যালয়ে ভর্তির কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ভিকারুননিসা ও অন্যান্য বিদ্যালয় লটারি পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যবস্থা চালু করলেও তাদেরকে বেশ কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমেই আসবে স্বচ্ছতার প্রশ্নটি। বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবছরই নানা দুর্নীতির কথা শোনা যায়। প্রভাবশালীদের সন্তানরা ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ভর্তি হয়ে যায়, কিংবা ভর্তি পরীক্ষার আড়ালে টাকাপয়সা নিয়ে ভর্তিবাণিজ্য চলে- এমন কথাও শোনা যায়। লটারি পদ্ধতি সঠিকভাবে মানা হলে হয়তো এ প্রশ্নগুলো উঠবে না; কিন্তু সেজন্য দরকার স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত লটারি। স্বচ্ছতা না থাকলে এই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। যেহেতু ভর্তির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে, তাই বিদ্যালয়গুলোর উচিত হবে লটারির পুরো কাজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করান। এতে পদ্ধতিটির উপর অভিভাবকদের আস্থা থাকবে এবং শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জড়িত বা পক্ষপাতিত্ব থাকার অভিযোগও দূর করা যাবে। এ সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগও এড়ানো যাবে। আর লটারির উপযুক্ত কারা হবে সে সম্পর্কিত কিছু সিদ্ধান্তও আগেই নিতে হবে। যেমন, নির্দিষ্ট বয়সের শিশু ছাড়া বেশি বা কম বয়সের শিশুর জন্য ভর্তি ফরম কেনা যাবে না। বয়স নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে বা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য উপায় মেনে এ কাজটি করতে হবে। ফরম কেনার সহজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে যুদ্ধ করে ফরম কিনতে না হয়। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে ফরম বিক্রির সুলভ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার খরচ না থাকায় শুধু লটারি সম্পর্কিত খরচ হিসেব করে ফরমের দাম ঠিক করা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগেই নিতে হবে যেন লটারির কাজটি সুচারূভাবে সম্পন্ন করা যায়। ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে লটারি প্রথায় অনেক বেশি অভিভাবক অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়। সুতরাং এটা যেন আবার বিদ্যালয়ের জন্য বাণিজ্যে পরিণত না হয়, সে দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে।
আগেই বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে লটারি কোনো স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত নয়। এটি কোনো সফিসটিকেটেড পদ্ধতি নয়; সুতরাং এর বিকল্পের কথা এখন থেকেই চিন্তা করা দরকার। এই চিন্তা করতে হবে নীতিনির্ধারকদের এবং তা সামগ্রিক চিন্তার অংশ হিসেবে। নীতিনির্ধারকদের প্রথম চিন্তাই হওয়া উচিত, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি কেন, কোনো ধরনের সিলেকশনই যাতে না হয় সে উপায় বের করা। শিক্ষা কর্তৃপক্ষ যদি এখন থেকেই কাজ শুরু করে তাহলে সেটা করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না। সরকার কিছুদিন আগে একটি শিশু জরিপ করেছে এবং কোন এলাকায় কতো শিশু আছে সে তালিকা রয়েছে রয়েছে সরকারের কাছে। তালিকা ধরে কোন এলাকায় কী পরিমাণ বিদ্যালয় দরকার তা সহজেই বের করা সম্ভব। যদি কোনো এলাকায় চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যালয় থাকে, তাহলে অবিলম্বে সেখানে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত কিংবা বর্তমান বিদ্যালয়সমূহ বর্ধিত করার সুযোগ থাকলে (শিফট বাড়ানোসহ) সেখানে অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় যে সমস্ত মানসম্মত (এখানে নামকরা পড়াই সঙ্গত) বিদ্যালয় রয়েছে, অন্য বিদ্যালয়গুলো যেন সেগুলোর কাছাকাছি অবস্থানে যেতে পারে, সেরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। থাইল্যান্ডে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বিদ্যালয় চিহ্নিত করে সেগুলোকে ‘আইসিইউ’ ক্যাটাগরিতে ফেলে বিদ্যালয়গুলোর দ্রুত উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সরকার চাইলে এ ধরনের কিছু কাজও করতে পারে। নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের কাজটিও আগামী এক বছরের মধ্যেই করা সম্ভব। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যালয় ও আসন সংখ্যা দ্রুত নিশ্চিত করার পর যিনি যে এলাকায় বাস করেন, তার সন্তানকে সেই এলাকায় ভর্তি করাতে হবে এরকম বিধান করতে হবে। তখন যেহেতু প্রতিটি এলাকাতেই পর্যাপ্ত বিদ্যালয় থাকবে, সেহেতু কোনো অজুহাতেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিজ এলাকার বাইরে ভর্তি না করাতে পারে, সে ব্যবস্থা জোরালোভাবেই গ্রহণ করা উচিত। এতে সন্তান ও অভিভাবকদের যাতায়াতে যেমন সময় কম লাগবে, তেমনি এ ব্যবস্থা যানজট সমস্যা কিছুটা হলেও কমাতে পারবে। তারপরও যদি কোনো এলাকায় সব বিদ্যালয়ের আসন পূরণ হয়ে যায় একমাত্র তখনই অভিভাবক পাশের এলাকার বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারবে। পুরো কাজটি কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করবে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর।
মনে রাখা দরকার, কোনো বিদ্যালয় রাতারাতি ভালো হয়ে যায় না। রাজধানী ঢাকার যে বিদ্যালয়গুলো ভালো বলে খ্যাত, খোঁজ নিলে দেখা যাবে সে সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বাইরে প্রাইভেট শিক্ষক ও কোচিঙে সময় ব্যয় করে বেশি। বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের অবদান বেশি নাকি এসব বাইরের পড়ালেখার অবদান বেশি, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। এ নিয়ে গবেষণাও হতে পারে। সুতরাং ভালো ফলাফলের জন্য বিদ্যালয়ই একমাত্র ফ্যাক্টর নয়। এই শিক্ষার্থীরা যখন নানা ধরনের বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়বে, তখন সব বিদ্যালয়ই নিজেদের মধ্যে ভালো ফলাফলের প্রতিযোগিতা করতে পারবে। নামী আর অনামী বিদ্যালয়ের প্রচলিত দেয়াল ভেঙে ফেলা দরকার। সব বিদ্যালয়ই যেন একটি নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত মান অর্জন করতে পারে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে সচেতন হতে হবে। যদি কোনো নির্দিষ্ট বিদ্যালয় ও তাদের শিক্ষকবৃন্দ সত্যিকার অর্থেই মানসম্মত হন, তাহলে প্রয়োজনে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘লিয়েনে’ অন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন তুলনামূলকভাবে ভালো শিক্ষকের সংস্পর্শে আসবে, তেমনি অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কীভাবে ভালোভাবে পড়াতে হয়, সেটি বুঝতে পারবেন। ভালোকে এক জায়গায় আবদ্ধ রাখলেই চলবে না, তা ছড়িয়ে দিতে হবে সব জায়গাতেই।
এ আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা মূলত রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে, কারণ ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা এ দুটো শহরেই বেশি দেখা যায়। অন্যান্য শহরেও আস্তে আস্তে এটি সমস্যা হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ঢাকা বা চট্টগ্রামের সমস্যাটি প্রকট বলে তার সমাধান এখনই করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য শহর বা গ্রামে এটি যেন সমস্যা হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সারাদেশ যেন কেন্দ্রের মতো একই আলোতে এবং একই মাত্রায় আলোকিত হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শিক্ষা কখনোই উন্নয়নের হাতিয়ার হবে না।