somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বান্দরবেলা............৫

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুডুবেলায় দেখতাম মা খালারা কোথাও বেড়াইতে যাওয়ার আগে মেকআপ করতো,এইটা দেইখা আমারও শখ হইল মেকআপ করবো।মা মেকআপ বক্স আলমারীতে তালা মাইরা রাইখা দিতো বইলা শখ পূরন করতে পারতাম না।একবার বাসায় রং লাগানের কাজ চলতেছে।সন্ধ্যায় কাজ শেষে লেবাররা রং এর ব্রাশ,ডিব্বা স্টোর রুমে গুছায়গাছায় রাইখা চইলা গেছে, আমি স্টোররুমে ঢুইকা পা থেইকা মাথা পর্যন্ত ব্রাশ দিয়া নিজেরে সাদা রং করলাম।মা মেকআপের সময় গাল লাল দেখানের জন্য কি যেন দিতো।আমিও গালের মধ্যে লাল রং দিয়া গাল লাল কইরা ফেল্লাম।মেকাপ কইরা স্টোর রুমে রাখা আয়নায় নিজেরে দেইখা পুরা মুগ্ধ হয়া গেছিলাম,নিজেরে নবাব সিরাজউদৌলা সিনেমার ফিরিঙ্গির মতো লাগতেছিলো।মেকআপ শেষে স্টোর রুম থেইকা বের হইছি এমন সময় ছোট মামা মাত্র গেট দিয়ে বাসায় ঢুকতেছে,আমার নতুন রুপ দেইখা মুগ্ধ হয়া মামা মুখ দিয়া গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে করতে ভিড়মী খায়া মাটিতে পড়ে গেছে।মামার গোঁ গোঁ আওয়াজ শুইনা আমি ভাবলাম সন্ধ্যা হইছে তাই মনে হয় আমারে বাসার ভিতরে যাইতে বলতেছে (ছোট মামার ইংরেজী বলার শখ ছিলো।কথায় কথায় ইংরেজী বলতো।তাই মামা গোঁ গোঁ শব্দ শুইনা ভাবছিলাম ইংরেজীতে মামা আমারে কোথাও যাওয়ার কথা বলতেছে) ঘরে ঢুইকা নানীর ঘরে উকিঁ দিলাম দেখি নানী নামাজে দাড়াইছে,ঐ অবস্থ্যায় আমারে দেইখা নানীও স্লো মোশনে জায়নামাজের উপর ঢইলা পইড়া গেলো।অবস্থা বেগতিক দেইখা আমি রান্নাঘরে চাল রাখার একটা ড্রামের ভিতর ঢুইকা গা ঢাকা দিলাম।ড্রামের ভিতর বইসা চাল খাইতে খাইতে বাইরের শোরগোল শুইনা বুঝলাম ব্যাপক একটা কিছু ঘটায় ফেলছি।একদিকে সবাই ছোট মামা আর নানীরে নিয়া টানাটানি শুরু করছে অন্যদিকে মা আর মেঝো খালা আমারে খুঁজতেছে।একটু পর বাসার কাজের বুয়া আমারে খুজতে খুজতে রান্নাঘরে আইসা ড্রামের ভিতর উকি দিয়ে দেখে সাদা রঙের একটা বস্তু বইসা বইসা চাল খাইতেছে।বুয়া আল্লাহরে বইলা চিৎকার দিয়ে একলাফে রান্নাঘর থেইকা বাইর হইতে গিয়ে পিছলায়া পইড়ে মাথা ফাটায় রক্তারক্তি কান্ড।এরপর মা আইসা কান ধইরা আমারে বাইর করছিলো।ঐ ঘটনার জন্য মা ২টা কাঠের স্কেল ভাঙ্গছিলো আমার পিঠে।

প্লে গ্রুপে থাকতে বার্ষিক অনুষ্ঠানে একবার রাজপুত্রের অভিনয় করছিলাম।নাটকের শেষ সিনে রাজপুত্র ডাইনিবুড়ী কে মেরে রাজকন্যারে নিয়া রাজ্যে ফিরা যায়।তো শেষ সীনের আগে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমে গেছিলাম।বাথরুম থেইকা বাইর হইতে না হইতে শুনি শেষ দৃশ্যের ঘোষনা হয়া গেছে।আমি প্যান্ট না পইড়াই রাজকন্যারে বাচাঁইতে আমার কাঠের তালোয়ার নিয়া স্টেজে দৌড় মারলাম।অবস্থা বেগতিক দেইখা ডাইনীবুড়ীর পোষা বাঘ আমারে পাঁজাকোলা কইরা স্টেজের বাইরে নিয়া যাইতে চাইলো( বাঘ সাজছিলো স্কুলের এক স্যার)।কিন্তু তখন আমি রাজকন্যারে পাষাণ ডাইনীবুড়ীর হাত থেইকা উদ্ধার করার জন্য মরিয়া।বাঘের চোখে কাঠের তালোয়ার দিয়া দিলাম এক রামগুতা,গুতা খায়া বাঘ 'বাপরে' বইলা মাটিতে গড়াগড়ি খাইতে লাগলো এদিকে আমি ডাইনীর সামনে গিয়া তালোয়ার দিয়া মাথায় এক চাটি মাইরা বললাম "এবার তোর শয়তানী শেষ রাক্ষসী"।ডাইনী নেংটা রাজপু্ত্ররে দেইখা ডায়লগ ভুইলা হা কইরা আমার দিকে তাকায় রইলো।আমি ভাবলাম এখন যদি ডাইনী ডায়লগ না দিতে পারে তাহলে তো নাটক ভন্ডুল হয়া যাবে।তাই আমিই বানায় বানায় কয়েকটা ডায়লগ মাইরা লাথিগুতা দিয়া ডাইনিরে মাটিতে শুয়াইয়া রাজকন্যার দিকে বললাম 'চলো এবার রাজ্যে ফিরে যাই"।বইলাই একখানা নুরানী হাসি উপহার দিলাম। রাজকন্যা আমার দিকে এতোক্ষন হা করে তাকায় ছিলো।আমি রাজ্যে ফিরা যাবার কথা বলতে ফিক কইরা হাইসা দিয়া বলে "ছিহ! তুমি তো নেংটু।তোমার সাথে যাব না" বইলা মুখ ঢাইকা উল্টা দিকে দৌড় দিছে।এদিকে রাজকন্যারে ছাড়া ফিরা গেলে রাজ্যে আমার মান-সুলেমান কিছুই থাকবে না তাই রাজকন্যারে ধরার জন্য আমিও পিছে পিছে তালোয়ার উঁচায়া দৌড়াইতে লাগলাম।এদিকে দর্শকরা আমার কান্ড দেইখা হাসাহাসি শুরু কইরা দিছে।আমি ভাবলাম রাজকন্যারে ধরতে পারতেছি না দেইখা সবাই হাসতেছে।অপমান থেইকা বাঁচার জন্য আরও জোরে রাজকন্যার পিছনে দৌড়াইতে লাগলাম।বহুৎ দৌড়ানির পর রাজকন্যার চুলের নাগাল পাইলাম।চুল ধইরা হিড়হিড় কইরা টানতে টানতে আমার রাজকন্যারে স্টেজের ভিতর নিয়া গেলাম।নাটক শেষে অনেক হাততালি পাইছিলাম।ফার্স্ট প্রাইজও পাইছিলাম।তবে রাজকন্যারে বাঁচানের জন্য নাকি প্যান্ট না পইড়া স্টেজে ঢুকার সাহস দেখানের জন্য পুরস্কারটা পাইছিলাম সেটা আজও বুঝি নাই।নাটক শেষে সবাই বাসায় চইলা যাবে এমন সময় আমি শুরু করলাম কান্নাকাটি।রাজকন্যারে ছাড়া বাসায় কিছুতেই ফিরবো না।হাউমাউ কইরা কানতে শুরু করলাম।আমার কান্দা দেইখা রাজকন্যাও কাঁনতে শুরু কইরা দিলো।সে ও আমার সাথে আমার বাসায় যাবে।আমাদের সম্মেলিত আহাজারিতে আমাদের বাপ মার মন গললো।শেষ পর্যন্ত রাজকন্যারে বগলদাবা কইরা আমার রাজ্যে মানে বাসায় নিয়া আসছিলাম।সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলাধুলা কইরা,পরে আবার আসবার কথা দিয়া রাজকন্যা তার রাজ্যে ফিরা গেছিলো।বাসায় যাওয়ার আগে আমার একটা হাতি নিয়া গেছিলো আর ফেরত দেয় নাই।

ছুডুবেলায় হাগু করাটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের কাজ আছিলো।সবসময় ভাবতাম হাগু করার ব্যাপারটা না থাকলে মানুষের কত সময় বাঁচতো।আমার এমন দার্শনিক চিন্তাভাবনা থেইকা বাইর করলাম যে বাথরুম করার রাস্তা বন্ধ কইরা দিলে আর কোন চিন্তা থাকবে না।যতই খাও হাগু বের হবে না।বাসায় ফেভিকল জাতীয় একধরনের আঠা ছিলো।ঐটা হাগু করার রাস্তায় পুরাটা ঢাইলা দিয়া চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকলাম।ঘন্টাখানেক পর দেখি আঠা শুখায় গেছে।কিন্তু সমস্যা হইলো হাটার সময় পাছা উঁচায়া হাটতে হয়।যাই হোক ঐ ভাবেই হাটাহাটি করতে লাগলাম।সারাদিন ভালোই কাটছিলো।কিন্তু বিকালের দিকে অবস্থা খারাপ হইতে লাগলো।কড়া হাগু চাপছিলো আবার হাবিজাবি খাওয়ার ফল হিসেবে বিষাক্ত বায়ু বাইর হবার জন্য আকুলিবিকুলি করতেছিলো।সন্ধ্যার দিকে অবস্থা আরও খারাপ হইলো।ব্যাথার চোটে আমি বিছানায় শুইয়া গড়াগড়ি করতে লাগলাম।মা জিজ্ঞেস করে,' কি হইছে?' আমি বললাম,হাগু চাপছে কিন্তু করতে পারতেছি না।আঠা দিয়া হাগুর রাস্তা বন্ধ করে দিছি।মা শুইনা প্রায় ভীড়মি খায়া পড়ে।বাবা তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়া গেলো।ডাক্তার অনেক কিছু করার পর রাস্তা পরিস্কার হইলো আর আমি হাগু করতে পারলাম।এই ঘটনার পর একটা চরম সত্য ছুডুবেলাতেই বুইঝা গেছিলাম তা হইলো, "ভোগে নয়,ত্যাগেই শান্তি"

নানার ২ টা ছাগলই আমারে অনেক যন্ত্রনা করছে,তবে চার বার ডলা খাওয়ার পর আমারে দেখলেই উল্টাদিকে দৌড় দিতো।ফলে আমিও কিছু করার সুযোগ পাইতাম না।এসব কারনে মনটা প্রায়ই উদাস থাকতো।অবশেষে একদিন সুযোগ আসলো।দুপুরবেলায় দেখি ছগল দুইটা রোদে বইসা ঝিমাইতেছে।আমি রান্নাঘর থেইকা মরিচের গুড়া আইনা ছাগল দুইটার পশ্চাৎদেশে পুরা বয়াম ঢাইলা দিলাম।একটু পর পাছা জ্বলা শুরু করলে ছাগল দুইটাই কিয়ামত আইসা গেছে এমন ভাব কইরা চিৎকার শুরু করলো সেইসাথে একেকটা লাফে দশ হাত উপরে উইঠা যাইতে লাগলো।মা ছাগলের চিৎকার শুইনা লাঠি হাতে বাইর হইলো আমারে মারার জন্য,ততোক্ষনে আমি এক লাফে বাসার বাইরে।পরে বাসায় আইসা শুনি কালো ছাগল টা নাকি লাফালাফি করতে করতে বাসার দেয়ালে উইঠা গেছিলো।এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন ছাগল দুইটা পাছা চিপায় চিপায় হাটতো আর করুন সুরে ম্যাৎকার করতো।


চলবে.............
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:০৫
১৩১টি মন্তব্য ১২২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×