একবার বাবা বিদেশ থেইকা আসার সময় আমার জন্য একটা ঘড়ি আনছিলো।প্রতিদিন শার্ট,হাফপ্যান্ট আর টাই আর ঐ ঘড়ি
পইরা ছোট মামার সাথে সান্ধ্যভ্রমনে বাইর হইতাম।ঘুরাঘুরির সময় একটু পরপর ঘড়িতে সময় দেখতাম আর নিজের মনেই জোরে জোরে কয়টা বাজছে বলতাম, বলার পর চারপাশে এমনভাবে তাকাইতাম যেন সময় জানাইয়া এতো বড় ঢাকা শহরের অবার্চীন মুর্খ মানুষগুলিরে দয়া করতেছি।একদিন ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে রাস্তা দিয়া হাটার সময় ধপাস করে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে গেছিলাম,ছোটমামার চিল্লাচিল্লিতে আশেপাশে লোকজন জড়ো হইয়া আহা উহু শুরু কইরা দিলো,কিন্তু কেউ আমারে উঠাইবার নাম নেয় না,এদিকে আমার, ম্যানহোলের ভিতর দিয়া ভাসতে ভাসতে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে রুট চেন্জ কইরা চীনে যাবার ব্যবস্থ্যা প্রায় হয় হয়। শেষ পর্যন্ত এক লোক মামার কাছ থেইকা টাকা নিয়া আমারে উঠাইছিলো।আমার উঠানোর সাথে সাথে গন্ধের চোটে লোকজনের ভীড় চোখের পলকে ফঁকাফঁকা।এদিকে মামা আমারে ধরতেও পারেনা আবার ছাড়তেও পাড়েনা শেষে দোকান থেইকা প্লাষ্টিকের ব্যাগ কিইনা ঐটা হাতে প্যাচায়া আমারে ধইরা বাসায় আনছিলো।বাসায় আসার পর দেখি পাশের বাসার ফিচঁকা টাইপের একমেয়ে আর ওর মা উঠানে দাড়ায় আমার মার সাথে গল্প করতেছে।আমারে দেখা মাত্র ঐ মেয়ে ওর মারে খুঁচা মাইরা কয় "আম্মু দেখ দেখ ঐখানে একটা গন্ধওয়ালা মামদো ভূত দাড়ায় আছে"।এদিকে আমার শরীরের ফরাসী সৌরভের সুগন্ধে বাসার চারদিক মৌঁ মৌঁ করতেছিলো,মামা খালা,নানা,নানী সবাই ছুইটা আসলো এমন পাগল করা সুগন্ধের উৎস খুজতে।অনেক কান্ডকারখানার পরে সবাই মিইলা মীটিং এ বসলো যে কে আমার এহেন সুগন্ধ সহ্য কইরা গোছল দেওয়াবে.....অনেক কাহিনীর পর ঠিক হইলো মা আর ছোট খালা মিলে জয়েন্ট ভেন্চারে আমারে পাকপবিত্র করবে। গোছল করানের সময় গন্ধের চোটে মা আর খালা দুইজনেই কাছে ঘেষতে পারেনা।শেষ পর্যন্ত ছোট খালা কোথ্থেইকা যেন একটা দশ হাত লম্বা ব্রাশ নিয়া আইসা ঐটা দিয়া ঘইষা ঘইষা ময়লা দুর করছে।কিন্তু ময়লা পরিস্কার হইলেও শরীরের গন্ধ দূর হয় না,২টা কসকো সাবান পুরাটা ঘষার পরেও শরীর থেইকা ভূরভূর কইরা ময়লার গন্ধ বাইর হইতেছে।ঐ সময় আমি বাবা,মার সাথে এক বিছানায় ঘুমাইতাম,ঐ ঘটনার রাতে দুইজনেই নাকে মুখে মুখে কাপড়া বাইন্ধা ঘুমাইছিলো।তবে ঐ ঘটনার পর ছোটমামার উপর অনেক রাগ করছিলাম কারন ছোট মামার বোকামীর জন্যই আমার চীন দেশ দেখা হইলো না অথচ আর কিছুক্ষন ম্যানহোলে থাকতে পারলেই ভাসতে ভাসতে সোজা চীনে পৌছায় যাইতাম।
একবার নানা ঠিক করলো বড় মামারে বিয়া দিতে হবে।সবাই মিলে পাত্রী খোজা শুরু কইরা দিলো।এক ঘটক নানারে বললো আমার কাছে একটা মেয়ে আছে দেখতে পুরা নাগিন সিনেমার শ্রিদেবীর মতো।বড় মামা মেয়ের বর্ণনা শুইনা বললো এত টাকাপয়সা খরচ কইরা সাপ বিয়া করমু নাকি?,বাসর রাতে একবার একটা ঠোকর দিয়া বসলে আমার স্বর্গবাস ঠেকায় কে?।আবার সাপ নাকি পুর্নিমার রাতে নাচানাচিও করে,বিয়ার পর মেয়ে কোন না কোন খালবিলে গিয়ে সঙ্গীসাথী নিয়া নাচানাচি করবো রাইত বিরাইতে তারে খুজতে আবার কে যাবে।বহুৎ কিচ্ছাকাহিনীর পর একজন মেয়ে ঠিক হইলো।সবাই মিইলা পাত্রীর বাসায় গেলাম তারে দেখতে।পাত্রী সবার জন্য চা নাস্তা নিয়া আইসা লাজুক লাজুক মুখে চুপ কইরা বইসা রইলো। কথাবার্তা চলতেছে এমন সময় দেখি সবাই নাঁক কুচকানো শুরু করছে,একটু পর টের পাইলাম কে যেন বিষাক্ত বায়ু নির্গমন করছে।মা আমার দিকে এমন ভাবে তাকায়লো যেন আমিই ঐটার জন্য দায়ী,অবশ্য কারনও ছিলো,ছুডুবেলায় হাবিজাবি খাওয়ার ফলে প্রায়ই আমি পিছনদিক দিয়া ফরাসী সৌরভ ছাড়তাম।আমার একেকটা বায়ু একেকটা পরমাণু বোমের ন্যায় শক্তশালী আছিলো।বায়ু থেইকা পরমানু বোম বানানের কোন উপায় থাকলে এতো দিনে বড়লোক হইয়া যাইতাম।আম্রিকা,রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা আমারে মাথায় যে তুলতো আর নীচে নামাইতো না। অবশ্য মাথার উপরে তোলা অবস্থায় বায়ু ছাড়লে তাদের মারা যাবার আশঙ্কাও উড়ায় দেওয়া যাইতো না।
যাই হোক, বায়ু ছাড়ার মিথ্যা অপবাদ থেইকা বাচাঁর আশায় চরিদিকে অনুসন্ধান চালাইতে লাগলাম।সবার পিছনদিকে ঘুইরা ঘুইরা শুঁকতে লাগলাম কে সেই কালপ্রিট।অবশেষে আবিস্কার করলাম বায়ু ছাড়ার জন্য আর কেউ না, স্বয়ং লাজুক মুখের পাত্রীই দায়ী।আবিস্কারের অতিশায্যে চিৎকার কইরা সবাইরে জানায় দিলাম,"মামার জন্য যে মেয়ে তোমরা ঠিক করছো সেই বায়ু ছাড়ছে"।এ কথা শুইনা পাত্রী পারলে কাইন্দা দেয় ।আরও ছুডুবেলায় শুনছিলাম,"অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়' আমার কথা শুইনা পাত্রীর বাবা অধিক শোকে গ্রানাইট হয়া গেলো।বাসায় আসার পর মামা বললো, "আমি এই মেয়েরে বিয়া করুম না।এই মেয়ে যদি বাসর রাতে এমন ভাবে ঠাশ ঠাশ কইরা পাঁদ মারতে থাকে,তাইলে পরেরদিন পুলিশ আইসা ঘরের মধ্যে বোমা ফাটাইয়া সন্ত্রাসী কার্যকালাপের জন্য আমারে থানায় নিয়া যাবে। তাছাড়া মেয়ে যদি সারারাত এমনে পাদ মারতে থাকে তাহলে সকালে উইঠা তোমরা, আমার, গন্ধের চোটে মমি হয়ে যাওয়া লাশ পাইবা,পত্রিকায় খবর আসবে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে বাসর রাতে মেধাবী স্বামীর মৃত্যু, নববধূ গ্রেপ্তার"......
চলবে..............
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৫:২৫