মুখে অদৃশ্য মেকাপ করে,
মাঝে মাঝে রংবেরঙের মুখোশ পরে,
নিজের জীবনের কাছ থেকে পলাতক আমি অনেকদিন ধরে
-এই ঢাকা শহরে।
ফেরারী জীবনে লুকিয়ে থাকি
নিজের মানিব্যাগে,
আলমারিতে ন্যাপথালিনের গন্ধে মিশে থাকি।
আবার তেলাপোকা হয়ে নিজের পুরোনো কাপড়েই লুকাই।
লুকিয়ে থাকি
- হঠাৎ মন খারাপ হওয়া চোখের জলে।
- রাতের দুঃস্বপ্নের লাশকাটা ঘরে বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে।
- হাসিখুশি মনে বাবার কবরে।
-ঈশ্বরের পবিত্রগ্রন্থে ঘুনপোকা হয়ে
-একটি জোনাকির ঝরে যাওয়া ডানার বিশুদ্ধ কষ্টে।
- প্রথম প্রেমের চিঠির ভুল বানানে।
আত্মগোপন করে দেখেছি
-ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থনালয়ে।
- সব ধর্মের মানুষের একটি বেশ্যালয়ে।
- একটি বাতাবী লেবুর পাতার গন্ধে।
- কাঁটাবনে খাঁচায় আটকানো একটি ঘুঘুর ঠোঁটে ।
- সংগম শেষে একটি পবিত্র সিগারেটের ধোঁয়ায়।
- ল্যাম্পপোস্টের নিচে পরিত্যক্ত একটি ছায়ায়।
- ফার্মগেটের ওভারব্রীজে ভিক্ষুকের থালায়।
- সংবিধানের প্রথম অক্ষরে।
- জাতীয় পতাকার লাল রংয়ে।
তবুও মাঝে মাঝে ধরা পড়ে যাই
রাস্তায় পুলিশের চেকপোস্টে,
—‘বেঁচে থাকার লাইসেন্স’ দেখতে চায় তারা।
বোকা পুলিশ হলে ধরতে পারেনা নকল লাইসেন্স,
যদি ধরে ফেলে- পকেটে যা থাকে দিয়ে কোনো মতে পালাই।
মাঝে মাঝে হাজতেও পুরে দেয়।
‘বেঁচে থাকার লাইসেন্স’ নিয়ে রাস্তায় বের হবো,
-এই হলফনামা দিয়ে আবার ফেরারি হই।
এই শহরের মতলব বুঝিনা আমি,
‘বেঁচে থাকার লাইসেন্স’ শুধু দেয় নিজের জীবন।
আমি প্রতিবারই লাইসেন্সের পরীক্ষায় ফেল করি নিজেরই জীবনের কাছে।
সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি,
শুধু ফেল করে ফেলি যখন
সামনে আয়না দিয়ে প্রশ্ন করে
-“ আয়নাতে কাকে দেখা যায়?”
একবারও সঠিক উত্তর দিতে পারিনা,
সাহস করে তাকাতেই পারিনা আয়নায়।
যা মনে হয় বলে ফেলি তখন-
কুকুর, ঘুঘু পাখি, তেলাপোকা, ছেড়া ঘুড়ি, বিধবা চাঁদ,
নদীর মরা ঢেউ, একটি আধা পোড়া সিগারেট।
শুধু একবারও বলতে পারিনা একটা ‘মানুষ’ দেখা যায়।
তবুও ‘বেঁচে থাকার নকল লাইসেন্স’ নিয়েই,
এই ঢাকা শহরে ফেরারি আমি অনেকদিন ধরে-
আমার নিজেরই জীবনেরই কাছ থেকে।
——————-
রশিদ হারুন
২৩/০৪/২০২০
কাব্যগ্রন্থ- তুমি ছাড়া আমি এক বিষণ্ন চড়ুই
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ২:৩৬