মধ্যদুপুরে প্রেসক্লাবের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
চলন্ত রিকশার দিকে চোখ ফেলে রেখেছি অনবরত।
ডান হাতে একটার পর একটা বিভ্রান্ত সিগারেট পুড়ছে বিরামহীন।
হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের একটা ছোট্ট মিছিল চলে যাচ্ছে
রাস্তায় ফেলে রাখা আমার চোখের সামনে দিয়ে।
শধু একটি শব্দই ভেসে আসছে মিছিল থেকে
“ মানতে হবে, মানতে হবে।"
আমিও হাঁটতে লাগলাম মিছিলের সাথে।
দাবি-দাওয়া না জেনেও
চিৎকার করে বলতে লাগলাম
“মানতে হবে, মানতে হবে।"
মিছিলের পাশ দিয়ে ধীরগতিতে চলে যাওয়া লাল রঙের এক দোতলা বাসের দোতালার দিকে নজর পড়তেই দেখলাম,
এক জোড়া অবাক চোখ আকাশের নীল মেঘ দেখছে।
আমিও নীল মেঘের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলাম মিছিলের পেছন পেছন।
রমনার পাশ দিয়ে মিছিলটি যাবার সময় এক বিরহী কোকিলের চিৎকারে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।
মিছিলটি চলে গেলো আমাকে রেখেই।
কোকিলটিকে খুঁজতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছড়ে পড়লাম এক অন্ধ ভিখারির ভিক্ষার থালায়।
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া খুচরো টাকা পয়সা কুঁড়াতে কুঁড়াতে
সেই অন্ধ ভিখারির অভিশাপের গুলিতে আহত হলাম বুকের ভিতরে বাহিরে।
আহত বুক নিয়ে আরেকটি সিগারেটে আগুন ধরালাম,
তারপর ফিরতি পথ ধরে প্রেসক্লাবের রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম ঠিক আগের মতোই।
প্রতিবার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার ভিতরে এক অসুখ শুরু হয়।
সেই অসুখে একটি মিছিল চলে আসে,
লাল একটা দোতলা বাস,
এক জোড়া অবাক চোখে আকাশে তাকিয়ে থাকা এক বালক,
কষ্টে পোড়া কিছু নীল মেঘ,
একটি অভিমানী কোকিল,
ক্রমাগত অভিশাপ দিতে থাকা এক অন্ধ ভিখারি।
এই বিচিত্র অসুখ নিয়ে তবুও আমি ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে
অপেক্ষায় থাকি সেই রিকশাটির জন্য।
শুধু একদিন দেখবো বলে
‘মনোলীনা’ রিকশা থামিয়ে বলবে,
-“আপনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন?”
————————
র শি দ হা রু ন
কাব্যগ্রন্থ- আমি একদিন সমুদ্রের জল হয়ে যাবো
২৫/১২/২০২১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৭