আমার নিজস্ব কোনো প্রেম না থাকা স্বত্তেও
আমি একজন প্রেমিকার জন্য চিঠি লিখি।
প্রতিরাতেই লিখি,
সংখ্যায় দশ বারোটা বা তারচেয়ে বেশি হবে।
মধ্যরাতে লিখতে বসলেই ঘরের পোষা টিকটিকিটি বিলাপ শুরু করে,
তখনই টের পাই হাতের মুঠোয় ভরা এক অসমাপ্ত জীবনের ছটফটানি।
প্রতি চিঠিতেই প্রায় একই রকম গল্প থাকে।
শুরু করি ‘প্রিয়তমা’ সম্বোধনে।
মাঝে মাঝে কল্পিত নতুন কিছু গল্পের ফাঁদ পাতি নিজেরই জন্য।
সেই সব গল্প এক অচেনা কষ্টের,
ধুলো জমা যৌবনের,
জীবনের না দেখা মিথ্যে অপ্রাপ্তির কথা,
রাতের সবচেয়ে সুন্দর জোনাকিটির কথা,
কল্পিত প্রেমিকার দোতালা বাড়িটির বারান্দাকে কত ভালবাসতাম সেই মিথ্যে গল্প।
হয়তো কেনো এক বন্ধুর
প্রেমের আবোল তাবোল হাহাকারের গল্প নিজের বলে চালিয়ে দেই কোনো চিঠিতে।
আবার রিকশা ভাড়া আর কাগজের দাম বেড়ে যাচ্ছে হুহু করে
-সেই অদরকারী গল্প।
অথবা রাস্তার কোনো বেওয়ারিশ কুকুর অথবা একজন ভিখারীর সুখের গল্প।
মাঝে মাঝে এক ‘অ-ঘুম’ এর আর এক ‘অ-প্রেম’ এর মিলেমিশে থাকার গল্পও থাকে চিঠিতে।
চিঠির শেষে সব সময়ই লিখি
‘তোমার প্রিয় মানুষ’।
প্রতিটি খামে প্রাপকের নাম একই থাকে-
শুধু ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা দেই প্রতিটিতে,
শুধু থাকেনা প্রেরকের ঠিকানা কোন চিঠিতেই।
অন্ধকার রাত থাকতে থাকতেই পরিচিত ডাকবাক্সে রেখে আসি সব চিঠি।
তারপর দোতালা বাড়ির নতুন কিছু ঠিকানার জন্য
সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে হেঁটে বেড়াই শহরময়।
আমার নিজস্ব কোন প্রেম না থাকলেও
শহরের সমস্ত দোতালা বাড়ির বাসিন্দারা এক সময় আমার চিঠিগুলোকে
একজন ‘ভুল প্রেমিক’ এর ‘ভুল চিঠি’ হিসাবে জানবে।
ভুল হোক-
তবুও প্রেম।
তবুওতো প্রেমিক।
———————
কাব্যগ্রন্থ- একটি আউলা -ঝাউলা জীবনের প্রার্থনা
রশিদ হারুন
১৩/১২/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:১৩