'ভেবে দেখা দরকার ! কী নির্মম সত্য! গভীরে কী থাকে লুকানো! বিবেচনাবোধ হোক জাগ্রত ।'
দুষ্কৃতকারীরা আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াতের
বাংলানিউজ
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দির, বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের লোকজনের বসতবাড়িতে তা-ব চালানোর ঘটনায় জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এসব চিহ্নিত লোকজন নানাভাবে এখনো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে, ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও চরম নিরাপত্তাহীন এ
বং আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন রামু উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এদিকে রামুর আক্রান্ত এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে প্রথম মিছিলটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন নুরুল ইসলাম সেলিম ও আনসারুল হক ভুট্টো নামের দুই ব্যক্তি। এরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগের রামু শাখা কমিটির দায়িত্বশীল নেতা। ওখানে পথসভা পরিচালনা করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন। একই সময় মিছিলটিতে সস্নোগান দিয়েছেন হাফেজ আহমদ নামে এক ব্যক্তি। এরপর মেরংলোয়া গ্রাম থেকে যে মিছিলটি বের করা হয়, ওই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন, বিএনপিকর্মী দিদারসহ কয়েকজন। একইভাবে অপর একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন ফতেখাঁরকুল ইউপি মেম্বার ও বিএনপি নেতা মিজান উদ্দিন, ম-লপাড়ার জামায়াতকর্মী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। এভাবে খ- খ- মিছিল বের করার পর পৃথক গাড়িতে করে বহিরাগত লোকজন রামুতে আসতে শুরু করে। মোটরসাইকেল, জিপ (চাঁন্দের গাড়ি), মিনিবাসে করে এসব লোক রামুতে আসার পর মারমুখী মিছিলের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এ মিছিলে নেতৃত্বদানকারী লোকজন মন্দিরে-মন্দিরে এবং বাড়িতে বাড়িতে হামলা অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটায়। রামুর আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দা বড়ুয়া সমপ্রদায়ের এক তরুণ নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে মিছিলের পর। অথচ মিছিলে নেতৃত্বদানকারীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছেন। এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পরিদর্শনেও যাচ্ছেন তারা। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কিত রয়েছেন বৌদ্ধধর্মের লোকজন। তিনি জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় হামলায় জড়িতদের নাম ক্রমাগত প্রকাশ হতে শুরু হয়েছে। ওই সব সংবাদে সূত্র হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি তাকেও হুমকি দিয়েছেন। তবে আবার হামলার আশঙ্কায় হুমকিদাতার ফোন নাম্বারটি দিতে রাজি হননি তিনি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক ব্যক্তি জানান, মঙ্গলবার বিকালে মেরংরোয়া মন্দিরের সামনে থেকে নুরুল ইসলাম সেলিমকে ধাওয়া করা হয়। তার দাবি- এ ব্যক্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া ছাড়াও মন্দিরে হামলার ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নুরুল ইসলাম সেলিম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কেবলমাত্র উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতেই সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বৌদ্ধপল্লীতে হামলার সময় প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন এলাকার পরিচিত তরুণরা। প্রতিটি মোটরসাইকেলে ২ থেকে ৩ জন করে ছিলেন। এদের হাতে পেট্রল, গানপাউডারসহ বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল। জানা গেছে, এ ঘটনায় জড়িত যে সব লোককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তাদের নামের তালিকা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় ২০০ জনের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। ওই তালিকায়- কাউয়ারখোপের মৌলভী শফিক আহমদ, আহমদ কবির, হাফেজ হাবিবুল্লাহ, নজির হোসেন, ফরিদ আহমদ, রশিদ আহমদ, মহিউদ্দিন, নুর আহমদ, আবদুল রশিদ, আবুল ছৈয়দ, হানিফ, ছবি্বর আহমদ, বদিউল আলম, রাহামত উল্লাহ, আবদুল কাদের, জাফর আলম, আবদুস সালাম, সৈয়দ আলম, মোহাম্মদ হোসেন, আমিন সওদাগর, নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ, সেয়াফত আলী, হেলাল, ফজল, ওয়াদুল, সাদ্দাম হোসেন, সুরত আলম, রমজান আলী, ওসমান গণি, রামু কলেজ এলাকার মোজাফফর আহমদ, তার ছেলে আমিনুর কবির, শফিউল কবির, সরওয়ার আলম, চাকমারকুলের আবুল কাশেম, আবদুল মাসুদ, ফতেখাঁরকুলের দেলোয়ার হোসেন, জহির আহমদ, দিদারুল আলম দিদার, আজিজ, জহির আহমদ, গিয়াস উদ্দিন, রামু বাজারের হাফেজ আহমদ, মিজান মেম্বার, সাফী, নুরুল উল্লাহ, মেহেদী, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো, আলী আকবর, আবদুল কাদের, দিলদারুল আলম এবং ওসমানের নামসহ বিভিন্ন জনের নাম রয়েছে। আক্রান্ত এলাকার লোকজনের অভিযোগ- ওইসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। অপরদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ফেসবুকে উত্তম কুমার বড়ুয়াকে ছবি ট্যাগ/শেয়ার করার পর তার ফেসবুকের প্রোফাইল পৃষ্ঠাটির শত শত কপি প্রিন্ট করে সরবরাহ করা হয়। হাফেজ আহমদ নামে এক মৌলভী রামুর ফকিরাবাজারে অবস্থিত 'ফারুক কম্পিউটার টেলিকম' নামে একটি দোকান থেকে এ ছবি প্রিন্ট করে সরবরাহ করেন এবং হইচই করতে থাকেন। ওই সময় হাফেজ আবদুল হক নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোনে লোকজনকে রামু আসতেও বলেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন। ওই হাফেজ আবদুল হক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কক্সবাজার শহরে গত জুন মাসে আটকও হয়েছিলেন। একইসঙ্গে স্থানীয়দের দাবি, হাফেজ আহমদ রোহিঙ্গা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত রয়েছেন। প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনায় ধারণ করা ভিডিও দৃশ্য এবং ছবি ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে পেঁৗছেছে। পুলিশ ওই সূত্র ধরে ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের দাবি, কয়েকজন জনপ্রতিনিধি উত্তেজিত জনতাকে শান্ত হতে বললেও পরে তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে, ওই সব জনপ্রতিনিধিকে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। মাইক ব্যবহার করে জনতাকে একত্রকারীদেরও শনাক্ত করা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলোও ঘটনার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। জানা গেছে, শনিবার রাতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার দুই দিন আগে মিয়ানমারে কয়েকটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ খবর রামু ও কক্সবাজারে ছড়িয়ে পড়লে নাশকতার পরিকল্পনা করে একটি চক্র। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও এ ব্যাপারে অবগত ছিল। কিন্তু নাশকতা মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা নিতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। বৌদ্ধ উপাসনালয়কে ঘিরে আগাম কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তারা। গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, ওই চক্রটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উত্তম কুমার বড়ুয়াকে ফাঁসিয়েছেন। তার ফেসবুকে একটি বিতর্কিত ছবি ট্যাগ করে দিয়ে খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে এর ভিত্তিতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালানো হয়। জানা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর ইনসাল্ট আল্লাহ নামে বিতর্কিত ওই পেজটি উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুকে ট্যাগ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, পেজটি তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর একটি দেশে। বৌদ্ধ উপাসনালয়ে হামলার পরিকল্পনা হিসেবে রোহিঙ্গা এবং মৌলবাদী শক্তির ইন্ধনে এ ঘটনাটি সাজানো হয়। আর এ জন্য চক্রটি স্থানীয় লোকজনকে আগে থেকেই 'তৈরি করে' বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
খবরটি আজ ৫.১০.১২ যায়যায়দিন-এ প্রকাশিত হয়েছ