কলিকাতা হতে ট্রেনে করে নিউ-জলপাইগুড়ি ষ্টেশানের দূরত্ব প্রায় আট ঘন্টার। গতকাল ট্রেনে নয়, সওয়ারী নৌকায় করে জলপাইগুড়ি গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলাম কেবল আমি। আট ঘন্টার রাস্তা ক্রমসংকুচিত হতে হতে আট মিনিটে নেমে আসে যদিও ত্রিশ/ পঁয়ত্রিশ বছর আগে পাঠ করা নিমাই ভট্রাচার্যের বইয়ের পাতায় বিধবাদের কাশিযাত্রা ক্রমদীর্ঘতর হয়... আমাদের বাবার মৃত্যু হয়েছে। আমাদের মায়েরা সংসারের মায়াজাল ছিন্ন করে চিরদিনের জন্য পদক্ষেপ ফেলছেন কাশিপন্থে; তারা মলীন বস্ত্রপরিহিতা; তারা এলোকেশী; তাহাদের পায়ে পায়ে ধূসর ধুলো উড়ছে উছছে...আজ বলতে দ্বিধা নেই- নিমাই ভট্রাচার্যের নাম না জানা উপন্যাসের পৃষ্টা ধরে যে সকল বিধবারা দলবদ্ধ কাশিযাত্রা করেছিলো তাদের মধ্যে শুধু আমার জননীই নন, আমার সাধনসঙ্গিনীও ছিলো। বলতেই তো পারি- কুয়াশার আড়ালে যে বিধবার মুখ অর্ধেক দেখা যায় তিনি আমার মা আর যে বিধবার মুখ অর্ধেক দেখা যায় না তিনি আমার প্রেমিকা...
জলপাইগুড়িভ্রমণ ক্রমদীর্ঘ হয়...। দেবীদক্ষিণ পাঠ করেন আত্নহননকারী কবি শামশের আনোয়ার-এর কবিতা “এখন গোপন হত্যায় কটু কামবিলাসিনী ঐ ঊষার দগদগে গোলাপী রঙ ছড়িয়ে আছে আমার আত্মায়”। আমার জলপাইগুড়িভ্রমণ শামসেরআনোয়ারভ্রমণ হয়ে আটকে থাকে শক্ত কুয়াশায়।
ক. প্রেম আর স্মৃতি আমি উড়িয়ে দিয়েছি সিগারেটের ধোঁয়ায়
জ্বর আসেনি তবুও আমি জ্বরের ঘোরেই বাঁচি
(মা কিংবা প্রেমিকা স্মরণে)
খ. সংগমের ইচ্ছা হলে নিজেকে জড়িয়ে ধরে সংগম করি
অন্ধকারের নর্দমায় আমি কীট হয়ে অন্ধকার খুঁড়ে খাই
অন্ধকারের সমুদ্রে অন্ধকার পান করে বেঁচে থাকি
গ.অশ্র“ময় চিৎকারে ডাকি : কেন গেলে, এই
উন্মাদ, তোমাদের দ্বারা নষ্ট পাখিকে কে প্রশ্রয় দেবে আজ?
বৎসরান্তে কে দেবে আমায় সস্নেহ, ঝোল মাখানো খুকি?
কার দীর্ঘশ্বাস টের পাব এই পুড়ে যাওয়া, ব্যর্থ অস্তিত্বের আধো জড়িত ঘুমে
ঘ.আত্মজ্ঞানহীন ঘুমে গড়াই আমি
বেশ কিছু মৃত পাখি ডানা মেলে রোদ পোহায়
লাল নদীর ধারে
(সেই লাল নদী)