উৎসর্গঃ কবি মানবেন্দু রায়
ভাঙ্গা চশমার ভেতর দিয়ে সূর্য দেখে নিচ্ছে এই অন্ধ্রপ্রদেশ, এই ভূ-পৃষ্টকে; আলো পড়েছে দক্ষিণ-ভারতের দেবী-দক্ষিণ পাহাড়ে... হে পাহাড়, তোমার বয়স কতো! মানুষের ঘাড়ের গন্ধ শুঁকে বয়স টের পাওয়া যায়- কে জানি বলেছিলো সেই কবেকার শৈশবে! পাহাড়ের বয়স কী করে জানলো বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তরূণ বক্ষবিদ্যক! মাঝারি আকারের এই পাহাড়টি না কি হিমালয়ের চেয়ে বয়সে অনেক বড়...
পৃথিবীর এই পুরনো পাহাড়ে আমি উঠবো...
আমার সারা জন্মের ইচ্ছে- জীবনে অন্ততঃ একবার আমি পাহাড়ে উঠবো...
আমি ছা-পোষা মানুষ- এই জীবন, এই সংসারের পাহাড় ঠেলে ঠেলে কখনোই কোনো ভূ-পাহাড়ে আরোহণের সুযোগ হয় নি আমার...
মা, আমি পাহাড়ে উঠবো...
হে পুত্র-কন্যা, আমি জীবনে একবার পাহাড়ে উঠবো...
হে মৌ-ভোর, মাটির মমিতে দেখি স্বজনের মরা মুখ...
ঐ পাহাড়ে ঘুমিয়ে আছে আমাদের মৃত মা, মৃত ঝর্ণা, হারানো বন্ধুর রোদমাখা মুখ... ঐ পাহাড় শীর্ষে আমি একবার দাঁড়াতে চাই...
আমার ডানপাশে অক্সিজেন-সিলিন্ডার, বাঁ-পাশে পাহাড়...
মা, আমি পাহাড়ে উঠবো
দ্বাদশ শতাব্দীর মৃত কবিরাজের যুবতী বউ, আমি পাহাড়ে উঠবো...
হে লক্ষণ সেন, বল্লম রায়- আমি পাহাড়ে উঠবো...
হাসপাতালের জানালা দিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাতাস বইছে... এই ভাঙ্গা সংসার ছিদ্র করে বাতাস বইছে...আমি এই ছিদ্রের ভেতর আরো কিছুকাল বেঁচে থাকতে চাই। আমার অসমাপ্ত লেখাগুলোর জন্য এই ধারকরা সময়ের ভীষণ দরকার আমার। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী, সেই দ্বাদশ শতাব্দীর রোমথা, যাদের কপালে কাটা দাগ আছে, যারা গিনিপিগের মতো ব্যবহ্রত হবে আয়ুর্বিদ্যার কাজে, ফাঁসির আগ পর্যন্ত বহুবার সঙ্গম করে যাবে মৃত্যু নামের মাগীটার সঙ্গে; তাহাদের কথা আর কবিরাজের যুবতী বউয়ের কথা... সময়কে গুটি গুটি করে মার্বেল খেলার জন্য হে মহাপ্রকৃতি, আরও কিছুকাল এই মরপৃথিবীতে বেঁচে থাকা জরূরী আমার...
...আর পারছি না হে জননী- ঐ পাহাড়ে আমি উঠবোই...
উঠছি তো উঠছি...
উঠতে উঠতে
উঠতে উঠতে খেয়াল করলাম- আমার নিঃশ্বাসের মধ্যে ছোটো ছোটো টিলাগুচ্ছ রয়েছে, ক্রমশঃ তা পাহাড় হয়ে যাচ্ছে! এক জীবনে সবাই কি তবে পাহাড়ে উঠতে পারে না মা! আমার বুকের চাপটা কি ঐ পাহাড়ের চাপের চেয়ে বহুগুণ বেশি!
গড়িয়ে গড়িয়ে উপরের দিকে উঠছি না কি নিচের দিকে যাচ্ছি ঠিক বুঝতে পারি না! কেবল মনে হয়- আমি সেই দণ্ডপ্রাপ্ত রোমথা, আয়ুর্বিদ্যার বিষাক্ত সিরাপ পান করেছি...
_________________________________________