একটা পেটকাটা ঘুড়ির ভেতর বাতাসের মুখ আবিস্কার করতে পেরে আশির দশকের শেষের দিকে চরকাসিমপুর গ্রামের একদল বালক ভাঙা দাঁত ও ছেড়া-জিহ্বা বের করে যদিও হেসে উঠেছিল কিন্তু বড় হয়ে আকাশ-ভর্তি শকুনের ঠোঁট ও মানুষের ছিন্নভিন্ন হাত-পা-পাঁজর এবং মৃতকুকুরের ছায়া প্রত্যক্ষরণের পর চিরদিনের জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর কৌশল ভুলে গিয়ে দলবদ্ধ তারা যখন নগরমুখো হয় তখন কেউ কেউ সাঁকো ভেঙ্গে জলের গর্তে অগত্যা হারিয়ে যায় এবং দু'তিন জন ছাড়া সকলেই দশ-বরো বছরের ব্যবধানে ভেসে ওঠে পৃথক পৃথক জল ও স্থলখন্ডে-- লেবাননে আফগানিস্থানে জয়দেবপুরে সমসেরনগরে এবং যারা যাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয় তারা হাত ধরাধরি করে সড়কের পর মহাসড়ক পেরুতে যেয়ে জ্ঞাত হয়-- এ পন্থে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রাক মহিলা-বাসসহ অটোরিক্সা হামাজীপ নট-নটী এবং রাষ্ট্রপতি মহারাষ্ট্রপতিসহ সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচটন করে অর্থাৎ চরকাসিমপুর গ্রামের একটা তিনপায়া উনুনের ভেতর আগুনের ওজন অথবা গ্রামসুন্দরী ভাবিটির স্তনের ওজনের সঙ্গে বিস্তর ফারাক অনুভব করে ঈষৎ বিষ্মিত তারা মহাসড়কের মধ্যবর্তী আয়ারল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আপাতচঞ্চল তারা ডানদিকে তাকিয়ে বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরাতেই কমলা রঙের হাতিগুলোর কথা ভুলে গিয়ে পেটকাটা ইদুরের ভেতর দলবদ্ধ তারা মানুষের লুকিয়ে পড়ার দৃশ্যে বেশ আশ্বস্থ যদিও তবু মনে পড়ে যায়- প্রতিমাসে আঠারোবেলা ভাত খাওয়ার জন্যে কমপক্ষে বিশটি সাপ ধরে কোন প্রযত্নে যখন জীবন ধারণ অসম্ভব হতো তখন প্রতি বর্ষা-মৌসুমে কয়েক মণ ঘাড়ু-ব্যাঙ ধরে কয়েক মণ ভাঙ্গা ধানের বন্দোবস্ত করতে হতো... তারপরও তাদের নির্জন পল্লীতে পূর্ণিমা আসতো আর ধবল উঠোনে আগুনে-পোড়া পূর্বপুরুষের মুখ ভেসে ভেসে পুনরায় মিলিয়ে যেতো... বেড়ালের হর্ষধ্বনি হতে অনেকগুলো নতুন বেড়ালের জন্ম হলেও কোন এক প্রত্যুষে নিদ্রা ভেঙ্গে তারা কি নিরাধারা কান্না করেছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হতে হতে বাকরুদ্ধ হয়েছিল... এখন যদিও তা মনে নেই তবে নিগূঢ় দৃশ্যকল্পটি কিছুতেই ভুলতে পারে না এজন্যে যে ঐ রাতে বেড়াল-জননী তার সদ্যপ্রসূত ছানাটির মাথা ও ঘাড়সহ তলপেটের অংশবিশেষ গিলে খেয়েছিল এবং তা প্রত্যক্ষরণের পর অপ্রতিরোধ্য বিবমিষার সময় তারা বুঝতে পেরেছিল-- মানুষ তার সারাটা পাকস্থলী সরু ছিদ্র দিয়ে উগলে দিতে পারে কিন্তু পাকস্থলী হতে বেড়ালের মাথাটা উগলে দেয়া প্রায়-অসম্ভব...
===========================================
জলজ
১.
অন্ধকার ছিল নরম ও নিস্তেজ। মৃত অক্ষরের ওপর মাছিদের ভোঁ ভোঁ শব্দে ক্রমশঃ ভেঙ্গে পড়ছিল পিঁপড়ের হাড়। এ দিবস তথা বৃক্ষরাজি ছারখার হলে অক্ষরগুলো উড়ে যেতে চায় মাছির উর্ধ্বতন। শূণ্যস্থান তখন ক্রমদীর্ঘ, তখন করোটীর পাশে পড়ে থাকা এক টুকরো আলো নিয়ে বালক্রীড়া করে সন্তানেরা। কেউ কেউ মাছি তাড়াতে যায়। বিবিধ বর্ণে তারা দিগ্বিদিক মিশে যাবার সময় আমাদের কোলাহলের অধিক ভোঁ ভোঁ শব্দ শুনা যায়।
এ আলো আঁশটে এবং ছেড়া ছেড়া। বৃক্ষের বানান লিখে যেতে যদিও কেউ কেউ নদী পাড়ি দেয়, নিদ্রা ভেঙ্গে গেলে হাড়ের হরফ হয়ে তারাও বয়োপ্রাপ্ত হয়। তারা মৃত্যুর নামে পূনঃর্বার জেগে উঠতে চায় অথবা মাছি বিতাড়ন- স্মৃতি সাকুল্যে ভুলে যেত চায়।
২.
পৃথিবীতে ঠান্ডা আসে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, আসমান, জমিন ও জয়তুনের বাগান ঠান্ডা। কলিজা-খোলা কীর্তনখোলায় কেউ আর মাছিগুলো তাড়াতে আসে না। দিগ্বিদিক ছড়িয়ে থাকে জলের মাংস...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:৪৬