somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃত মুসলিম কি বাঙালি হতে পারে ?

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমান মূলত কালচারালি আইসোলেটেড। এদের জীবনে আনন্দঘন মুহূর্ত খুব কম ই আসে। ধর্মীয় ভাবেই এদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবের সম্পর্ক নাই। ধর্মীয় ভাবে মুসলমানরা যে দুটা দিন সেলিব্রেট করে তার একটা হইলো রোজার ইদ, আর একটা কুরবানির ইদ। এই দুটা কে উৎসব বলা হলেও, উৎসব বলতে আমরা যা বুঝি, জানি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মুসলমানদের জন্য যে দুটা দিন নবী মোহাম্মদ ফিক্সড করে দিয়েছে সেটা মূলত ইবাদতের অনুষঙ্গ। ইদানিং কালে আহালে কুরআন নামের এক শ্রেণির বাটপারের উদ্ভব হয়েছে, যারা হাদিস অস্বীকার করে। অথচ হাদিস অস্বীকার করলে রোজার ইদ, কুরবানির ইদ দুটাই ইনভ্যালিড হয়ে যায়। রোজা কিংবা কুরবানি দুটা ই ইবাদতের অংশ, কোন ভাবেই উৎসব না। এই দুটা ইভেন্টে কেবল মুসলমানরা ই অংশ গ্রহণ করে।

কালচারালি আইসোলেটেড হবার কারণে মুসলমানরা এসব দিনে খাওয়া দাওয়ার প্রতি ফোকাস করে, অথচ এই দুটা দিন কেবল ইবাদতের। ২৯/৩০ দিন রোজা রেখে, পরের দিন ভোরে উঠে গিয়ে নামাজ পড়বেন, কুরবানির সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তাকওয়া প্রুফ করার জন্য পশু কুরআনি করবেন। কিন্তু এটা এখন হয়ে গেছে রেড মিট ফেস্টিভ্যাল, তাকওয়া, ইবাদতের ছিটেফোঁটা নাই।

এরা যে কালচারালি আইসোলেটেড, এটা এরা নিজেরাও ভালো রিয়েলাইজ করে। এজন্য আশেপাশের মানুষের উৎসব, নাচ গান, পানাহার, আনন্দ হৈ হুলোড়ে এরা পেঁচার মত মুখ করে থাকে। কোন সময় এরা সংখ্যাগরিষ্ট হলে এসব বন্ধ করে দেবার স্বপ্ন দেখে, কিংবা বন্ধ হয়ে যাবার অপেক্ষা করে। এদের টেনডেন্সি হলো, আমাদের নাই, বাকিদের ও থাকতে পারবে না। এতে আসলে এদের দোষ নাই।

মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকে ই উৎসব, পার্বন এসবের প্রতি সংবেদনশীল। সুরেলা কন্ঠ, সুর,লয় তাল এসবের প্রতি মানুষের বিবর্তনীয় সংবেদনশীলতা লক্ষ্য করা যায়। বাঙালির কথা ই ধরুন! ট্যাগ লাইন হচ্ছে " বারো মাসে তের পার্বন"। অর্থাৎ বারো মাসে গুনে গুনে তেরো টা উৎসব। বাঙালির ভাটিয়ালি আছে, ভাওয়াইয়া আছে, জারি সারি আছে, পুঁথি পাঠ আছে, যাত্রাপালা আছে, বাংলা নববর্ষ - পহেলা বৈশাখ, বর্ষা উৎসব, নবান্ন উৎসব, পৌষ মেলা
বসন্ত বরন - পহেলা ফাল্গুন, নৌকা বাইচ, বাউল উৎসব
জাতীয় পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব সহ কত শত আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ্য আছে। কিন্তু কোন বাঙালি সাম হাউ মুসলমান হয়ে গেলে ধর্মীয় ভাবেই তার জন্য এসব বন্ধ।

এরা বাকিদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণের জন্য মিলাদুন নবী, শবে বরাত ইত্যাদির প্রচলন করার চেষ্টা করলেও সেসব ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এসবের ধর্মীয় ভিত্তি নেই, নবী মোহাম্মদ কখনো এসব উৎসব হিসেবে পালন করে নাই। এসব দিনে হালুয়া রুটি খেয়ে সুগার বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন সিগনিফিকেন্ট ভ্যালু নাই। নবী মোহাম্মদ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তার জন্মদিন নিয়ে। তিনি বলেছিলো, তিনি সোমবার জন্মগ্রহণ করেন, এবং সেজন্য সোমবার রোজা রাখেন। ওই যে আবার ইবাদতের অনুষঙ্গ হয়ে গেলো। কিন্তু বাঙালি মুসলিম রোজা বাদ দিয়ে নবীর জন্ম দিনে কবজি ডুবিয়ে খেয়ে বেড়ায়।

মূলত বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানের বিরোধ আছে। বাঙালি কখনো মুসলমান হতে পারবে না, মুসলমান কখনো তার ধর্মীয় বিধিনিষেধ বাদ দিয়ে বাঙালি হতে পারবে না। অন্য দিকে বাঙালি হিন্দুদের উৎসব দেখেন, দুর্গা পূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, কোজাগরী, লক্ষ্মীপূজা, ভাই ফোঁটা সহ আরো কত কী! সব গুলো ফেক্সিবল। এগুলো তে আপনি ইনস্ট্যান্ট গিয়ে এটেন্ড করতে পারবেন, তাদের আনন্দে গিয়ে সামিল হতে পারবেন, আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন। মুসলমানদের সেই সুযোগ নাই। কদিন আগে বড় দিন গেলো, কলকাতায় সাজ সাজ রবে ক্রিসমাস পালন হয়েছে। দুনিয়ায় হিন্দু গিয়ে সেটায় আনন্দ করছে। বাট আপনি মুসলমান হয়ে একটা পোস্ট দিতে পারবেন না, ক্রিসমাসে উইশ করে। এটা ই ফ্যাক্ট।

আগে ই বলেছিলাম বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানের বিরোধ আছে। এই বিরোধটা একনলেজ করে বলে ই অনেক মুসলিম কে দেখবেন বলবে "সে আগে মুসলিম, তারপর বাংলাদেশী"। কারণ যে জানে, বাঙালি মুসলিম বলতে কিছু হয় না। তার প্রথম এবং এক মাত্র পরিচয়, সে মুসলিম। ঠিকঠাক পর্দা করে না,ধর্মীয় ভাবে এমন অর্ধ উলঙ্গ আপ্পিদেরও দেখবেন প্রোফাইলে লিখে রাখে " প্রাউড মুসলিম " বা "মুসলিম বাংলাদেশী"। কারণ সে এই বিরোধ সম্পর্কে অবগত। ঠিকঠাক ভাবে আমল না করলেও তার ইমান ঠিক আছে।

প্রাক ইসলামী যুগেও কাবার চারদিকে কবিদের কবিতার আসর বসতো, সেরা সেরা কবিতা গুলো কাবার দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হতো, গায়িকা ছিলো, আসমা বিনতে মারওয়ানের মত মহিলা কবি ছিলো। কিন্তু মোহাম্মদের নব্যুয়তের পর সব শেষ। মুসলিমরা মাইনরদের নানাভাবে এপ্রেসড করে, এটা মূলত কালাচারাল আইসোলেশনের আউট কাম। কালচারালি মুসলমান পঙ্গু, দুনিয়ায় সঙ্গে সে সম্পর্কহীন, তার মেইন এইম হচ্ছে আখিরাত।

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, নারী পুরুষ বাচ্চাকাচ্চা বিভিন্ন উৎসব পার্বনে হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে, আর ঠিক সেই সময়ে কোন মুসলিম এই আনন্দঘন মুহূর্ত বিরস বদনে জানালায় দাঁড়িয়ে দেখছে। এটা তার উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রেসার ফেলে, নিজের ভেতর সে কুঁকড়ে যেতে থাকে। এজন্য সে ক্ষমতা পাওয়ার পর অন্যদের ইনভেইড করে, অপ্রেসড করে, অন্যদের উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

লিখেছেন
Tazkia Isaba
১৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=মায়ের মতন কে হয় আর আপন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৭



আহা শৈশব, হাঁটি হাঁটি পা... মায়ের দৃষ্টি সদা জাগ্রত
কোথায় পড়ে যাই, কোথায় খাই হোঁচট, কোন সে বিপদ অনাগত,
কত দুশ্চিন্তায় মা বিভোর,
কত নির্ঘম কাটে মায়ের রাত ভোর।

মা আর সন্তান,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগকে ব্যান করায় স্বাধীনতারপক্ষ ও আওয়ামী লীগ উপকৃত হবে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৯



ছাত্রলীগের ইতিহাসের বড় দিক হলো তারা জাতীর মুক্তির জন্য মুক্তিযু্দ্ধ করেছিলো; শিবিরের ইতিহাস হলো, ওরা রাজাকার ও আলবদর হয়ে বাংগালী জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছিলো; ২০২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার আইডিয়াগুলো একাডেমিয়াতে সবার জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছি

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



গতকাল শায়মা আপুনি মাকাল ফল নিয়ে একটি ছড়া লিখেছিলেন। সাথে ঐ ফলের ছবিও দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, মাকাল ফল দেখতে আপেলের মতো। আর, এই আপেল নিয়ে জর্জ বার্নার্ড... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলাম বিহীন পৃথিবী কেমন হবে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:০৮



ইসলাম বিহীন পৃথিবী সুন্দর হবে।
আনন্দময় হবে। সবচেয়ে বড় কথা ধর্মের দোহাই দিয়ে খুন হত্যা জুলুম ইত্যাদি মন্দ কাজের চির অবসান হবে। ধর্ম সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই দাংগা কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৃত মুসলিম কি বাঙালি হতে পারে ?

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:২১

মুসলমান মূলত কালচারালি আইসোলেটেড। এদের জীবনে আনন্দঘন মুহূর্ত খুব কম ই আসে। ধর্মীয় ভাবেই এদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবের সম্পর্ক নাই। ধর্মীয় ভাবে মুসলমানরা যে দুটা দিন সেলিব্রেট করে তার একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×