অনেক দিন ধরেই ব্লগে লেখা হয় না। শুধু লেখা হয় না বলতে আসাই হয় না। মাঝে মধ্যে অফলাইনে দেখা হয়, এই শেষ। প্রচুর ইচ্ছে হয় সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্লগিং করার। কিন্তু কাজের ঝামেলায় এটা হয়ে ওঠে না।
তবে বছরের নতুন সময়ের একটা আমেজ বিরাজ করছে প্রায় সবদিকেই। একটা নতুন সাল যোগ হয় প্রতি বছর কিন্তু এই নতুন সংখ্যাটা আমাদের কিছু দিয়ে যায় বলে আমি দেখি না। যা দেখি তা হল সেই আগের ভাঙা ডাস্টবিনে নতুন করে পুরনো ময়লা ফেলা হচ্ছে। বছরের শেষদিকে রাজনিতির পালে হাওয়া লেগেছিল আর সে সুবাদে ব্লগে উকিঝুকি দিয়ে দেখতাম কে কি বলছে। বাস্তবে, রাজনিতির ওপর আমি এতটাই বিরক্ত যে কেউ এ দেশের রাজনিতি নিয়ে কিছু বললে সেখান থেকে কেটে পড়ে নিজেকে স্বস্তি দিয়ে থাকি। কিন্তু এ দেশটাকে পর করে দেওয়া কি যায়? হাজার হোক এ দেশ তো #আমার। রাজনিতির নুন্যতম খোজ না রাখলে কি চলে?
#আমার বলার একটা কারন আছে। একবার এক উন্নয়নশিল দেশ থেকে আসা লোক স্যুট টাই পরা ভদ্রলোককে দেখলেন রাস্তা থেকে একটি চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নিজের পকেটে পুরে চলে যাচ্ছেন নিজের গন্তব্যের দিকে। বেচারা এ দেশে নতুন এসেছে। তাঁর কৌতুহল হল -
- এক্সকিউজ মি, আপনি আমার ফেলে দেওয়া চিপসের প্যাকেট আপনার ব্লেজারের পকেটে রাখতে আমি দেখেছি। আমি কি জানতে পারি, আপনি এটা দিয়ে কি করবেন?
- ওহ, ইয়াং ম্যান। আমি আরেকটু সামনে রাখা ডাস্টবিনে রাখব।
কৌতুহল নিবারন তো হল। কিন্তু সাথে একমুখ লজ্জাও পেলেন ওই বেচারা। কারন, তাঁর দেশে এই ধরনের কোন সংস্কৃতি কোনসময়ই চোখে পড়েনি। তারপরও মাফ চেয়ে এই প্যাকেটটা নিজের হাতে ফেলে নিয়ে বললেন।
- আমাদের দেশে এইরকম কেয়ার কেউ করে না। তাই আসলে - বুঝতেই পারছেন।
- ইয়াং ম্যান, আমি কখনো আমাদের দেশ বলে বলতে চাই না। আমি আমার বলতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি, কারন আমি কেয়ার করি।
যাইহোক, আমি রাজনিতি নিয়ে কিছু বলব বলে আজ লগিন করলাম। বাংলাদেশে যারা রাজনিতি নিয়ে ফুলটাইম সময় দেন, আমি অবশ্য তাদের নিয়ে কিছু বলব না। বরং রাজনিতির মাঠটা যারা গরম করেন তাঁদের মাঝ থেকে নির্দিস্ট একটি শ্রেণির কথা বলতে এসেছি। আরো পরিস্কার করে বললে অনলাইন তথা ব্লগের রাজনিতিবিদ নিয়ে আমার পর্যবেক্ষন উপস্থাপন করার চেস্টা করব।
এইসকল রাজনিতিবিদরা এই জাতিরই অংশ, তাই বাংগালি জাতির কমন প্রবলেমসমুহ তারা ধারন করেন এটা অস্বাভাবিক না। আমি যে জায়গায় উদ্বিগ্ন তা হল তাঁরা প্রকারান্তরে ভুলভাবে ভাবতে ও রেসিজমকে উৎসাহিত করছেন জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে।
আমি গতকাল রাতে চাঁদগাজিকে দেখলাম একটা পোস্টে লন্ডনে বসবাসরত সিলেটি কমিউনিটিকে আক্রমন করে নিজের ব্যক্তিত্ব-হিনতা প্রকাশ করছেন সামুর প্লাটফর্মে। তামিল ছবির ভাষায় বললে বুকের পাটা দেখিয়ে উনি সিলেটিদের বাসস্থানকে বস্তি শব্দ দিয়ে মুল্যায়ণ করার চেস্টা করছেন, মনের সর্বোচ্চ ঘৃনা দিয়ে।
ব্লগে উনি অন্তত দশবার ব্যান হয়েছেন উনার আগ্রাসি মনোভাবের কারনে। 'আমারব্লগ' উনাকে চিরতরে ব্যান করে দিয়েছে। বাংলা ভাষার অন্যান্য ব্লগ থেকেও উনি এই টাইপ স্বভাবের কারনে ব্যান খেয়েছেন যেই টাইপ অভিজ্ঞতা আর কারো আছে বলে আমার জানা নেই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি উনার সেন্স অব হিউমরের ভক্ত। কিন্তু উনার কিছু ব্যাপারে আমি একমত নই। এরমধ্যে একটা হল - ব্যক্তি আক্রমণ করে কথা বলা। সেদিন দেখলাম ব্লগার কলাবাগান' কে উনি বলছেন "আপনার মগজ বানরের মগজের সমান"।
তো বুঝাই যাচ্ছে, উনি ভিন্নমতের প্রতি মোটেও শ্রদ্ধা রাখেন না। আর জেলাসি টাইপ ব্যাপার তো আছেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্ত অবস্থানের পেছনে যে রেমিটেন্সের অবদান সেখানে লন্ডন থেকে পাঠানো অংকটা যে অনেক বড় একটা শক্ত ভিত্তি সেটাকে উনি মোটেও কেয়ার করেন না।
কিন্তু চাঁদগাজি সাহেবের এই টাইপ মনোভাব কি উনি একাই ধারণ করেন নাকি আরো আছে?
দুর্ভাগ্যবশত, ব্লগে তো আছেই, ব্লগের বাইরেও কমবেশি এই মনোভাব অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই আমি পাচ্ছি। একটা সহজ পরিক্ষা করা যাক। ধরুন ৩ জন লোককে বিচারের মুখোমুখি করা হল, আপনি হলেন বিচারক। আপনি যা বলবেন তাই শাস্তি দেওয়া হবে, তার কোন নড়-চড় হবে না।
অভিযোগ হল - লোকটি প্রতিপক্ষের ঘরে আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়েছে। ঘরের ভেতর থেকে দুজন বের হতে না পারায় তারা জ্যান্ত অবস্থায় পুড়ে মারা গেছে। বের হতে পারা ৪ জনকে ওরা দা দিয়ে কুপিয়েছে, পরে জননাংগ কেটে দিয়েছে।
যে তিনজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে তারা সহোদর। তাদের ওপর ৬ বছর আগে আক্রমন করেছিল এরাই। তখন তাদের মাকে এই পরিবারের লোকটি তার বন্ধুদের নিয়ে ধর্ষন করে খুন করেছিল তুচ্ছ কারনকে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাটির পরের ধারাবাহিকতায়।
মনে রাখবেন আপনি হলেন বিচারক, অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে, আপনার কাছে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বেকসুর খালাস থেকে একেবারে ফাঁসিতে ঝুলানোর, কিংবা যাবজ্জিবন কারাগারে রাখার।
বিচারে আপনি কি করবেন সেটা কমেন্টে লিখতে পারেন, তবে আমার চাওয়া হল আপনার নিজস্ব বিবেচনাবোধ থেকে এদের শাস্তি নির্ধারন করবেন। তবে তার আগে আমার অবজারবেশন থেকে কাদের বিবেচনায় কি বিচার হতে পারে সেটা অনুমান করার চেস্টা করছি।
উদাসী স্বপ্নঃ ধর্ষকদের শাস্তি দিয়ে খুব ভাল করসে। এখন জানতে হবে এই লোকটার পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড। সে কি শিবির জামাত করে? যদি করে তাইলে ঝুলায় দাও।
হাসান কালবৈশাখিঃ আগে জানতে হবে, এই লোকটা বিম্পি/জামাত করে কি-না। যদি করে তাহলে ওকে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড। আর আওয়ামিলিগ করলে ওকে ৫ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড।
গিয়াস লিটন/কিরমানী লিটন/জাহিদ অনিকঃ সে কি আওয়ামিলিগ করে? তাহলে ওকে যাবজ্জিবন কারাদন্ড দেওয়া হোক। আর বিএনপি করলে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড।
চাঁদগাজিঃ ওই লোকটা কি শিক্ষিত? যদি হয় তাহলে একে জেলের নিরক্ষরদের শিক্ষক করে দেওয়া হোক। আর অশিক্ষিত হলে বিনা বেতনে স্কুলের পিয়ন/দারোয়ান টাইপ চাকরি দেওয়া হউক।
বিদ্রোহি ভৃগুঃ ওকে সারাজিবন জেলের ভাত খাওয়ার দরকার নেই। যেহেতু সে প্রতিশোধ নিয়েছে তবে মুল্যটা কড়া হয়ে গেছে। তাকে ৩ বছর কারাদন্ড দেওয়া উচিত। আর জেলের ভেতর তার খাবার দাবার সবকিছু যেন ঠিকটাক মত হয় সেদিকে জেল কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে নির্দেশ দেওয়া হল।
সিভিল সোসাইটির জনৈক লোকঃ প্রতিশোধ নিয়ে সে ভুল কাজ করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর তার আস্থা রাখা উচিত ছিল। যাহোক, ওকে যাবজ্জিবন কারাদন্ড।
জনৈক ব্যবসায়িঃ ওকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক, তবে ১০০ বস্তা চাল ভিক্টিম পরিবারকে দিতে হবে।
জনৈক বাম রাজনিতিবিদঃ তাকে গুলি করে মারা হোক।
জামাতপন্থি লোকঃ সে যদি জামায়াত করে তাহলে ২ বছর কারাদন্ড। আর যদি বিএনপি করে তাহলে ১০ বছর, আওয়ামিলিগ করলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাই দাও।
বিএনপি পন্থিঃ বিএনপি/জামাতের সাথে জড়িত থাকলে ১০ বছর কারাদন্ড। আর আওয়ামিলিগ করলে ১০০ বছর সশ্রম কারাদন্ড।
জনৈক আওয়ামিলিগঃ সে কি জামাত করে? তাইলে ঝুলায় দাও। আর বিএনপি করলে যাবজ্জিবন। আওয়ামিলিগ করলে এক লক্ষ টাকা জরিমানাপুর্বক খালাস।
জনৈক লোকঃ যা হইবার হইয়া গেছে। এখন শান্তি চাই। এই লোকরে শাস্তি দিলে কি তার পেশার লোকেরা দেশ অচল করে দিব? তাইলে একে বেকসুর খালাস দিয়া দাও। আর যদি তার এমন কোন ব্যকগ্রাউন্ড না থাকে তাইলে জানমালের ক্ষতিপুরণ পুর্বক যাবজ্জিবন কারাদন্ড অন্যথায় মৃত্যুদন্ড।
এ--ই হল আমার অনুমান। এখন কথা হল, এখানে ভুল হতেই পারে। যাদের নাম মেনশন করলাম আপনাদের যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হইবে।


লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আর বেশি বিষয় তুলে আনতে চাইলাম না। এতক্ষন যা বললাম তার মুলকথা হল- পৃথিবিতে মানুষের জিবনের মুল্যের চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে না। প্রতিটি জিবনের মুল্যই অপরিসিম। এখন সে মুচিই হোক, আর যত বড়ই বিজনেস ম্যান কিংবা রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপুর্ণ লোক সবারই জিবনের মুল্য আছে; ঠিক ততটাই, লেভেল ২২ ফ্ল্যাটে বসবাসরত উচ্চশ্রেণির বাসিন্দার। তাই আপনার শত্রু পক্ষ কিংবা ভিন্নমতের লোকটির অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন তার জিবনের মুল্যকে অস্বিকার করাটা ভুল। মানব-উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় এই মনোভাব। তাই সভ্য দেশগুলো থেকে মৃত্যুদন্ড ক্রমেই উঠে গেছে, উঠে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, গুহাবাসি মানুষ কেন আজ গ্রহ ছেড়ে গ্রহান্তরে পাড়ি দেবার ক্থা ভাবছে। ভেবে দেখুন।
ছবি: Crispijn van de Passe
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৮