গত কয়েক মাস ধরে আমি ব্লগে সময় দিতে পারছি না সেভাবে। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় ব্লগে সেভাবে সময় দেই কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয়ে ওঠে না;
এই ছবিটা আজকের প্রথম আলোর। রিপোর্ট পড়লে আপনিও জানবেন, বাজেট প্রণয়ণের সাথে এই ঘটনার একটা সুত্র অবশ্যই আছে। দুনিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মোটা চালের দাম বেশি। সরু/মাঝারি চালের ব্যাপারেও যে ভিন্ন কথা, এমন না। আমি একটা পয়েন্ট নোট করে রাখতে আপনাকে অনুরোধ করবো। পয়েন্ট হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্য! এখন আমি কিছু খাপছাড়া কথা বলে নিই।
আসলে বাজেট নিয়ে ভাল কিছু লেখার দরকার ছিল, কিন্তু সেটা ঐভাবে আমাদের মধ্যে সাড়া ফেলেনি। গত বছরও বাজেট নিয়ে আমি টুকটাক লিখেছিলাম। এবার আর ঐভাবে সময় আসলে দেয়া সম্ভব হয়নি বিধায় লিখলাম না। তবে এখানে কিছু মাছি না মারলে শান্তি পাব না। যারা সরকার প্রেমে কমবেশি ক্রাশ/আশিক তাদের আমি বলব- দয়া করে এই পোস্টটা এড়িয়ে যান। আমি শুধু জনস্বার্থ দেখে কথা বলব। সরকারের ভাল/পজিটিভ প্রচার করে আমরা আম জনতার কোন লাভ নাই।
যাইহোক, বাজেটের মতো জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ফেবু জনতার তেমন তৎপরতা দেখেছেন? আর গুটিকয়েক মিডিয়া ছাড়া বাকি সবাই দেখবেন পা চাটতেই ব্যস্ত! যাক, আমাদের মন্ত্রী সাহেব সু-উচ্চ কন্ঠে বলেছেন- "উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশঃ সময় এখন আমাদের;"
উন্নয়ন! হ্যাঁ, উন্নয়নই বটে। দেশের রাজনীতির পেছনের কলকাঠি নাড়া সুবিধাভোগী গোষ্টীর সম্পদ উন্নয়নের প্রত্যাশাকে সামনে রেখে ইতিহাসের শ্রেষ্টতম বাজেট। বেশ কয়েকটি ভরসা(!)র ভিত্তিতে তিনি এই যজ্ঞের বাস্তবায়ন করবেন বলে ভেবে রেখেছেন। এই যেমন মুল্যস্ফীতি থাকবে সাড়ে পাঁচ, জিডিপি হবে ৭.৪ শতাংশ, সুদের হার কমবে, বিদেশী সাহায্য বাড়বে, প্রবাসী আয় বাড়বে..
সবই পজিটিভি! মানে টাকা আসবেই এমন শক্ত অনুমান করে বাজেট প্রণয়ণ করা হয়েছে অথচ অন্য বছরগুলোর ন্যায় এবারও দেখা যাবে সেই কদু, যেই লাউ! কৃষিতে ভর্তুকী আরো কমানো হয়েছে, অথচ বাংলাদেশের কৃষি না বাঁচলে কি হবে সেটা আন্দাজ করলে পরিণতি ভয়াবহ ছাড়া কিছু দেখতে পারবেন না।
বাজেট বাস্তবায়নের চেয়েও বড় কথা হচ্ছে জুলুম! ব্যাংকে আপনার টাকা রাখলে এখন সেই টাকা থেকে বড় অংকের টাকা কাটা যাবে। ঠিক জানি না, এমনও শুনেছি লাখে এক হাজার করে এখন টাকা কমবে!!
তবে আমি বেশি কনসার্নড যেটা নিয়ে সেটা হলো ভ্যাট!
(আগের পয়েন্টটা মনে রাখুন) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য টাকাওয়ালা টাকা-ছাড়া উভয় প্রজাতিরই লাগে। কিন্তু ধনীদের সংখ্যা কম, গরিবের সংখ্যা বেশি। সব নিম্ন আয়ের ১ বছরের আয় সব ধনীর ১ মাসেরও আয় না।(অনুমান)
কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ধনীর টাকা কম দিয়ে সেটাকে বড় করা যায়, আর নিম্ন আয়ের মানুষদের টাকা দিতে দিতে ফতুর হতে হয়। সোজা কথা, টাকাটা যাবে সরাসরি বড় বড় রাঘব বোয়ালের পেটে, আর ১৫-২১% যাবে সরকারের কোষাগারে। সেখান থেকে ঘুরেফিরে আবার সেই বোয়াল মাছের পেটেই!
এককথায় টোটালি নিপীড়নমূলক একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুষে রাখা হচ্ছে যাতে বাজেট হলো কেন্দ্রবিন্দু। আর এই অন্যায় ও নিপীড়নমুখী ব্যবস্থা থাকলে গুটিকয়েক মানুষ নামধারী লোভী পশুর ফ্যামিলির লাভ হয়। আর রাজনৈতিক মাথাগুলো সেই ব্যাপারে নিজেদের মষ্তকগুলো(!) বিকিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। বিএনপি তো সেই কবেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, আর দুঃখজনক খবর হলো এখন আওয়ামীলীগ একই পথ ধরে হাঁটছে।
আপাতত এখানেই রাশ টেনে ধরি। কারণ পোস্ট লম্বা হইলেও সমস্যা! চলি ব্লগ ইস্যুতে।
ব্লগঃ
(আমিও আছি) এই জাতির মধ্যে কিছু সমস্যা কাটতে সময় লাগছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা অপ্রকট সেটা হচ্ছে ন্যরো মাইন্ডনেস! সামান্য কয়টা লাইক, কমেন্ট, হিট নিয়ে যে পরিমাণ কনসার্ন আমি দেখলাম তাতে কিছু ব্লগারের(!) মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন! হিট খাওয়াতে আদাজল খেয়ে অটো রিফ্রেশার ব্যবহার করে যে আনন্দ লাভ করে সেটা মানসিক অসুস্থ্যতা ছাড়া কিছু হতে পারে না। যারা তীক্ষ্ম নজর রাখে অন্য কে কে নিজের পোস্ট আলোচিত পাতায় নিল, কে নিল না তখন ব্যাপারটা ঐ ব্যক্তির মানসিক সংকীর্ণতাই প্রকাশ করে। ব্যাপারটা গ্রামের অসচেতন কেউ হলে মেনে নেওয়া যেত, যেমন ধরুন- গ্রামের কুটনিবুড়ী শ্রেণির মানুষ হলে একটা কথা ছিল।
এই টাইপ বুড়ী/মহিলারাএক পরিবারের কথা অন্য পরিবারে বয়ে নিয়ে যেতে এক প্রকার তৃপ্তিবোধ করে বলে শুনেছি। আর সে কারণেই তাদের নজর থাকে কে কি করলো না করলো। সাম্প্রতিক জি-বাংলায় শুনেছি এইরকম কুটনামি চর্চার নাটিক/সিরিয়াল চলছে।
আমি খুব বেশি অবাক হলাম যখন নিজের চোখে দেখলাম অশ্রাব্য-অকথ্য ভাষায় কথা বলা নিকগুলোর নাটক নিয়ে একজন প্রথিতযশা ব্লগার নিজের রুপ প্রকাশ করে দিলেন বস্তির কোয়ালিটির ব্লগারের ঐ পোস্টে নিজের মন্তব্যে! সেই মন্তব্য ছিল হতাশার!! কেন ব্লগ টিম নোংড়ামি কমেন্টগুলোকে মুছে দিয়ে তাদের নাটিক খেলা বন্ধ করে দিলেন!
নাটক খেলা নয়তো কী? মাল্টির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে নিজেই মাল্টি খুলে বিজনেস শুরু করলো তারা। গেমু চেঞ্জার, শায়মা, জেন রসি হয়ে কথা বলার নাম করে নিজেরা নিজেরা মারামারি কাটাকাটির অভিনয় করলো। শেষমেষ যখন ব্লগ টিম খেল খতম করে দিলেন তখনই শুরু হলো মরাকান্না! এরপর কুতকুত/পুতপুত/ভাইয়ামনিতা'র কুশীলবদের সস্নেহে ধন্যবাদ জ্ঞাপন!
এই বুঝি ব্লগিং??
হাঃ হাঃ হাঃ
এভাবেই মানুষের ভেতরের কদর্য রুপটা বের হয়। যখনই তার মাথায় হিতাহিত বোধ থাকে না, ঠিক তখনই এটা বের হয়।
আপনি বাস্তব জগত থেকে আলাদা হয়ে ব্লগিং বেশিক্ষণ করতে পারবেন না।
যাক এইসব কথা, এখন ধরুন আপনি কাউকে খুব শ্রদ্ধা করতেন, কিন্তু শ্রদ্ধা করার জায়গাটুকু যদি ভেতরের কাঁদা বের করে এনে নষ্ট করা হয় তখন তাকে আর শ্রদ্ধা করার মতো মানসিক অবস্থা কি থাকে? শুধু একজন মানুষের নিকটও আপনি খারাপ মানুষ হয়ে গেলে সেটা বিরাট একটা ক্ষতি, যদি আপনি অনুধাবন করতে পারেন।
এখন আসুন, অন্য কথা বলি। ব্লগিং কেন করবেন সেটা আপনার ইস্যু। আমি যেটা জানি- রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সায়েন্স, টেকনোলজি, ফান, ছবি, কালচার, সভ্যতা, সমাজ সবকিছু নিয়েই ব্লগিং করা যায়। তবে ব্লগিং মানে শুধু পোস্ট করেই শেষ না। বরং এটাই হলো শুরু।
আপনি যে সকল ক্যাটাগরীর পোস্ট পছন্দ করেন, সেগুলো পড়ে সেখানে আপনার ফিডব্যাক রেখে আসাটাই হলো ব্লগের প্রাণ। আর সেটা না করে শুধু পড়ে গেলে সেটা হবে ভুল।
মন্তব্য করে আপনি কখনোই দেউলিয়া হবেন না, তবে ইন্টারনেটের বিল দিয়ে হলেও হতে পারেন।
নেভার গিভ আপঃ
এই গানটা একটা অজি-ভারতীয় প্রযোজনা ছবির! পপ দুনিয়ার নামকরা শিল্পী সিয়া এই গানটি গেয়েছেন। তবে আমি যেই লিংক দিয়েছি সেটা স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের থেকে ধার করা সিন নিয়ে! সেটাই আবেদন করেছে বেশি অরিজিনাল ওটা থেকে! তবে অরিজিনাল ওটাও শেয়ার না করলে কি হবে?
এরপর আরেকটা গান ..
আসল কথায় আসি, এই ভিডিও ৩-টিতে কিন্তু একটা লোক কমন! হ্যাঁ, একজন এই তিনটি ভিডিওতেই আছেন আর তিনি হলেন ডেভ প্যাটেল!
ভাল কথা, ডেভ'কে নিয়ে এসে মুল কথা থেকে সরে গিয়েছিলাম। আসুন, আসল কথায় ফিরে যাই, লায়ন শিরোনামে একটা ছবি রিলিজ হয় গত বছর(২০১৬)। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মতো প্রিয় অভিনেতাকে দেখার পাশাপাশি অন্যতম প্রিয় শহর কলকাতা বেশ অনেকক্ষণ যাবতই দৃশ্যায়িত পাবেন যদি ছবিটি দেখেন।
তো সারো নামের দুরন্ত ছেলেটি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে খান্দওয়ায় জন্ম নেয়। গোঁ ধরে বড় ভাই গুড্ডুর সাথে নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশনে এসে সে হারিয়ে যায়! ঘুম এসে পড়াতে সে একটি ফার্স্ট ক্লাস কামরায় উঠে পড়ে যেটা পরিত্যাক্ত বলে যাত্রী ওঠানো তো বন্ধই বরং তালা দেওয়াটাই বাকি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রেলের ঐ কামরাগুলো ঠিক ঐদিনই সরানোর কথা।
ভাগ্যের রেলগাড়ি তাকে নিয়ে আসে কলকাতা! সেখানে তার কথা কেউ বুঝে না। যেখানেই যায় গলাধাক্কা খেতে হয়! টিকিট কাটার জায়গায় তার মতো ছেলেকে বাস্তবতা দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। মায়ের মতো আদর করে মুখে খাবার তুলে দেয় না। বড় ভাইয়ের মতো আদর করে ঘাড়ে তোলা তো দূরের কথা বরং চুলের গোছায় ধরে থাপড়ানোই বাস্তবতার উপহার!
ভাগ্যের চক্করে তার স্থান হয় একটা এতিমখানায়। সেখানেই ঘুরে যায় জীবনের মোড়!! যা দেখতে হলে আপনাকে ছবিটি দেখা লাগবে।
ব্রিয়েরলি নামে একজন অজি-ব্যবসায়ীর লেখা কাহিনী নিয়ে এই ছবিতে একটা ভাল চমক আছে, সেটা আমি বলে দিচ্ছি না। তবে অস্কার নমিনেটেড হওয়া অতো সহজ ব্যাপার না, সেটা অবশ্যই জানেন। নেভার গিভ আপ গানটা আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। সারো'র বাড়ি ফেরা, নাড়ি খুঁজে পাবার জন্য উদ্যম, আকাঙ্খা আপনাকে হয়তো প্রেরণা দেবে আপনার জীবনটাকে নিয়ে সাজানোর।
ছবিটার শেষে যে ব্যাপারটা পাবেন সেটা হলো নিখোঁজ মানুষদের কথা চিন্তা করে একটি সংগঠনের কথা। শুধু ভারতেই ৮০ হাজার শিশু প্রতি বছর হারিয়ে যায় নিজের পরিবার থেকে। http://www.lionmovie.com তাদের ব্যাপারটা তুলে ধরতে চেয়েছে। আপনিও ডোনেট করতে পারেন তাদের সংস্থায়!
অনেক পটর পটর করে ফেললাম। এখন ক্ষান্তি দিচ্ছি। আর যদি পোস্টের কোন অংশ আপনাকে ব্যথিত করে ফেলে তাহলে নিতান্তই দুঃখিত।
আর হ্যাঁ, আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, গেমু ব্লগ থেকে চলে যায়নি। সাময়িক ব্যস্ততার দরুন ব্লগ থেকে দুরে আছে মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:২৫