গুলিস্তান যাব।
চানখারপুল থেকে জ্যাম শুরু হল। ওদিকে বিকাশে ডোনারদের টাকাও আসতে থাকল। পৌঁছেই অর্ডার করা কম্বল গুলি ডেলিভারি নিলাম। ভ্যানে করে মোহাম্মাদপুর। মাঝে ঢাবির টিএসসি তে বন্ধুদের থেকে চেয়ে হায় নিলাম । তুষার ভাই এর সাথে কম্বল নিয়ে ভ্যানের উপর করে যেতে ভালই লাগছিল। মোহাম্মাদপুরে পরিচর্যাতে তাহসিন ভাই ওয়েট করছিলেন আমাদের হাতে শীতের কাপড় হস্তান্তর করার জন্য। গিয়ে আমি আর তুষার ভাই তো অবাক।
ও আল্লাহ!
এত কাপড়?
আর এগুলি কিভাবে নিব?
কিছু করার নাই। বড় ভাই তাহসিনের চাপে পিক আপের খোজে বেড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন বাদেই পেয়েও গেলাম। কাপড়গুলি বড় পিক আপে আমি আর পাভেল লোডিং করলাম।
বাপরে বাপ।
দুইজনেরই কোমর ধরে গেল।
পরে পিকআপের উপরেই রওনা হলাম বারিধারায়। পয়ত্রিশটা চালের বস্তা কিনলাম, কি আর করা এর মধ্যে করেই নিতে হবে যেহেতু কাপড়গুলি Unsorted ছিল। পিক আপ থেকে বাসে আনলোড লোড করতেই অনেক সময় লাগল।
এর ফাকে নাস্তা সেরে নিলাম। এটাই যে ডিনার হবে আগে জানলে ভরপেট খেয়ে নিতাম । যাই হোক এবার উত্তরা থেকে কম্বল আর কাপর নেয়ার পালা। জানিনা কি ওয়েট করছে সেখানে।
কর্নেল জাহিদ স্যারের বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করে স্যারকে ফোন দিলে জানালেন সব রেডি করা আসে ১১ নং মসজিদে। স্যার অবশ্য আসলেন আমাদের সাথে দেখা করতে। মসজিদ থেকে YDRLAB এর সদস্যরাও আমাদের সাথে বাসে উঠলেন। কিন্তু কম্বল আর কাপড় বাসের অর্ধেক এবং ছাদ দখল করায় তারা বিপত্তিতে পরলেন। কিন্তু যেহেতু সবাই অনেক আশা করে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিতে আগে থেকেই রওনা হয়েই ছিলেন তাই তওফিক ভাই কাউরেই নিরাশ করলেন না ।
DAAC এর কেউই আমাদের সাথে আলাদা করে যাত্রায় অংশ নেননি। আমি আর তওফিক ভাই দুইজনই DAAC কে রিপ্রেজেন্ট করলাম। তাদের টাকা আর কাপড় আমাদের আগেই পৌঁছে দিয়েছিল।
আমাদের যাত্রা শুরু হল ১১ টায়। উদ্দেশ্য ময়মনসিংহ হয়ে নেত্রকোনার দুর্গা পুর।
গাজিপুর থেকে আরিফ ভাইকে তুলে নিলাম। গাড়ি আর রাস্তা দুইটার অবস্থা একই রকম ছিল। এত দীর্ঘ পথ এইভাবে পাড়ি দিতে অবশ্যই বেগ পেতে হবে। ঘন কুয়াশার দেখা মিলল একটু বাদেই। ময়মনসিংহ যেতে যেতে আমার অবস্থা ডাল হালুয়া হয়ে গেল। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তুষার ভাই আর পাভেল কে কম্বল আর সোয়েটার দিয়ে বাকিরা রওনা হলাম দুর্গাপুরের দিকে।
ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘটল এক বিপত্তি।
ড্রাইভার আর আমদের গাইড কেউই রাস্তা মেলাতে পারলেন না। মাঝে এক বৃদ্ধ চাচার পরামর্শে আমরা রাস্তার শেষ মাথায় এসে দেখলাম সামনে নদী। পড়ে সবাই রাস্তা হারিয়ে ভয় পেলে গেলাম। কিছু দূর ব্যাক করে একটা জায়গায় ডাকাডাকি করে একজনকে ঘুম থেকে তুলে পথের দিক নির্দেশনা নেয়া হল। সাড়ে সাতটায় পৌঁছলাম নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার কাকড়াকান্দিতে। নাস্তা খেয়েই কাজে লেগে পড়ল সবাই। আগের ঠিক করা ব্যবস্থা অনুযায়ী শীতবস্ত্র প্রাপ্যদের ডাকা হল। দুপুর পর্যন্ত আমরা বিতরন করলাম। শিশু, নারী , পুরুষ, উপজাতি নারী, নওমুসলিমদের কম্বল সোয়েটার মোজা কানটুপি দেয়া হল।
ছবিঃ
ময়মনসিংহ ...
নেত্রকোনাঃ
কাজ শেষ এবার আমাদের পালা।
বাইক ভাড়া করা হল ছয়টা । আমরা ১২ জন ছিলাম। নেত্রকোনার কাকড়াকান্দিতে দর্শনীয় স্থান ঘোরা হল। তার মধ্যে নীল পানি, ভারতের সীমান্ত, খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল, সিরামিকের পাহাড়, আর বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি উল্ল্যেখ্য। যারা আমাদের হোস্ট করল তাদের বাড়িতে দুপুরে সেইরাম একটা ভোজ সেরে আমরা সাড়ে তিনটায় ঢাকার পথে রওনা করলাম। ময়মনসিংহ থেকে তুষার ভাই আর পাভেল কে তুলে নিলাম। রাতে বাসে কার্ড খেলার আসর বসল। রাস্তার জ্যাম থাকার কারনে আমরা ঠিক সময় আসতে পারি নাই। দেরি হওয়ার আমদের একান্ত শ্রদ্ধেয় তওফিক ভাই আমদের হোটেলে সবাইরে একটা ট্রিট দিলেন। খাওয়ার পাশাপাশি সবাই যার যার অভিজ্ঞতা শেয়ার করল। আমরা ঢাকায় রাত সাড়ে বারটায় পৌঁছলাম।
এই ছিল আমাদের South Asian Youth Society (SAYS) এর Sharing Warmth ইভেন্টের গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৭