তাওহীদবাদী সেই যুবক -১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
(শীঘ্রই প্রকাশিতব্য শিশুদের জন্য সিরীজ 'আহসানুল কাসাস' এর ৩য় খন্ড 'তাওহীদবাদী সেই যুবক ' বইয়ের লেখা প্রিয় ব্লগারদের জন্য শেয়ার করা হলো।)
হযরত সুহায়েব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, পূর্বকালে এক বাদশাহ ছিলো। তার দরবারে ছিলো একজন যাদুকর। সেই যাদুকর বৃদ্ধ হয়ে গেলে সে বাদশাহকে বললো, “আমি তো এখন বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং আমার মৃত্যুর সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি ছেলে দিন, যাকে আমি ভালোভাবে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি। যেনো আমার পর সে আপনার উপকারে আসতে পারে। যাদুকরের আবদার শুনে বাদশাহ তাকে একটি মেধাবী বালক দিলেন যাদুবিদ্যা শেখানোর জন্য। এরপর থেকৈ যাদুকর মেধাবী বালকটিকে যাদুবিদ্যা শেখাতে লাগলেন।
বালকটি তার শিক্ষাগুরুর বাড়ীতে যাওয়ার পথিমধ্যে এক সাধকের আস্তানা ছিলো। এর পাশ দিয়েই তাকে যেতে হতো। সুফী সাধকও ঐ আস্তানায় বসে কখনো ইবাদত করতেন, আবার কখনো জনগণের উদ্দেশ্যে ওয়াজ-নসীহত করতেন। কিছুদিন দেখার পর মাঝে মধ্যে বালকটিও যাবার সময় পথের পাশে দাঁড়িয়ে ইবাদতের পদ্ধতি দেখতো, কখনো ওয়াজ-নসীহত শুনতো। একারণে যাদুকরের কাছে যেতেও তার দেরী হতো এবং বাড়িতে ফিরতেও তার বিলম্ব হতে লাগলো। ফলে সে বিলম্ব করার কারণে বাড়ি ও যাদুকর উভয়ের থেকেই বকুনি শুনতো এবং মাঝে মধ্যে মারও খেতো।
তাই একদিন বালকটি সেই সাধকের কাছে তার এই দূরাবস্থার কথা বর্ণনা করলে সাধক তাকে একটি কৌশল বলে দিলেন যে, যাদুকর দেরীর কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলবে যে, মা দেরী করে বাড়ী থেকে বের হতে দিয়েছেন। বাড়িতে কাজ ছিলো। আবার মায়ের কাছে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে বলবে যাদুকর গুরুজী দেরী করে ছুটি দিয়েছেন। এমনিভাবে এ বালক একদিকে যাদুবিদ্যা এবং অন্যদিকে ধর্মীয় বিদ্যা শিক্ষা করতে লাগলো।
ঘটনাক্রমে একদিন সে তার চলার পথের এক স্থানে একটি বিরাট বিস্ময়কর কিম্ভুত কিমাকার জানোয়ার পড়ে থাকতে দেখতে পেলো। যার কারণে সেই পথের উপর দিয়ে লোকজনের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ পাশ থেকে ওপাশে এবং ওপাশ থেকে এপাশে আর যাওয়া আসা করা যাচ্ছে না। সবাই উদ্বিগ্ন ও বিব্রত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
বালকটি মনে মনে চিন্তা করলো যে, একটা বেশ সুযোগ পাওয়া গেছে। এবার পরীক্ষা করে দেখা যাক যে আল্লাহর কাছে সাধকের ধর্ম অধিক পছন্দনীয়, না যাদুকরের ধর্ম অধিক প্রিয়।
এটা চিন্তা করে সে একটি পাথর তুলে জানোয়ারটির প্রতি এই বলে নিক্ষেপ করলো যে, “হে আল্লাহ! আপনার কাছে যদি যাদুকরের ধর্মের চেয়ে সাধকের ধর্ম অধিক পছন্দনীয় হয়ে থাকে তবে পাথরের আঘাতে জানোয়ারটিকে মেরে ফেলুন। এতে করে জনসাধারণ এর অপকার থেকে রক্ষা পাবে।”
আল্লাহর কি কুদরত! পাথর নিক্ষেপের পর পরই তার আঘাতে জানোয়ারটি মারা গেলো। ফলে এরপর লোক চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
আল্লাহ প্রেমিক সাধক এই খবর শুনে তার ঐ বালক শিষ্যকে বললেন,
“হে প্রিয় বৎস! তুমি আমার চেয়ে উত্তম। এবার আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমাকে নানাভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। সে সব পরীক্ষার সম্মুখীন হলে আমার সম্মন্ধে কারো কাছে কিছু প্রকাশ করো না যেনো।”
একজন ছোট বালক কর্তৃক বিস্ময়করভাবে একটি বড় জানোয়ার নিহতের এই অলৌকিক ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো। ফলে এরপর থেকে বালকটির কাছে নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন লোকজন আসতে শুরু করলো। ঘটতে লাগলো আরো অনেক অদ্ভুত কান্ড।
বালকটির দু‘আর বরকতে জন্মান্ধ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে লাগলো। কুষ্ঠরোগী আরোগ্য লাভ করতে থাকলো। এছাড়াও আরও নানাবিধ দূরারোগ্য ব্যধি ভালো হতে লাগলো।
বাদশাহর একজন মন্ত্রী অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ খবর শুনে বহু মূল্যবান উপহার-উপঢৌকনসহ তিনি বালকের নিকট এসে হাজির হলেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে আবেদন জানিয়ে বললেন, “যদি তুমি আমার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারো, তবে এসবই তোমাকে আমি দিয়ে দিবো।”
বালকটি একথা শুনে বললো, “দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি বা ক্ষমতা আমার নেই। আমার প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ চাইলেই কেবল তা করতে পারেন। আপনি যদি তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাহলে আমি তাঁর কাছে আপনার জন্য দু‘আ করতে পারি।”
মন্ত্রী অঙ্গীকার করলে বালক তার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। এতে মন্ত্রীর দৃষ্টি শক্তি ফিরে এলো। মন্ত্রীর চোখ ভালো হয়ে গেলো। তিনি আবারও আগের মতো দেখতে লাগলেন।
এই ঘটনার পর মন্ত্রী রাজদরবারে ফিরে গিয়ে তার উপর আরোপিত কার্যাবলী যথারীতি পালন করতে লাগলেন। কিন্তু অন্ধ মন্ত্রীর চোখ ভালো হয়ে গেছে, তিনি দেখতে পাচ্ছেন -এই ঘটনা বাদশাহকে আশ্চার্যান্বিত করে তুললো। তিনি মন্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার চোখ ভালো হলো কি করে? কে আপনার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে?”
মন্ত্রী বললেন, “আমার প্রতিপালক, প্রভুই আমাকে আমার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। তার কারণেই আমি আবারও দেখতে পাচ্ছি।”
বাদশাহ বললো, “আরে! তোমাদের প্রভু তো আমি। আমি ছাড়া আরো প্রতিপালক তুমি কোথায় পেলে?”
মন্ত্রী বললেন, “আপনি হবেন কেনো? বরং আমার আপনার প্রভু, সকলেরই প্রতিপালকই একজন। তিনি এক এবং অদ্বিতীয় ইলাহ। সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে রব ও ইলাহ হওয়ার ক্ষেত্রে আর কেউ শরীক নেই।”
একথা শুনে বাদশাহ ক্ষেপে গেলেন। তিনি ক্রোধের আগুনে উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলেন, “তাহলে আমি ছাড়াও আপনার অন্য প্রভু আছে?”
মন্ত্রী বললেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি আমার এবং আপনার উভয়েরই প্রভু ও প্রতিপালক।”
বাদশাহ তখন মন্ত্রীকে নানা প্রকার উৎপীড়ন করতে লাগলো। শাস্তি দিতে শুরু করলো এবং নির্যাতন করে জানতে পারলো যে, মন্ত্রী এটা সেই বালকের মাধ্যমে পেয়েছে। এক আল্লাহর সন্ধান এবং এক রবের ইবাদতের এই তাওহীদের মর্ম সেই বালকই তাকে শিক্ষা দিয়েছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সমস্ত জগৎবাসীর এক এবং অদ্বিতীয় ইলাহ মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে।
এবার বাদশাহ তার দরবারে সেই বালককে ডেকে পাঠালেন। বালক তার দরবারে আসলে বাদশাহ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, “তুমি তো দেখছি যাদুবিদ্যায় খুবই পারদর্শিতা অর্জন করেছো। অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছো এবং দূরারোগ্য ব্যধি আক্রান্ত রোগীদেরকেও আরোগ্য দান করছো”
বালক তখন বিনীতভাবে জানালেন যে, “বাদশাহ এটা ভুল কথা। আমি কাউকেও সুস্থ্য করতে পারি না, যাদুও করতে পারি না। সুস্থতা দান করা এবং আরোগ্য করা একমাত্র আমার আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যাকে চান, সুস্থতা দান করেন।”
বাদশাহ বললো, “তুমি কি আমার কথা বলছো? কারণ দেশের সব কিছু তো আমিই করে থাকি। আইন প্রণয়ন, জনগণকে দিক-নির্দেশনা প্রদানসহ সমগ্র দেশবাসীকে তো আমিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকি।”
বালক বললো, “না না এটা কখনই নয়। আপনি তো কেবলমাত্র এই ভুখন্ডের একজন শাসক। আল্লাহর সাথে আপনার ক্ষমতার কোনো তুলনায় চলে না।
বাদশাহ বললো, “তাহলে কি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বলে স্বীকার করো?”
বালক বললো, “হ্যাঁ, আমার এবং আপনার প্রভু একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। মহান আল্লাহই আমাদের সকলের একমাত্র রব। তিনিই আমাদের ইলাহ।”
এবার বাদশাহ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। সে বালকের উপর নির্যাতন করতে লাগলো। তাকে জিজ্ঞাসা করলো সে কোথা হতে, কার কাছ থেকে তাওহীদের এই কথা শুনেছে। কে তাকে মহান আল্লাহর কথা শিখিয়েছে। অনেক নির্যাতনের ফলে এক সময় বালকটি সেই সাধকের কথা বলে দিতে বাধ্য হলো।
এবার রাজদরবারে ডেকে আনা হলো সেই সাধককে। বাদশাহ সাধককে লক্ষ্য করে বললো, “তুমি তোমার বিশ্বাস থেকে ফিরে আসো। এই ভূখন্ডে আমিই রব। আমি ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করলে আমি কঠিন শাস্তি দিবো। তুমি তোমার ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে আমাকেই প্রভু হিসেবে গ্রহণ করো। অন্যথায় তোমাকে মর্মান্তিক শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।”
মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে একবার যে মুসলিম চেতনা ধারণ করেছে, সে কি আর কুফর ও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে? একবার যে জমজমের অমীয় সূধার স্বাদ পেয়েছে, সে কি আর লবণাক্ত তিক্ত পানির কাছে যেতে পারে?
কখনই নয়, তাই তো সাধক বাদশাহর প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানালেন। একমাত্র রব এবং ইলাহ হিসেবে মহান আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে মেনে নিতে অপারগতার কথা জানিয়ে দিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চিত্ত্বে। আপন প্রভু ও রব হিসেবে মহান আল্লাহর উপর আনয়নকরা তাওহীদের সেই একনিষ্ঠ বিশ্বাসের উপরই অটল-অবিচল রইলেন তিনি। ফলে বাদশাহ তার উপর নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করলো। জুলুম-নির্যাতনের ষ্টিম রোলার চালালো এবং পরিশেষে তাঁকে করাত দ্বারা চিঁড়ে দু’টুকরো করে শহীদ করে দিলো।
চলবে...
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন