মসজিদে নববী নির্মাণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পূর্ব প্রকাশের পর:
মসজিদে নববী নির্মাণ
মদীনায় এসেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানকার মুসলমাদের জন্য সর্বপ্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন তীব্র্রভাবে। ইতিপূর্বে মদীনায় মুসলমানদের ইবাদত করার জন্য নির্দিষ্ট কোন ঘর বা মসজিদ ছিলনা। মুসলমানগণ নামায ও অন্যান্য ইবাদতসমূহ নিজ নিজ ঘরেই আদায় করতেন। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আসার পর মুসলমানদের ধর্মীয় সামগ্রীক বিষয়াদী এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য কেন্দ্ররূপে ব্যবহারের উদ্দেশ্য একটি মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি সব কিছুর উপর প্রাধান্য দিলেন। এজন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থান হিসাবে তাঁর উষ্ট্রী ‘আল কাসওয়া’ মদীনায় এসে সর্ব প্রথম যে স্থানটিতে বসেছিলো সেটিকেই নির্বাচন করলেন।
জায়গাটা এতোদিন উট বাঁধা ও খেজুর শুকাবার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এর মালিক ছিলো দু’জন ইয়াতীম বালক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মাণের মনস্ত করে বালকদ্বয়কে ডেকে পাঠালেন এবং স্থানটি মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু ইয়াতিম বালকদ্বয় বিনামূল্যে জায়গাটি মসজিদের জন্য দিয়ে দিতে চাইল। তাঁরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বলল-
“হে আল্লাহর রাসূল! এই সামান্য জায়গার জন্য কোন মূল্যের প্রয়োজন নেই। আমরা এটি আল্লাহর ঘরের জন্য দান করে দিলাম।”
কিন্তু বালকদ্বয় পরিণত বয়সের(বালেগ) না হওয়ায় রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এই দান কবুল করলেন না। বললেন, “না। তা হয় না। তোমরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক, এতীম। বিনামূল্যে তোমাদের এ জমি নেয়া যায় না।”
পরিশেষে জমির দাম নির্ধারণ হলো। রাসূলের নির্দেশে হযরত আবু বকর রা. জমির নির্ধারিত মূল্য দশ স্বর্ণ মুদ্রা এতীম বালকদের পরিশোধ করে দেন। অতঃপর মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হলো। প্রথমেই মসজিদের জায়গাটি পরিস্কার করা হলো। পুরনো খেজুর গাছের গুড়ি উঠিয়ে অন্যত্র ফেলে আসা হয়। অত:পর জায়গাটিতে মাটি ফেলে সমান ও ভরাট করা হয়। এরপর শুরু হয় মসজিদ নির্মাণের মূল কাজ। প্রথমে মসজিদের চার পাশে তিনহাত মাটি খনন করে পাথর ও চুন দিয়ে ভিত্তি গাঁথা হয়। সর্ব প্রথম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে পাথর দ্বারা ভিত্তি স্থাপন করেন। অত:পর হযরত আবু বকর রা., হযরত উমর রা., হযরত উসমান রা., হযরত আলী রা. পর্যায়ক্রমে রাসূলের নির্দেশে একেরপর এক পাথর স্থাপন করেন। তাঁরপর সেই ভিত্তির উপর কাঁচা ইটের দেয়াল তোলা হয়। তাঁরপর খেজুর গাছের খুঁটি এবং শাখা বিছিয়ে তাঁর উপর কাদা-মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাদ তৈরী করা হয়।
মসজিদ নির্মাণের এসকল কাজে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সাহাবীদের সাথে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাহাবীদের সঙ্গে মসজিদ নির্মাণ কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন সার্বাত্মক অংশগ্রহণ সকলের মাঝে আগ্রহ উদ্দীপনার জোয়ার তোলে। সকলের একই বক্তব্য, একই অভিব্যক্তি -যে কাজে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীক হয়েছেন, আমরা তাঁর থেকে ফিরে থাকি কিভাবে?
তাই সকলেই একযোগে মসজিদ নির্মাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দেখা গেল সাহাবায়ে কিরাম ইটের বোঝা বয়ে আনছেন, তো রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বালুর মিশেল তৈরী করছেন। সাহাবীগণ ছাদের জন্য খেজুর পাতা প্রস্তুত করছেন, তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের দেয়ালের জন্য ইট বহন করে আনছেন।
মসজিদ নির্মাণ চলাকালীন একজন সাহবী দেখলেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতো বেশী পরিমাণ ইট একত্রিত করে নিয়ে যাচ্ছেন যে, বোঝাটা তাঁর সিনা বরাবর হয়ে গেছেন। তাই সাহাবী অগ্রসর হয়ে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এতো ভারি বোঝা আপনি বহন করছেন! আমাকে দিন। আমিই পৌঁছে দেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “ইট তো আরো আছে তুমি সেগুলো আনো গিয়ে। এ কয়টা আমাকেই বহন করতে দাও।”
এমনিভাবে সাহাবীরা সকলে প্রিয় রাসূলের সাথে কাজ করতেন আর সমবেত কন্ঠে আগ্রহ-উদ্দীপনা জাগ্রতকারী, ভাব সৃষ্টিকারী সঙ্গীত গাইতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাদের সাথে সূর মেলাতেন।
“আল্লাহুম্মা লা খাইরা ইল্লা খাইরাল আখিরাহ। ফাগফিরিল আনসারা ওয়াল মুহাজিরা।”
“হে আল্লাহ! পরকালের কল্যাণ ই তো প্রকৃত কল্যাণ, পরকালের সফলতাই তো প্রকৃত সফলতা, তাই হে প্রভূ! তুমি আনসার ও মুহাজির সাহাবীদের সকলকে ক্ষমা করে দাও।”
এমনিভাবে দেখতে তৈরী হয়ে গেল মসজিদে নববী। কাঁচা ইট দ্বারা মসজিদের ভিত্তি নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির সময় পানি গড়লে তাতে কাদা হয়ে যেতো।
একদিন সাহবীগণ নামায পড়তে আসার সময় কিছু প্রস্তর খন্ড নিয়ে আসেন এবং সেগুলো বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যবস্থা পছন্দ করলেন এবং প্রস্তর খন্ড বিছিয়ে সমগ্র মেঝেটিকেই উচুঁ করে নিলেন। মসজিদের ছাদও ছিলো কাদা-মাটির প্রলেপ দেয়া, ফলে বৃষ্টি হলেই সমস্ত মসজিদ কর্দমাক্ত হয়ে যেতো। সাহাবীগণকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কাদার মধ্যেই নামায আদায় করলেন ফলে তাঁর পবিত্র রলাট ও দাঁড়িতে কাদা লেগে গিয়েছিল। সাহাবীগণ এই দৃশ্য দেখে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করলেন। পরস্পরে চাঁদা তুলে সেগুলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে পেশ করে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা চাই মসজিদের পাকা ইমারত হোক। আপনাকে যেন আর বৃষ্টিতে ভিজে নামায আদয় করতে না হয়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এই অনুভুতি লক্ষ্য করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। কিন্তু এই বলে মসজিদ পাকা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন যে, “আমার ভাই হযরত মুসা আ. যেরূপ কুটির নির্মাণ করে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন, আমি তাঁর চাইতে জমকলো কোন ইমারত নির্মাণ করতে চাইনা। তাঁর কুটিরের উচ্চতা ছিলো মাত্র সাড়ে দশ ফুট। তিনি যখন দাঁড়াতেন তখন ছাদে গিয়ে তাঁর মাথা ঠেকত। আর হযরত জিব্রাঈল আ.ও আমাকে আল্লাহর তরফ থেকে এ পরামর্শই দিয়েছিন।”
কাঁচা ইটের দেয়াল ঘেরা, খেজুর কাঠের খুটির উপর খেজুর পাতার ছাদ দেয়া, মেঝেতে কাঁকর আর মাটি দিয়ে তৈরী এই ছোট্র ঘরটিই স্বল্পসংখ্যক সাহাবায়ে কিরামের আন্তরিক কামনা আর সরওয়ারে কায়েনাতের মুবারক দোয়ার বরকতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মসজিদে পরিণত হলো। মণিমুক্তা খচিত কারুকার্জ, আকশচুম্বি সুউচ্চ মিনারা বা বাহারী রঙ্গের নয়নাভিরাম গম্বুজের রূপ-জৌলুস হীন সাদামাটা এই মসজিদটি অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই এমন সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো, যার সামনে রোম-পারস্যের সুউচ্চ অট্রালিকা আর রূপ-জৌলসের জোয়ার বইয়ে দেয়া গগণচুম্বি রাজ প্রাসাদসমূহও মাথা নতো করে নিতো। বাহ্যিক্যভাবে এই মসজিদ অতিসাধারণ, আড়ম্বরহীন হলেও সামান্য সময়ের ব্যবধানে এই মসজিদের খেজুর কাঠের খুঁটি আর তাঁর চারপাশের কাঁচা ইটের দেয়াল সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে এমন প্রচন্ড শক্তিধর প্রতিয়মান হতে লাগলো যে, তাঁর এবং তাঁর অধীবাসীর মোকাবেলায় নামার পূর্বে রোম-পারস্যের প্রতাপশালী সম্রাটগণ এবং তাদের খ্যাতনামা সব সমর কুশলি সেনানায়কগণ পর্যন্ত কমপক্ষে দশবার ইস্তেখারা করে নিত।
মসজিদে নববী নির্মাণের সময় তাঁর কিবলা রাখা হয় বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। এরপর যখন কিবলা পরির্বতন হয়ে কাবার দিকে দিক নির্ধারিত হয় তখন উত্তর দিকে একটি নতুন দরজা খোলা হয় এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।
ইতিহাস খ্যাত এই শ্রেষ্ঠ মসজিদটির নির্মাণকাল ছিলো প্রথম হিজরীর রবিউল আউয়াল মোতাবেক, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নির্মাণের সময় এর আয়তন ছিলো উত্তর-দিক্ষিণে ৭০ হাত এবং পূর্ব পশ্চিমে ৬০ হাত। অবশ্য পরবর্তী সময়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এর পূণ:নির্মাণ করেন। প্রতিবার নির্মাণেই এর আয়তন বাড়তে থাকে। যার ফলে বর্তমান মসজিদে নববী শরীফের এরিয়া ১৬৫,০০ বর্গ মিটারে এসে উপনীত হয়েছে।
মসজিদে নববী নির্মাণের পর তাঁর পাশেই খেজুর শাখার ছাদ বিশিষ্টি আর একটি কুটির নির্মাণ করা হয়। এটা ছিলো একেবারে নি:স্ব মুহাজিরদের আশ্রয়স্থল। এর নাম দেয়া হয় ‘সুফফা’।
এরপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবারবর্গের থাকার জন্য মসজিদের পাশেই দু’টি ঘর নির্মাণ করা হয়। কেননা, তখন পর্যন্ত রাসূলের সহধর্মীনী ছিলেন দু’জন, হযরত সাওদা ও হযরত আয়েশা রা.। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন ঘরের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। কিন্তু এ সকল ঘরের প্রত্যেকটিও মসজিদে নববীর মতো কাঁচা ইট ও খেজুর গাছের পাতা দ¦ারা তৈরী ছিলো।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য মসজিদের পাশে স্বতন্ত্র ঘর নির্মাণ হয়ে গেলে তিনি হযরত আবু আইউব আনসারী রা. -এর বাড়ী থেকে সেখানে চলে যান এবং হযরত জায়েদ ইবনে হারিসা ও তাঁর সেবক আবু রাফে উবায়দা ইবনে হারিসা রা. কে ৫০০ দিরহাম ও দু’টি উট দিয়ে মক্কায় প্রেরণ করেন। তাঁরা মক্কায় গিয়ে সেখান থেকে রাসূলের দুই কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম রা. ও হযরত ফাতিমা রা. এবং রাসূলের সহধর্মীনী হযরত সাওদ রা. কে মদীনায় নিয়ে আসেন। এর মধ্যে হযরত আবু বকর রা. এর ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রা. মক্কায় গিয়ে হযরত আবু বকর রা.-এর পরিবারের লোকদেরকেও মদীনায় নিয়ে আসেন। যাদের মধ্যে হযরত আয়শা রা.ও ছিলেন। এভাবে দেখতে দেখতে এক সময় প্রায় সকল মুসলমানই মদীনায় চলে আসেন। শেষ পর্যন্ত মক্কায় কেবল সেই সব মুসলমানই ছিলেন, যারা রোগক্রান্ত, দূর্বল ও অসহায় হওয়ার কারণে কিংবা কাফিরদের হাতে আটক থাকার কারণে হিজরত করতে সম্পূর্ণ রূপে অক্ষম ছিলেন।
আযানের সূচনা হলো যেভাবে...
এভাবে একে একে সকল মসলমান যখন মদীনায় এসে পড়লেন, অপরদিকে মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজও সমাপ্ত হলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামদেরকে সাথে নিয়ে নিয়মিত জামাত সহকারে সালাত আদায় করা শুরু করলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সাহাবীদেরকে সালাত আদায় করার জন্য একত্রিত করার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম-পদ্ধতি না থাকার কারণে সবাই জামাতের সাথে সুশৃংখলভাবে সালাত আদায় করতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে লাগলো। যেমন অনেকে সালাতের সময়ের অনেক পূর্বেই মসজিদে চলে আসতেন। আবার অনেকে সালাতের সময়ের অনেক পরে আসতেন। যার ফলে অসুবিধার সৃষ্টি হতো। এই উদ্ভুত সমস্যার সমাধনের জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে একটি পরমার্শ সভা ডাকলেন। সভায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ তলব করলেন। তখন সাহাবীদের একেকজন একেক ধরনের পরামর্শ পেশ করলেন। কেউ বললেন, সালাতের সময় মসজিদে একটি পতাকা উড়িয়ে দেয়া হোক। এ পতাকা দেখে লোকজন সালাতের জন্য আগমন করবেন।
আবার কেউ কেউ সালাতের কথা ঘোষণার জন্য খৃস্টানদের হতো ঘন্টা ধ্বনি, ইহুদীদের মতো শিংগা নিনাদ বা পারসিকদের মতো অগ্নিপ্রজ্জলনের পরামর্শ দিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোনটি গ্রহণ কলেন না। পরিশেষে হযরত উমর রা. প্রস্তাব পেশ করলেন যে, সালাতের সময় একজন লোক পাঠিয়ে সকলকে ডেকে আনলে কেমন হয়? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাল্লাম এই প্রস্তাব পছন্দ করলেন এবং হযরত বেলাল রা.-এর দ্বারা ‘আস সালাতু জামেয়াতুন’ বা ‘ “সালাতের জামা’আতের জন্য সকলে সমবেত হও।” এই ঘোষণা প্রচার করলেন। এরপর স্বপ্নযোগে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা., হযরত উমর রা. এবং এক রেওয়ায়েতের অনুসারে স্বয়ং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বর্তমানে প্রচলিত আযানের শব্দাবলী শ্রবণ করেন।
রাত শেষ হওয়ার পূর্বেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা. রাসূলের কাছে এসে রাতে দেখা তাঁর স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে হযরত উমর রা.ও এসে একই ধরণের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহীর মাধ্যমে জানতে পারেন যে, উক্ত স্বপ্ন সত্য। তাই তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা. কে আযানের শব্দগুলো হযরত বেলাল রা. কে শিখিয়ে দিতে বললেন এবং হযরত বিলাল রা. কে আযান দিতে বললেন, এভাবে আযানের সূচনা হলো এবং নামযের জন্য মুসলমানদেরকে একত্রিত করতে গিয়ে যেই সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিলো তার অবসান হলো।
চলবে.. পরবর্তী পর্ব: মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠন
পূর্বের লেখা:
রাসূল সা. এলেন মদীনায়
রহস্যে ঘেরা মদীনা:
মদীনায় অবস্থানকারী জাতি-গোত্রসমূহ
ঈমানের আলোয় আলোকিত হৃদয়
নির্মিত হলো কুবা মসজিদ
সৌভাগ্যের রহস্য
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন