১। বর্তমান আইসিটি ডিভিশনকে আমরা যে অবস্থায় পেয়েছি (কোন অফিশিয়াল হ্যান্ডওভার ছিল না), তাতে নাগরিক হয়রানির কোন টুল, কোন প্রসেস আর কার্যকর নাই। ভিতরে এসে ইনভেস্টিগেট করার জন্য আমরা নাগরিক প্রতিনিধি, আইটি এক্সপার্ট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমরা এখন সোস্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছি না।
২। হাসিনা জয় পলক জব্বাররা কাদের দিয়ে, কোন মেকানিজমে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতো সেই মেকানিজম আমরা জানি না। তবে কোন কোন পেইজ থেকে তারা শত শত কোটি টাকা ফেইসবুকে ইনভেস্ট করেছে তার কিছু হিসাব বের করা হয়েছে।
৩। বর্তমান সরকার কোন বট বাহিনী পালবে না। এসব অপখরচ করে জনতার মতামত নিয়ন্ত্রণ আমরা করবো না।
৪। ফেসবুক কমেন্টের সূত্র ধরে, কোন নাগরিকের লোকেশন বের করে তাকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা- বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিবিরুদ্ধ। আওয়ামীলীগ আইসিটিতে যা করে গেছে সেসবের চর্চা আমরা করবো না।
প্রথমত, বর্তমান আইসিটি বিভাগের, এই সক্ষমতা নেই। আগে ছিল কিনা, তারা সেসব স্ক্র্যাপ করে গেছে কিনা, তা জানার সূযোগ নাই আমাদের। আমরা শুনেছি ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের পেছনের বাড়িতে সিআরআই এর কিছু সেটাপ ছিল বা এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসানের বাড়িতে এমন সেটাপ ছিল, বিভিন্ন এলইএ'র ছিল।
দ্বিতীয়ত, অন্য কোন বিভাগের এই সক্ষমতা থাকলেও আমরা সেটার প্রয়োগ করার বিরুদ্ধে। এটা অপরাধের সমতুল্য।
৫। আইসিটি ডিভিশন, কিংবা বিটিআরসি কারো পোস্ট রিমুভ করা, সোশ্যাল মিডিয়া আইডি গায়েব করা, কমেন্ট ডিলিট করা - ইত্যাদি কাজ করতে আইনি এবং কারিগরি ভাবে অক্ষম।
৬। আইসিটি রেগুলেটর নয়। বিটিআরসি রেগুলেটর। তবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং টেক জায়ান্ট রেগুলেটর নয় বিটিআরসি। বিটিআরসির মাধ্যমে আইসিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইউটিউব ফেসবুক মেটাকে গুগলকে জানাতে পারে মাত্র।
বিটিআরসির এই রিকোয়েস্ট তারা কখনো শুনে, কখনো শুনে না। অর্থাৎ তারা বাধ্য না, কিছু ক্ষেত্রে তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে মিললে তারা শুনে।
৭। নতুন সাইবার সেইফটি আইনে সরকারের অনুরোধে কোন কনটেন্ট ব্লক হলে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে সেটা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
৮। বিগত সরকারের সময়ে ফেসবুক/মেটা, গুগল/ইউটিউব কোন বিশেষ বন্দোবস্তের মাধ্যমে কাজ করেছে কিনা সেটা আমরা জানি না। আমরা জানতেও চাই না। আমরা জব্বার পলকদের ঘন ঘন তাদের সাথে বসতে দেখেছি। মেটা/ফেইসবুক বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরা এটা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৯। ফেসবুক/মেটা, গুগল/ইউটিউব টিকটক সহ টেক জায়ান্টদের সাথে যখন আমরা বসি, কারো কারো লোকেশন সরকারকে জানানো, অ্যাডমিনদের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার জানতে চাওয়া নিয়ে বসি না।
১০। আমাদের ফোকাস দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো, ইন্টারনেট সেইফটি, ডিজিটাল ইকোনমির সিকিউরিটি। আওয়ামী পলিসিতে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, এর পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ আছে। ৭,২ টেরাবাইটের সাবমেরিন ক্যাবল (সিমিউই-৪, সিমিউই-৫ মিলে) সক্ষমতার মাত্র ২,৭ টেরাবাইট ব্যবহার হচ্ছে। বাকিটা আইটিসি দিয়ে আসছে। এতে দেশের ইন্টারনেট সিঙ্গেল পয়েন্ট অফ ডিপেন্ডেন্সিতে পৌঁছে যাচ্ছে।
এই যে বিদেশ থেকে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে ৯০% বা বেশি তথ্য ভারতীয় সোর্স থেকে দেখানো হয়, তার একটা কারণ হতে পারে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ট্র্যাফিক এর যে অংশ, প্রায় ৭০ শতাংশ আইটিসি দিয়ে কলকাতা বা অন্য ভারতীয় শহর দিয়ে আসে, এবং এই ট্রাফিকের ডিপ প্যাকেট ইনস্পেকশন বলুন কিংবা ইন্টারনেট মেডিয়েশন সার্ভার- সেসব কিন্তু ভারতে অবস্থিত। ফলে আজকে আমাদের ইন্টারনেটের উপরে আমাদের সত্যিকার নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা ডিজিটাল এরিনায় আওয়ামী লীগের গোলামি নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
১১। তাই কীভাবে ভারত থেকে সিডিএন, ক্যাশ সার্ভার কিংবা এজ রাউটার/সার্ভার বা পপ গুলো, মেডিয়েশন সার্ভার বাংলাদেশে আনা যায়। ডেটা সেন্টার কীভাবে দেশে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করছি।
অর্থাৎ বাংলাদেশের ইন্টারনেটে সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার উপরে আমরা মনোযোগী। পেইজ, আইডি, কমেন্ট ব্লক, লোকেশন ট্র্যাক করে জন হয়রানি ইত্যাদি নিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের অফিস কাজ করছে না।
আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফেরাতে সংগ্রাম করেছি। এর সুফল সবাই ভোগ করবে। মানুষ আমাদের তীব্র সমালোচনা করবেন, সেটা আমরা শুনছি, যা পারছি আমলে নিচ্ছি। এটাই গণ আন্দোলনের সৌন্দর্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০