somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত জাগা তারার গল্প

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ একটা বিষন্ন সকাল, শীতের দিনের এই সকালটায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। শীতের তীব্রতাও বেড়ে গেছে। এমন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠায় সকালটাই আজ বিষন্ন লাগছে। এলার্ম ঘরিটার আওয়াজটা যদিও সুরময়, তবুও ইচ্ছে করছিল জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে! এখনো কেমন অন্ধকার লেপ্টে আছে চারপাশে। জানলার ওপাশের বৈদ্যুতিক তারে কাকগুলো ঠায় বসে আছে, খেটে খাওয়া মানুষের পদচারনা বাড়ছে ক্রমাগত সামনের রাস্তায়। বৃহত্তর আরামের স্বার্থে ঐ কাক, আমি আর রাস্তার মানুষগুলো এভাবেই আজকের দিনটি শুরু করছি।
দশটায় চাকরির একটা পরীক্ষা আছে, বাসা থেকে বের হতে হবে আটটার ভেতরে। বিকেলে মুনিয়ার সাথে ঘুরতে বের হতে হবে, সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠান আছে। রাজ্যের এতো কাজ বছরের প্রথম দিনটাতে কেন এসে এক জায়গায় মিলে গেল তাই ভাবছি। অবশ্য মুনিয়ার সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি, আজ তাকে সময় দেয়া দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে এসে পেটপুরে পানি খেয়ে নিলাম, সকালে কিছু খাবারের ব্যবস্থা রাতেই করে রাখা উচিত ছিল। ধুর, এতো কিছু করতে ভাললাগেনা। জামা-জুতো পড়ছি আর মাকে মনে করছি, মা থাকলে নিশ্চয়ই না খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে দিত না! যদিও এই ভাবনাটা নতুন কিছুনা, একযুগ থেকে পরীক্ষার আগে প্রতি সকালবেলা এটা ভেবে বের হই। শীতের এই হালকা ঠান্ডা বাতাসের সাথে আজ এক মৃদু অভিমান এসে ভর করলো আমার সে ভাবনায়।

এখান থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় লোকাল বাস। সিএনজিতে উঠতে আজকাল মোটা ওয়ালেট লাগে; আর কিছুদিন পর হয়তো কোট-টাই ছাড়া সিএনজি ওয়ালাদের সাথে কথাই বলা যাবে না! আসলে ওদেরই বা দোষ কী, সব কিছুই তো কুক্ষীগত ক্ষমতা ও সম্পদ আহরনের ফলাফল। একটি চক্রধারায় আবদ্ধ শোষক, শোষিত ও নিষ্পেষিত শ্রেণী। অবশেষে লোকাল বাসে চ্যাপ্টা হয়ে আর বিনামূল্যের মূল্যবান সাধারন নাগরিক মন্তব্য শুনতে শুনতে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হলাম।
পরীক্ষা দিলাম, পরীক্ষা দিতে হবে তাই। পাঁচটা পদের জন্য দুই হাজার পরিক্ষার্থী, টপ পনেরোতে যাওয়ার নম্বর দরকার। কেমন যেন জুয়া খেলার মতোন, ভাগ্য সহায় হলেই ঐ টপ পনেরো, ভাইভায় আরেকটু ভাগ্য সহায় হলে টপ ফাইভ - মানে কাংখিত চাকরি! খাতা কলমের যুদ্ধ শেষে নত মস্তিষ্কে পরবর্তী দিবাস্বপ্নের জন্য প্রস্তুতির কথা ভেবে বাসায় ফেরার গাড়িতে উঠলাম। সকালে মুনিয়াকে ফোন করা হয়নি, ওর ঘুম ভাঙ্গাতে চাইনি তাই। একটা ফোন দেয়া দরকার, এখনো মনে হয় ও ঘুমাচ্ছে......।

কপালে ছোট কালো টিপ পড়েছে মুনিয়া, অদ্ভূত সুন্দর লাগছে। রিক্সায় পাশে বসে কিছুটা লজ্জা মিশ্রিত মিটিমিটি হাসছে। মিশ্র জীবনের সংঘাত ছেড়ে এই মুহূর্তটি জীবনের বড় প্রাপ্তি বলেই মনে হচ্ছে। বাইরের জগৎটা ওর কাছে তেমন পরিচিত নয়; ওর বিস্মত চোখ কিংবা প্রশ্নভরা মুখ দেখতে ভাল লাগে সর্বদাই। আমি চাই মুনিয়া সবসময় থাক এই বিস্ময়ে, বাইরের কঠিন হিসেব নিকেষের জগৎ থেকে সে তার আপন জগতে ভাল থাক। তার অভিমান ভরা মুখ কিংবা হাসি চিরদিন থাক অমলিন। মুনিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফিরেছি একটু আগে, এবার রাতের নিমন্ত্রণের জন্য তৈরী হওয়ার পালা। মানুষের বাহ্যিক রূপটা অনেক ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় পরিচয় বহন করে। আমার অগুছালো পরিধেয়ের সাথে অপরিপাটি চুলের জন্য অতীতের অনেক অবহেলা বুকে বিঁধে আছে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিজেকে এবার প্রস্তুত করার পালা!
বছরের প্রথম দিন বলেই হয়তো সবকিছু জমকালো লাগছে, অথবা প্রতিদিনই এরকম থাকে যার খবর আমার অজানা। মানুষের আনন্দ আয়োজন ও রঙবাহার - অপচয়ের ভেতরে ফেলার স্পর্ধা আমার নেই। তবুও এতো এতো আলোকসজ্জা দেখে কখনো মনে হয়না একটা গরীব দেশে বাস করি। আনন্দ আয়োজন আর সামর্থ্য এই দুইটা হয়তো সমানুপাতিক। গন্তব্যের সে দাওয়াতে সহস্র বছর অভুক্ত থাকার মতো করে পেট পুরে খেতে খেতে রাত এগারোটা বেজে গেল। বাসায় ফেরার চিন্তা মাথায় মধ্যে দূরারোগ্য ব্যাধির মতো নিমিষেই ছড়িয়ে গেল।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ধীরে চলমান একটা লেগুনাতে উঠে বসলাম। খামারবাড়ি মোড়ে নামলাম আধ ঘন্টা পর। রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। মনে গান একটা এলো, মুনিয়া হয়তো ফোনের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে এতোক্ষনে। গানটা গুন গুন করে গাইছি, সুর বাজছে মনের ভেতর। আনমনে উদাসিন রাস্তা পার হচ্ছি মিরপুর যাবো বলে। হঠাৎ একটা বাস পাশ থেকে ঠিক অক্ষিগোলকের সামনে চলে এলো নিশ্চুপ নিরবতায়। দামি খাবারগুলো বুঝি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হবে এবার! এতো সাধের পরিধেয়টাও বুঝি নষ্ট হয়ে গেল! হায় ঈশ্বর, সবার মুখগুলো এমন কান্না কান্না ও অস্পষ্ট মনে পড়ছে কেন! আর একটু, আর একটু সময় চাই অভিমানী, শ্রদ্ধার ও আদরের সব মুখগুলো একটি বার মনে করার জন্য। আর একটু সময় চাই শুধু কল্পনায় একটিবার নিমগ্ন আলিঙ্গনের, আর একটু সময়......!!

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে গানটা ধীরে ধীরে বাজতে বাজতে একসময় স্তব্ধতায় বিলিন হয়ে গেল......!!!

আমার ভিনদেশী তারা, একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা, আমার চিলেকোঠার পাশে।
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে, তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে, তোমার গল্প বলো কাকে?
আমার রাতজাগা তারা, তোমার অন্যপাড়ায় বাড়ি
আমার ভয় পাওয়া চেহারা, আমি আদতে আনাড়ি।

আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি, কিছু মিথ্যে বাহাদুরি।।
আমার চোখ বেঁধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতোই ভাল, আমি একলাকী পথ হাঁটি।

আমার বিচ্ছিরি এক তারা, তুমি নাওনা কথা কানে
তোমার কিসের এতো তাড়া - রাস্তা পার হবে সাবধানে!
তোমার গায়ে লাগেনা ধূলো, আমার দু'মুঠো চালচুলো
রাখো শরীরে হাত যদি, আর জল মাখো দুই হাতে -
প্লিজ ঘুম হয়ে যাও চোখে, আমার মন খারাপের রাতে।
আমার রাতজাগা তারা, তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
আমি পাইনা ছোঁতে তোমায়, আমার একলা লাগে ভারী।।।






সতর্কতা: সাবধানে দেখেশুনে পথ চলুন।




সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৭
৮০টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×