
এই অসময়ে মুভি দেখার কোনো প্ল্যানই ছিলনা। ঘর পুরা ডাস্টবিন হয়ে আছে ক’দিন পরিষ্কার না করাতে। এখনো রান্না করিনি। আগামীকাল ক্লাস আছে দু’টো, তার কিছুই রেডী করিনি। ইস্ত্রী করার জন্যে কাপড় পরে আছে অনেকগুলো। ফ্রিজেও বাজার শেষের দিকে।এদিকে সুপারভাইজার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন চ্যাপ্টারটা শেষ করতে……… এত লম্বা কাজের লিষ্টের পরও ইমরান ভাইয়ার পাঠানো মুভি বিষয়ক মেইলটাতে ‘দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রিপড পাজামাস’ মুভিটার লিংক সহ লেখাটা দেখে কেন যেন মনে হলো, আচ্ছা কাজ করতে করতেই মুভিটা ডাউনলোড করি। ডাউনলোড শেষে মনে হলো আচ্ছা, দেখি কেমন একটু, দুই মিনিটের বেশী দেখবোনা।
দুইমিনিট গড়িয়ে গেছে কখন… ব্রুনো’র সাথে সাথে কখন যেন আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে যাচ্ছি শ্মুয়েলের সাথে… আমাদের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া… ব্রুনোর মত আমিও বুঝতে চেষ্টা করি যখন ওর বাবা ইহুদীদের সম্পর্কে বলে ‘ওরা আসলে ঠিক মানুষ না’। এইতো গতক্লাসে আমরা কোনো টার্গেট গ্রুপকে ধ্বংস করার প্রথম প্রক্রিয়া হিসেবে ‘ডি-হিউম্যানাইজেশান’র কথা পড়ছিলাম। ব্রুনোর বাবা যে সেই কথাই বলছেন! ওরা মানুষ না, ওরা তাহলে কী?
পাভেল, যে কিনা ডাক্তার ছিল, সে কেন রান্নাঘরে আলু ছিলে? ঘরের কাজ করে? হাঁটতে পারেনা, সারাক্ষণ বাঁকা হয়ে থাকে!... শ্মুয়েল বললো ওর বাবা ঘড়ির মেকানিক, তাহলে ওরা এখন এই ক্যাম্পে কী করে? ওদেরকে কেন এই স্ট্রাইপড পাজামা পড়ে থাকতে হয় সবসময়? আর ঐ চিমনীটা, যেটা দিয়ে ধুয়া বের হয়ে আকাশ কালো হয়ে যায়। পঁচা ভীষন একটা দূর্গন্ধ ছড়ায় তখন। বাবা বললেন, “ওখানে মাঝে মাঝে রাবিশ বিন করা হয়”, যেসব আস্ত মানুষকে তিনি রাবিশ বললেন, তিনি কী জানতেন ব্রুনো এই কাঁটাতারের বেড়া খুঁড়ে শ্মুয়েলের বাবা’কে খুঁজতে গিয়ে আটকা পড়ে যাবে সেইসব রাবিশ বিনের রুমে?...... শেষ মুহুর্ত পর্যন্তও ব্রুনোর বুঝে আসেনা, আসলে কী হচ্ছে! ও যে শিশু! পৃথিবীর এত কঠিন বাস্তবতা যে ওর এখনো বুঝে আসেনি।
…… অনেক বছর পেরিয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। মানুষ এখন ব্রুনো আর শ্মুয়েলদের কথা ভাবে। বুঝে, ওদের প্রতি জঘন্য অবিচার হয়েছে। ব্রুনোর বাবার মত নাৎসিদেরকে মানুষ ঘৃণা করে। কিন্তু মুভিটা দেখে আমি ভাবি, নাৎসিদের মত লোক কী এখনো পৃথিবীতে নেই? ব্লগে, ভার্চূয়াল দুনিয়া, আসল পৃথিবীতে, আমি যে এখনো নাৎসিদের মত মানুষের দেখা পাই! ব্রুনোর মত আমিও গুটিয়ে থাকি, নিজেই ভাবি, নিজেই বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু জানি, ব্রুনো, আমি আর আমরা যতই ভাবিনা কেন, যতই বুঝতে চেষ্টা করিনা কেন, লাভ নেই। পৃথিবীতে নাৎসিদের মত লোকের কখনো অভাব ছিলনা, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও হবেনা……
এই পৃথিবী ব্রুনোর মত শিশুদের জন্যে না, যারা খালি চোখে মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখে…
ব্রুনোর উপর তায়েফ আহমেদের লিখা- Click This Link