somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক যে এক পাখিরাজ্য ছিল

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক যে এক পাখিরাজ্য ছিল, কোনো এক সত্যযুগে -
খুব দয়াবান আর প্রজাবৎসল ছিলেন পাখিরাজ্যের রাজা
আর তার সমগ্র পারিষদ।
তাদের মনে একবিন্দু ক্রোধ বা নিষ্ঠুরতা ছিল না,
এতটুকু প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা ছিল না,
একফোঁটা নৈরাজ্য ছিল না পাখিরাজ্যের কোথাও,
তারা খুব ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন;
প্রজাপাখিদের সুখের জন্য তাদের চিন্তার অন্ত ছিল না,
ছিল না চেষ্টার কোনো ত্রুটি;
নিজেরা না খেয়ে, সব তারা বিলিয়ে দিতেন প্রজাদের।
তাদের বাণী আর বচন ছিল গানের চেয়েও অমিয়-মধুর,
যা শুনে প্রজাদের প্রাণ জুড়িয়ে যেত
আর বেঘোরে সুখমগ্ন হতো তারা।

প্রজাদের কখনো কামড়ায় নি, ঠোকরায়ে শরীর ঘা করে
মেরে ফেলে নি রাজা বা তার অমাত্যগণ,
গাছের বুকে গোপন গর্ত খুঁড়ে
কোনো পাখিকে লুকিয়ে ফেলে নি চিরদিনের জন্য,
এমনকি কাউকে ঝাঁটিয়ে পরদেশেও পাঠায় নি,
তাই, প্রজাপাখিদের মনে কোনো ভয় বা আতঙ্কের চিহ্নমাত্র ছিল না;
তারা পরম সুখে বারোমাস নিঃশঙ্ক বিলাসী জীবন কাটাতো
বনময় উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে।

গুণমুগ্ধ সুখী প্রজারা প্রাণের চাইতেও
বেশি ভালোবাসতো রাজ-রাজড়াদের।
কোনো পাখিরাজা বা জনৈক সভাসদ পটল তুললে,
কিংবা দৈবাৎ গুরুতর অসুস্থ হলে, মৃত্যু হয় নি জেনেও
'ওপারে ভালো থাকবেন' বলে কোনোরূপ হাসিঠাট্টা করে নি,
কোনো ধরনের আনন্দ-উল্লাসও করে নি প্রজাপাখিরা,
বরঞ্চ সারা রাজ্য শোকে মোহ্যমান হতো।
দুঃখাকুল আপামর প্রজারা সারে সারে
গলাগলি ধরে প্রভুদের ‘বেহেশ্‌ত নসিব' কিংবা আশু-সুস্থতার জন্য
সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনায় কেঁদে কেঁদে
চোখ ক্ষয় করে ফেলতো।
আহা, আকাশ-বাতাস-মেঘ গলে গলে পড়তো প্রজাদের কান্নায়,
আর,
কান্নার আবহে মৃতদের আত্মা আনন্দ ও তৃপ্তিতে বিভোর হতো।

আহা, সেই রাজ্যে কোনো তেলবাজ ছিল না। চাটুকার ছিল না।
ধান্ধাবাজ ছিল না। রাজারাও ছিলেন অতিশয় অমায়িক,
ভান ও ভনিতাবিমুখ - তৈল পছন্দ করতেন না বিলকুল।
সেকালে কোনো কোনো রাজ্যে তো নিয়মই ছিল – কারো বক্তৃতা মানেই
রাজাদের নামে প্রশংসা, সংবাদ সম্মেলন মানেই রাজাদের নামে
বানোয়াট সুনামের ফিরিস্তি - এর বাইরে কিচ্ছু বলা যাবে না
অথচ, বিদিত সেই পাখিরাজ্যে কেউ সাহসই পেতেন না
রাজাদের নামে একপ্রস্থ স্তুতি বর্ষণের, বরং তারা উন্নয়নের
ধারাবিবরণী পড়তে পড়তেই প্রাণান্ত হতেন।

আহা, সে-রাজ্যের রাজা ও তার সভ্যরা ছিলেন খুবই সত্যবাদী
তারা কখনোই বিশ্বাস করতেন না যে, ‘রাজনীতি’ মানেই
কেবল বিরোধী দলের নামে বিষোদগার করা, জনসেবা নয়
এজন্য, বাস্তবিকই বিরোধীপক্ষের নামে কুৎসা গাইতে গাইতে
কখনোই মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন না,
কাউকে গালিও দিতে জানতেন না
এবং দিনের পর দিন মিথ্যা প্রচার করে প্রজাদের কাছে
তা সত্যে পরিণত করতেন না
তারা কোনোদিনই নিজে চুরি করে অন্যকে বলতেন না ‘তুই চোর’
কস্মিনকালেও তারা সাজানো ও পাতানো নির্বাচন করতেন না
নির্বাচনের ফলাফলও নির্বাচনের আগেই স্থির করে রাখতেন না
‘স্বৈরাচার’ কথাটা তো তাদের অভিধানেই ছিল না
আহা, তারা কত যে ভালো রাজা ছিলেন, তা লিখতে গেলে
সব সাগরের সমগ্র পানিকে হতে হবে দোয়াতের কালি
মুখে মুখে বর্ণনা করতে গেলে মানব-পৃথিবীর সবাইকে একযোগে
এক শতাব্দীকাল কীর্তন করতে হবে

সেই যে এক স্বপ্নরাজ্য ছিল, রূপকথার সত্যযুগে,
তার জন্য প্রজাপাখিরা এখনো ব্যাকুল হয়ে কাঁদে।

১৩ জুন ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৭
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এত হট্টগোল এত সুরাসুর এখানে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিত্যতই লেগে থাকে হট্টগোল, রাজপথে জায়গা নেই,
হাঁটতে গেলেই মানুষের ধাক্কায় হারাই খেই,
বিশৃঙ্খল নগরীর বুকে স্বার্থপরতার বসবাস;
এখানে মাটিতে পা ফেললেই বুকে মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস।

বাস, কার, রিক্সা, ভ্যা ন, ম্যা ক্সি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×