কবির মৃত্যু
কবিতা- হয় শব্দের খেলা, অথবা হৃদয়গ্রাহিতা। শব্দের খেলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোপিত হয়, বা আর্টিফিশিয়াল। স্বভাব কবিরা শব্দের খেলায় পারদর্শী নন; হৃদয় ফুঁড়ে তাঁদের কবিতা উত্থিত হয়। এ কবিতা আপনাকে জীবনের সাথে একাত্ম করে। কোনো কোনো কবি শব্দের খেলা পছন্দ করেন, তেমনই কিছু পাঠকও রয়েছেন। কিন্তু এঁদের সংখ্যা সীমিত।
সরলরৈখিক কবিতায় জীবনের বোধন সবচেয়ে বেশি ব্যক্ত হয়ে থাকে। এ কবিতা মুহূর্তে পাঠককে নাড়িয়ে দেয়, আলোড়িত করে। পৃথিবীর সেরা কবিতাগুলো সরলরৈখিক। এ কবিতার পাঠক সর্বাধিক। পাঠক এ কবিতা খুঁড়ে জীবনের স্বাদ পান। জীবন এখানে অতিশয় প্রাণবন্ত।
যুগে যুগে দু-একজন কবি কবিতা শাসন করেন; কালের গর্ভে সকলেই হারিয়ে যান, কেউ কেউ খুব দ্রুত। মহাকাল কয়েকজনকে মনে রাখে। কোনো কোনো মৃত কবি সহসা জেগে ওঠেন- কখনো কবিতার গুণে, কখনোবা যুগের হুজুগে।
মাইকেল শব্দকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি খেলেছেন ‘মেঘনাদবধে’। ওগুলো কিছুদিন বাদে খুব হাস্যকর মনে হবে- এতোটা আরোপিত, আর আর্টিফিশিয়াল। জীবনানন্দের কিছু কিছু কবিতা পাঠকপ্রিয় হয়েছে, বার বার সে-কটাই ঘুরে-ফিরে সামনে দাঁড়ায়; বাকিগুলো তাঁর জীবদ্দশার মতো চিরকাল শুকনো ও প্রাণহীন। তিনি বহুদিন বেঁচে থাকবেন গুটিকতক পাঠকপ্রিয় কবিতার গুণে।
শব্দের খেলা বা সাময়িক হুজুগ কিছুদিন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। শতাব্দীর দাপুটে কবিদের নাম আমরা ভুলে গেছি, বাউল মজনু শাহই সময়ের সম্রাট। নেশা কেটে গেলে নজরুল আর শামসুর রাহমান, এবং আমার নীললোহিত অনাগত অনেক অনেক দিন ধরে আমাদের কবিতা শেখাবেন। এতোটা সরলরৈখিক, এতোটা হৃদয়গ্রাহী ও জীবন-নিঙড়ানো কবিতা তাঁদের মতো আর কেউ লিখেন নি।
২৭ মার্চ ২০১৪
আমারও দিন ফিরে আসবে
আমারও দিন ফিরে আসবে। আকাশে সাদা পায়রা ডিগবাজি খেতে খেতে শুভেচ্ছা জানাবে। ‘সময় হয় না’ অজুহাতে যে-মেয়ে একদিনও আমার বাড়িতে আসে নি তার প্রেম নিয়ে, অথচ নানান ঢঙে বেলা-অবেলায় পাড়ায় পাড়ায় হেসে-খেলে নেচে বেড়ায়- তাকে আমি মনে মনে প্রতিরাতে কামনার শেষে ক্ষমা জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আমি তার ছলনা ভুলে যাই। প্রগাঢ় মমতায় তাকে আরও কাছে টেনে গহিন কন্দরে কারুকার্য-শয্যায় সযত্নে সাজিয়ে রাখি।
সে মেয়ে জানে- তাকে আমি কত ভালোবাসি। সে মেয়ে জানে- সে আমায় হনন করে প্রতিরাতে। সে মেয়ে জানে না- একদিন পৃথিবী উলটো পথে ঘুরবে- সকালের সূর্য পশ্চিমে উদিত হবে, নদীর রস শুকিয়ে জমবে পাথরে; সে মেয়ে জানে না- জানে না- জানে না- রাখিপূর্ণিমার রাতে প্রেম কাকে খেয়ে ফেলে, কাকে দেয় সোনার বাঁধন।
২৭ মার্চ ২০১৪
সহজমৃত্যু
হে প্রিয় পাখি, তোমার যদি মরে যাবার সাধ হয়, কত সহজেই না তুমি মরে যেতে পারো! তোমার মরে যাবার সময়টুকু কত স্বল্প, অথচ তোমার স্বজনেরা কত দীর্ঘকাল ধরে তোমার জন্য কাঁদবে- কাঁদতে কাঁদতে চোখ ক্ষয় করে ফেলবে। তাঁদের বুকের উপর মস্ত পাথর জমে যাবে। তারপর তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে একদিন তাঁরাও তোমার উদ্দেশে আকাশে উড়াল দেবে।
২৬ মার্চ ২০১৪
কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার মাহমুদ০০৭-এর ইমন জুবায়ের ও আমার যাপিত জীবনের জন্য এলিজি পোস্ট পড়তে পড়তে মা ও মৃত্যু বিষয়ক যে ভাবনাটি মাথায় কাজ করছিল, তা থেকে এ কথাগুলো।
মিথ্যা বলা কোনো পাপ নয়, এটি একটি সুন্দর শিল্প
আমি একজন মানুষকে খুব ভালোবাসতাম।
একদিন তিনি হাসতে হাসতে যেসব মিথ্যাচার করলেন, তা শুনে আমি প্রায় ৩ দিন তীব্র মানসিক কষ্টে ছিলাম। তাঁর সেই হাসিমুখ আজও চোখে ভাসে- তাঁর চোখ ঠিকরে বেরুচ্ছে বিষের প্রবাহ। আমি পুড়ে যাচ্ছি। মরে যাচ্ছি। আমার অস্থির চিত্তে অসহ্য যাতনা আমাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে।
কোনো ষড়যন্ত্রই তাঁকে স্বপথ থেকে বিচ্যূত বা স্বপদ থেকে পদচ্যূত করতে পারে নি। তিনি যদি যা সত্য সেদিন তা বলতেন, আমার হৃদয়ে তাঁর স্থান আরও গভীরে গ্রথিত হতো; বাংলার মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁকে আরও গভীর আন্তরিকতায় বুকে টেনে নিত।
তিনি মিথ্যা বললেন। আমি, এবং আমরা স্বকর্ণে শুনলাম, স্বচক্ষে দেখলাম- কত সহজে তিনি ৫-কে ৪০ বলেন। কী সুন্দর হাসির আড়ালে অজস্র কপটতা ডুবে যেতে থাকে।
তিনি মিথ্যা বললেন। আমার বুকে রক্ত ঝরালেন। ১৬ কোটি মানুষের আদরের কন্যা ১৬ কোটি মানুষকে বুঝিয়ে দিলেন- মিথ্যা বলা কোনো পাপ নয়- মিথ্যা বলা হলো একটা সুন্দর শিল্প।
এই মিথ্যাই একদিন সত্য হিসাবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে। সেদিন আমরা সত্যের গৌরব ভুলে মিথ্যাকেই অকৃত্রিম সংস্কৃতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিব।
২৫ মার্চ ২০১৪
আবারও ব্লগার মাহমুদ০০৭-এর প্রতি কুতজ্ঞতাঃ ফেইসবুকে তাঁর একটি স্টেটাসে যে কমেন্ট করি, তার সামান্য পরিমার্জিত রূপ এটি।
সত্যধর্ষণ
কোনো একটা মিথ্যা বার বার বললে ওটা সত্যের মতো শোনায়। মিথ্যা কোনো পাপ নয়, মিথ্যা একটা শিল্প। আপনি যদি মিথ্যাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, ওটাই ‘সত্য’ ইতিহাস হিসাবে কালের খাতায় লিখিত হবে।
নিজের সামনে যেটা ঘটতে দেখি, তা ছাড়া বাকি ঘটনা সত্য, নাকি মিথ্যা- তা প্রমাণিত নয়।
একজন স্রষ্টাকে আমরা নির্দ্বিধায় অস্বীকার করি। অন্যদিকে, যে মহানায়ক যুদ্ধের জন্য ডাক দিয়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, জাতির হাতে তুলে দিলেন এক অনন্য বিজয়, তাঁকেও আমরা ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’ অভিধায় আখ্যায়িত করতে কুণ্ঠাবোধ করি না। একজন বঙ্গবীর হয়ে ওঠেন সাচ্চা রাজাকার।
৫ যদি ৪০ হিসাবেই ইতিহাসে ‘সত্যপ্রতিষ্ঠা‘ পায়, ৭-ও অনায়াসে ১ হিসাবে প্রোথিত হবে।
ইতিহাস ধর্ষণ করে মিথ্যা প্রতিষ্ঠাই কি আমাদের জন্মগত বদঅভ্যাস? এই বাংলার বিশুদ্ধ ইতিহাস কোন্টি? কেউ কি দয়া করে বলবেন, এই বাংলার বিশুদ্ধ ইতিহাস কেউ লিখেছেন কিনা?
২৮ মার্চ ২০১৪