আপু, খুব ভোরে উঠেই যেদিন তুই মোবাইলে ক্রমাগত মিস্ডকল দিতে থাকিস,
আমি বুঝি তোর বুকে আজ খুব কষ্ট। তোর একেকটা মিস্ডকলে
আমার অস্থিরতা তুফানের মতো দ্রুত বেড়ে ওঠে, তোর অস্থিরতার সাথে সাথে।
আমার সোনামণি আপু, তুই আর আমাকে কবিতা লিখতে বলিস না রে। যারা নিজেরাই একেকটা কবিতা, তারা আর কবিতা লিখবে কেন?
প্রতি তিন মাসে তিনশত টাকার একটা অতি সাধারণ গোলাপি থ্রি-পিসের সংসার
তুই চেয়েছিলি- তা তোর হলো না। যার সাথে তোর ঘর হবে, তাকে
তুই মন দিয়ে খুন হলি টানা তিনটে বছর; মিনসে খুঁজলো শ্বশুরের প্রাসাদ
খুঁজলো না তোর মনের ঐশ্বর্য, তাই তার সাথেও তোর হলো না ঘর। বাবার আদরের
কালো মেয়ে বাবার কাঁধে বোঝা হয়ে দিনরাত কাঁদিস। অভাবের সংসারে
শান্তি দিতে তাই তোর ঘর চাই, মনের মতো মন না হোক, ক্ষতি কী?
তোর পোড়া মন আর মন খোঁজে না, খোঁজে খড়কুটো মন খোঁজার অন্তরালে। ভালোবাসায়
পুড়ে পুড়ে ছাই হলো তোর মন, ভালোবাসায় বর আর জুটলো না
তোর সেই ভালোলাগার পলাশ ভাইয়া, যৌবনে তুই ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের ছায়া
কোনোদিন যে চোখে ধরে নি, তাকে তুই পেলি না- আমারও এ নিয়ে কষ্ট কম নয় রে বুবু।
কতো কবিতা, কতো যে সুর আর গান ছিল পলাশ ভাইয়াতে, আমরা দু ভাইবোন
গলাগলি ধরে তন্ময় হয়ে শুনতাম তার মধুর কবিতা ও গান। কখনো সখনো তুই কাঁদতিস,
খুব ভালোবেসে, আমারও বেজায় বুক ফেটে যেতো তোর কান্না দেখে-
তোর স্বপ্ন আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে বলে।
অহনার কথা আজকাল আর ভাবতে চাই না মোটেও। ও খুব সুখে আছে। তোর মতোই সাধারণ একটা মেয়ে ছিল অহনা। গলায় গলায় হাঁটতি-ফিরতি তোরা। স্বামীর সংসারে আজ ওর অঢেল সুখ, আর দিনের পর দিন বেড়েই চলছে তোর কষ্ট- তোর মতো এতো ভালো মেয়েকে যে কষ্ট দেয়, সে খুব পাষণ্ড।
আপু, তোর যেদিন খুব কষ্ট হবে, তুই আর ঘন ঘন মিস্ডকল দিস না সোনা। তারচেয়ে তুই
এক কাপড়ে, খালি পায়ে খালি মুখে, পাষণ্ডের সংসারে লাথি মেরে চলে আসবি, সারাজনমের
জন্য। চালচুলোহীন সংসারে আমরা সুখেই থাকবো- রাতের আকাশে তারাদের দুঃখ গুনবো
আর ভোরের বাগানে ফোটাবো কুসুম। তারপর একদিন দেখবি
আমার মুখে আর অহনা নামটি নেই, তোর মন থেকেও মুখে গেছে পুরুষ-পাষণ্ডের নাম।