১
তিনি চিরকাল অন্দরবাসিনী, বাইরে তাঁর ছায়া হাঁটে
আর একগুচ্ছ আঙুলের রংমাখা নখ;
কতিপয় উৎসুক ছন্নছাড়া চোরা চোখে করে তাঁর না-দেখা রূপের পরখ
আমি সেই আদিম সন্ন্যাসী
জন্মে জন্মে আসি
২
আটলান্টিকের গভীর তলদেশ থেকে কিছুকাল পরপর তিনি আচানক জেগে ওঠেন আর ঘুমাকুল চোখে ‘কী খবর, স্যার? ভালো আছেন?’ বলে পুনর্বার নিদ্রার জলে ডুব দ্যান; দশ বছর কেটে গেছে এমনতরো উঁকিটুকি খেলায়। আর মনে হলো, আমারও হয়তো খোয়া গেছে অনেক কিছু। অন্তরে তাঁর তরে তিনটি প্রশ্নের ছটফটানি বহুকাল, আজ আমার সুপ্তোত্থান হলো সেসব প্রশ্নের নিগূঢ় অত্যাচারে। আর তখন মেসেঞ্জারে ভাসছিল তাঁর ‘কী খবর, স্যার? ভালো আছেন?’
‘আমি তোকে তিনটি প্রশ্ন করবো; প্রমিস, ইয়্যু উইল রিপ্লাই কারেক্ট।’
আমি তাঁকে টলস্টয়ের ‘তিনটি প্রশ্ন’ জিজ্ঞাসা করতে চাই নি; ওসব মহৎ দর্শন আমার এ অসাড় মগজে গজাবে কেমনে?
‘সদাশয়’ মহাশয়া জবাব দিলেন না আমার প্রশ্নত্রয়ের জবাব দেবেন কিনা; প্রবল পাল্টা-প্রশ্ন আর তুখোড় জেরায় এড়িয়ে যেতে লাগলেন সুদৃঢ়গাঁথা প্রশ্নমালা।
‘প্রমিস, ইউ উইল রিপ্লাই কারেক্ট।’ আমি লিখলাম।
‘হুয়াই?’
আমি বিরক্ত হই। লিখি : ‘দিস ইজ এ ভেরি ব্যাড টেনডেন্সি দ্যাট ইয়্যু অল-ওয়েজ আস্ক কাউন্টার কোয়েশ্চন্স।’
‘শালাহ, যা ভাগ।’ ওর ইডিয়টিক আক্রমণে নড়েচড়ে বসি।
‘তুই তো এখন আমার বাসায় হে... ভাগবি তুই, নট মি।’
‘নাইস এ্যানসার। কী খবর, শুনি?’
‘আই হ্যাভ রাফলি থ্রি কোয়েশ্চনস ফর ইয়্যু।’
‘হুম।’
‘প্রমিস!’
‘হুয়াই শুড আই? কিছু না শুনে, না জেনে প্রমিস আমি করি না। এটা নিয়ে পেঁচিয়ে লাভ আছে?’
মেসেঞ্জার তাকিয়ে থাকে। আমি তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশায় এ্যাডামেন্ট; এবং সাইলেন্ট।
তিনিই এগিয়ে এলেন : ‘হাউ আর ইয়্যু? হাউ ওয়াজ ইয়োর লাইফ ব্যাক হোম?’ তিনি তাঁর কৌশল খোঁজেন আমাকে এ্যাক্টিভেট করানোর। আর আমি, হুট করেই বলি : ‘তুই কি বর্তমানে কোনো ছেলের সাথে প্রেম করছিস?’
‘হাহাহা! এটা কেমন প্রশ্ন? প্রেম কি তবে বুড়োর সাথে করা উচিত?’
অথচ জবাব পাই না আমার প্রশ্নের, আর ভেতরে জমা হয় ক্ষোভ; এবং নীরব থাকি; তিনি বিরতিকাল বাদে আবার অবিরত লিখতে থাকলেন :
‘কবিতা লিখছিস?
ডু ইয়্যু নো মাই এইজ...?
ইজ দিস ইয়োর ফার্স্ট কোয়েশ্চন এ্যামংগ্স্ট থ্রি?’
আমি হাসি- ইমোটিকনে; তাঁর বুদ্ধি খুলছে দেখে।
‘মানে কী? এই হাসির মানে কি, বুদ্ধির ঢেঁকি?’ তিনি লিখলেন।
কিয়ৎক্ষণ পর ‘বাজ’ পড়ে মেসেঞ্জারে : ‘আর ইয়্যু ওয়ার্কিং, অর বিজি উইথ সামওয়ান এল্স?’ এটা কারো প্রতি তাঁর ঈর্ষাও হতে পারে।
আমি ইরিটেটেড। এ্যানয়েড। লিখলাম : ‘ইফ ইয়্যু ডোন্ট রিপ্লাই, প্রো-ব্যাবলি দিস ইজ মাই লাস্ট এভার আইএম টু ইয়্যু।’
‘আই ডোন্ট কেয়ার।’ তাঁর তাৎণিক ঝাঁজ, ‘এভাবে আমার পেট থেকে কথা বের হয় না। ইয়্যু হ্যাভ নো আইডিয়া- কার সাথে কী তরিকা চলে।’
আমি মিটিমিটি হাসি অন্তরে অন্তরে, আর নিরন্তর নিরুত্তর থাকি। তিনি কি আমার আরও রিসপন্স প্রত্যাশা করছেন? তিনি ক্রমশ লিখতে থাকলেন দশ মিনিটকাল পর :
‘ডু ইয়্যু হ্যাভ এ ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট...?
আমি কিছু কবিতা লিখেছি... প্রকাশ করবো ভাবছি...
তার আগে তোকে পড়তে দেব...
আর ইয়্যু দেয়ার....? ... ...’
তারও দুদিন পর লগ-ইন করতেই ক্রমাগত 'বাজ' পড়তে থাকে, আর তাঁর আইএম :
'হাই!
হাউ আর ইউ টুডে?
ডিড ইয়্যু চেঞ্জ ইয়োর ফোন নাম্বার?
ফোন তো বন্ধ পেলাম; কারণ কী?
(পুনর্বার বাজ)
এতো কথা বললাম, কোনো উত্তর নেই?
সৌজন্যতাহীন মানুষ একটা.....'
তাঁর কোনো কৌশল আর কাজে লাগলো না। বাকি প্রশ্ন দুটো ভুলে যাবো- তিনি প্রমিস করেন নি যদিও, আমি করেছি।
(এডিটেড ও রিপোস্টেড)