উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অনিশ্চিত অবস্থায় বিদেশ সফরের হিড়িক পড়েছে ভিআইপিদের। বিশেষ করে সরকারের সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতা, সচিব, পুলিশ কর্মকর্তা ও হাই প্রোফাইলের লোকজনই বেশি আচ্ছেন দেশের বাইরে।
সূত্র জানিয়েছে ভিআইপিদের বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গে তারা বিদেশে অর্থ ও পাচার করছেন। বিমানবন্দরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় গোয়েন্দা বিভাগ ও ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশ যতই সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে, ততই দেশের হাই প্রোফাইলের লোকজনের বাইরে যাওয়ার ভিড় বাড়ছে। এ তালিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রীর পিএস, এপিএস ও পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া দেশ ছেড়ে বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী। প্রতিদিনই তারা ভিজিট ভিসার সুযোগ নিয়ে প্রবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। নাগরিকত্ব নিয়েছেন বিজনেস ভিসার সুযোগ নিয়ে। এদিকে সন্দেহভাজন ওই লোকজনের দেশত্যাগে বাধা দেয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে বদলি করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, গত প্রায় এক মাস ধরে অস্বাভাকিহারে এ দেশের লোকজন দেশ ছাড়ছেন। ভিজিট ও বিজনেস ভিসাসহ বিভিন্ন ধরনের ভিসা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। যাওয়ার সময় কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন পর অনেকেই আবার খালি হাতে ফিরে এসেছেন। দেশের টাকা বাইরে লগ্নি করে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চাইছেন। যাতে ক্ষমতা বদল হলেও সহজেই নিরাপদে থাকতে পারেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সমপ্রতি কয়েক দফায় ওই সন্দেহভাজনদের আটক করায় শোকজ করা হয়েছে আমাকে। কেন আটক করেছি জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শিখরের খালাতো ভাই শওকত মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশের বাইরে গেছেন। কিছুদিন পরেই তিনি ফিরে আসেন। এর কয়েক দিন পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আমেরিকা প্রবাসী কন্যা দেশে আসেন। কয়েক দিন অবস্থান করে যখন ফিরে যান তখন তার কাছে থাকা দুটি ব্যাগে অর্থ ছিল সন্দেহ করে তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু উল্টো কেন তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছিল তা জানতে চেয়ে একজন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়। গোয়েন্দারা জানান, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে বসবাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ভরসা পাচ্ছেন না তারা। সরকার বদল হলে দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা প্রবাসী হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বাইরে অবস্থানের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন। অনেকেই ভিজিট ভিসার সুযোগ নিয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর , অ্যামেরিকাসহ ইউপোীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। সূত্রমতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় প্রায় ৫০০ ব্যক্তি ভিজিট ভিসায় বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্থায়ীভাবে দেশ ছেড়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এভাবে গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৭ হাজার বাংলাদেশী শুধু মালয়েশিয়ায়ই গেছেন বলে তথ্য রয়েছে। এর বাইরে প্রতিদিনই থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপীয় দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকেই। সূত্রমতে, দেশত্যাগীদের নির্বিঘ্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন মন্ত্রীর ফোন আসে ইমিগ্রেশন শাখায়। তাদের এক কথা- যিনি যাচ্ছেন তিনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। কোনভাবেই লাগেজ ও ব্যাগ চেক করার নামে তাকে যেন হয়রানি না করা হয়। এতে কি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যাগে ভরে তা জানতে পারছেন না ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তারা। সূত্র আরও জানায়, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা একাধিক বার বাইরে গেছেন। প্রতিবারই তার প্রবাসী স্ত্রীর কাছে তিনি অর্থ রেখে আসেন বলে সূত্র দাবি করেছে। সুত্র: newsevent24.com