সরকারের নমনীয় মনোভাবের কারণেই সঘোষিত কুখ্যাত নাস্তিক ব্লগাররা বছরের পর বছর ধরে রাসুল (সা.) এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করে আসছে। তারা তসলিমা নাসরিন, সালমানা রুশদি ও দাউদ হায়দারকেও হার মানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কাছে গত রোববার এ নথি তুলে দেন আলেম ও আইটি-বিশেষজ্ঞরা। শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দিনকে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত আসিফ মহিউদ্দিন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এযাবত্কালের নাস্তিকদের মধ্যে আসিফই একমাত্র নাস্তিক, যে নিজেকে খোদা দাবি করেছে। মসজিদ সম্পর্কে এ নাস্তিক লিখেছে, ঢাকা শহরের সব মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানানো উচিত (নাউজুবিল্লাহ)।
আসিফ মহিউদ্দিনের বিষয়ে অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কুখ্যাত নাস্তিক আসিফের ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে যারা সব সময় ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে, তারা হচ্ছে সামহোয়্যার ইন ব্লগের মালিক গুলশানা ফেরদৌস জানা ও তার স্বামী নরওয়ের অধিবাসী অরিল্ড ক্লোকরহৌগ। ইহুদি অর্থায়নে পরিচালিত জার্মানি সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলের ২০১২ সালের আন্তর্জাতিক ব্লগার প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ ব্লগারের পুরস্কার পায় বাংলাদেশের কুখ্যাত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিন। তার এ পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখেন সামহোয়্যার ইন ব্লগের কর্তৃপক্ষ দম্পতি।
ইসলামবিদ্বেষী ব্লগগুলো : গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইটি-বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান তথ্য-প্রমাণসংবলিত সাহোয়্যার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, চুতরাপাতা ব্লগ, মতিকণ্ঠ ব্লগসহ ইসলামবিদ্বেষী বেশ কিছু ব্লগের বিবরণ তুলে ধরেন। এ ব্লগ সাইটগুলোর অধিকাংশই পরিকল্পিতভাবে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি। সামহোয়্যার ইন ব্লগসহ অন্যান্য ব্লগের মূল কাজই হচ্ছে পবিত্র ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ, বিরোধিতা, বিশেষ করে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি, অপবাদ ও অপপ্রচার চালানো।
অভিযোগে সামহোয়্যার ইন ব্লগের বিষয়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুরু থেকে দেশবিরোধী, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ লেখা পরিবেশনের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের মুখে পড়লেও সরকার এ ব্লগটির বিষয়ে অবিশ্বাস্যভাবে নির্বিকার। যদিও এই সাইটটি নিয়মিতভাবেই নাস্তিকদের নাস্তিকতা প্রচার করে আসছে এবং পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা করে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সাইটগুলো পরিচালনা করতে তারা প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছাড়ানোর হীন উদ্দেশ্যে।
আমার ব্লগ’র বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার ব্লগটি বিদেশি চক্র দ্বারা পরিচালিত। এর মালিক হচ্ছেন সুশান্ত দাস গুপ্ত। শুরু থেকেই এ ব্লগটি কলকাতার চরম সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের এ-দেশীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। এ ব্লগটি হচ্ছে ‘নো মডারেশন’ ব্লগ। ইসলামের বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো অশ্লীল লেখা প্রকাশ করছে এ ব্লগটি। ইসলামবিদ্বেষী লেখাগুলোর সমালোচনা করে কোনো প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে ফেলা হয়। সিলেটে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বিরুদ্ধে ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি স্থাপনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় এ ব্লগটি। এ ব্লগেই মহানবী (সা.)-এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। এ চিত্র ব্লগে এখনও বহাল রয়েছে। সরকার এখনও এটি বন্ধ করেনি।
আইটি-বিশেষজ্ঞ আরিফুর রহমান উল্লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সঘোষিত নাস্তিক ব্লগার আসিফ আমাদের প্রিয়নবী (সা.) সম্পর্কে লিখেছে, দীনের নবী মুস্তফায়, রাস্তা দিয়া হাইট্রা যায়। ২২ খান নারী বইসা আছে গাছেরি ছায়ায়।
মহান আল্লাহকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল : কথিত শাহবাগি আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দিনের ইসলামবিদ্বেষী মিথ্যাচার সম্পর্কে গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া নথিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসিফ মহিউদ্দিন ঈশ্বর দর্শন : গাঁজাখোর পর্ব শিরোনামে লিখেছে, আল্লাহ (৪ আলিফ টান হবে), একজন নিম্ন আয়ের গাঁজাখোর। বাণীর জন্মস্থান : শেরাটন হোটেলসংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচে। সময় রাত ৮টা। স্রষ্টার যেকোনো রাগ, ক্ষোভের শিকার হবে গরিবরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক দুর্যোগ, গজব, নালত ইত্যাদি ইত্যাদির বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের, শক্তিহীন, প্রভাব প্রতিপত্তিহীন মানুষের ওপর দিয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)
আইটি-বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করা এসব নথির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মহান আল্লাহ ও পবিত্র কোরআনের বিষয়ে সঘোষিত নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের অশ্লীল এসব বক্তব্য সালমান রুশদি কিংবা দাউদ হায়দারকে ছাড়িয়ে গেছে। আসিফের এসব উক্তির বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাদের দেখিয়েছি। কিন্তু দুখের বিষয়, তারা এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। আসিফকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার রহস্যজনক কারণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।