খুব ছোটবেলা থেকেই মাশরুম ক্লাউড নিয়ে একটা ফ্যাসিনেশন কাজ করতো। মাশরুম ক্লাউড মানে নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশনের পর যে মাশরুম ক্লাউড দেখা যায়। মাত্র কয়েক পিকোসেকেন্ডের মধ্যে পার্টিক্যাল ফিজিক্সের একগাদা সূত্র কাজ করে সেটা অবাক করার মতোই ছিলো। যখন দুটো শক ওয়েভের পর কমলা রং থেকে মধ্যখানে ছোটকালো রং ধারন করে, বলা যায় সে সময় মাশরুম ক্লাউড তার পূর্নতা পায় এবং বায়ুমন্ডলের আয়নস্ফিয়ারে সেটা পৌছায়। এর কিছু পরই শুরু হয় রেডিয়েশন বৃষ্টি, ছাই ছাই। অদ্ভুত লাগতো মনে হলেই, স্নোফল। দুঃখের বিষয় হলো এই ব্লাস্ট জোনের বাইরে থেকেও এই মাশরুম ক্লাউড তৎক্ষনাৎ সরাসরি দেখা সম্ভব হবে না। সাময়িক অন্ধত্ব থেকে শুরু করে রেটিনার কিছুঅংশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে চিরজীবনের জন্য। ব্লাস্ট রেডিয়াসের মধ্য থাকলে আমার শরীরে মাংস জ্বলে যাবে নিমিষে।
পৃথিবীর এমন অসম্ভব সুন্দর কিছু ব্যাপার আছে যা আমরা মন ভরে উপভোগ করতে পারি না। তোরাহ পড়েই জেনেছিলাম স্বয়ং মুসাকে ঈশ্বর বলেছিলো কোনো মানুষ তার চোখ দিয়ে তাকে দেখে জীবিত থাকতে পারবে না। সে ক্ষমতা মানবজাতীকে দেয়া হয়নি। তারপরও মুসা নাছোড়বান্দা ছিলো। ঈশ্বর তাকে জীবিত রাখতেই যখন সামনে দিয়ে চলে যান, মূসার চোখ দুটো বন্ধ করে রাখেন। যখন তার চোখ দুটো খুলে দিলেন তখন ঈশ্বরের পেছনের দিকটা এক ঝলক দেখেন। এই মিথগুলো বিশ্বাস করতাম। ধরেই নিয়েছিলাম বিবর্তনবাদ অনুসারে আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ আছে সেগুলোর জন্য আমরা অনেক কিছু দেখতে অক্ষম। এটা একটা আফসোসের বিষয়।
তাই বলে কখনো কোনোকিছু থেমে থাকে না। পঞ্চইন্দ্রিয়ের বাইরে থাকা বস্তু বা শক্তিসমূহের গতিপ্রকৃতি অনুসরন করার জন্য মানুষ তাই যন্ত্র বা গনিতের আশ্রয় নেয়। লুইপাস্তুর এভাবেই জীবানূ আবিষ্কার করেছিলো। এই যে ডার্ক ম্যাটার যে কিনা সবকিছুর ভেতর দিয়ে চলতে পারে এমনকি এর মধ্য দিয়ে আলোও প্রতিফলিত হয় না, কি দিয়ে তৈরী সেটা তো পরে, তার অস্তিত্বের সরাসরি কোনো প্রমান নেই। তবু আমরা জানি ডার্ক ম্যাটার আছে, কারন গনিত। আর তাই এন্টার্কটিকার বরফের চাইয়ের কয়েকশ ফুট নীচে আর্গনের চ্যাম্বার বসানো হয়েছে যেটা দিয়ে বোঝা যাবে ডার্ক ম্যাটারের কোনো কনিকা এই আর্গন চ্যাম্বারের মধ্যে দিয়ে গেছে কিনা, গেলেও তার উৎস কোথায়।
একটা প্রশ্ন আসতে পারে পঞ্চইন্দ্রিয় যদি না থাকতো তাহলে আমরা কি এত বুদ্ধিমান প্রানী বা তথাকথিত সৃষ্টির সেরা জীব হতে পারতাম? এটা একটা বিতর্কের বিষয়। তবে সহজ ভাষায় যেটা বুঝি প্রানী জগতে আমাদের কাছাকাছি বুদ্ধিমত্তাযুক্ত প্রানী গুলোর একটি হলো অক্টোপাশ। অক্টোপাশের স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর। কোন খাবারে কি স্বাদ এবং কত স হজে শিকার করা যায় সেটা সে মনে রাখতে পারে। তার হাতে থাকা চোষক দিয়ে গন্ধ ও স্বাদ সম্পর্কে জানতে পারে বলে নিজের খাদ্যের ব্যাপারে সে খুব খুতখুতে। তার চোখ আলোর প্রতি এতটাই সংবেদনশীল যে গভীর সমুদ্রের তলদেশ; যেখানে কিনা আলো পর্যন্ত পৌছায় না সেখানেও অবলীলায় বিচরন করতে পারে। সমস্যা হলো তার শুনবার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তাতে কি! তার ব্রেনের সাথে শারীরিক অনুপাত হিসেবে বেশ বড় এবং তার নার্ভ সিস্টেম বেশ জটিল।
এজন্য আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক দেশে আইন করে দেয়া হয়েছে অক্টোপাশের ওপর যেকোনো প্রকারের সার্জারী বা কাটাছেড়া যাবতীয় চিকিৎসার সময় এ্যানেস্থেশিয়া করানো বাধ্যতামূলক।
এই যে একটা প্রানীর স্মৃতিশক্তি এবং তার উন্নততর কগনেটিভ সেন্সের জন্য এরকম মানবিক আইন তৈরী করা শুধু এই কারনেই নিজের প্রজাতী নিয়ে গর্ব হয়।
যদিও আমাদের দক্ষিন এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে এসবের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করাই হয় না। ডেইলিমোশনে একটা ভিডিও দেখলাম কিছু ইন্ডিয়ান ছেলে পেলে একটা বিশাল কচ্ছপকে শক্ত খোলস থেকে বের করতে না পেরে বিশাল হাড়িতে ফেলে তার নীচে আগুন ধরিয়ে দেয়। জীবন্ত সেদ্ধ করবে। বাংলাদেশে তো কুকুরগুলোকে মারা হয় সরকারী ভাবে। সিলেট সহ বেশ কিছু জায়গায় সেদিন ফেসবুকে দেখলাম কুকুরগুলোর মাথা ফাটিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। লাশগুলো দেখে নিজের ক্রোধ আটকানোই মুস্কিল হয়ে গিয়েছিলো। অনেকেই প্রতিবাদ করছে, কে শুনে কার কথা।
যদি সামান্য একটা ইন্দ্রিয়ের অভাবে আমাদের অবস্থান অক্টোপাশ বা কুকুরের কাছাকাছি হতো তখন এর সামান্যতম নির্মমতা কি কস্ট দিতো না?
অবশ্য কুকুর অক্টোপাশ নিয়ে পরে থেকেই বা কি হবে! যেখানে মানুষই খোদ মানুষ মারবার জন্য বুকে বোমা বেধে ধর্মের নামে মানুষ মারে অথবা যুদ্ধ থামাবার নামে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটিয়ে অদ্ভুত সুন্দর মাশরুম ক্লাউড উপহার দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে জীবন্ত বাস্পীভূত বা জ্বালিয়ে দেয়, তখন আর কি বলার থাকতে পারে!
হিটলারের হত্যাযজ্ঞ যদি মুসা দেখে যেতে পারতো তাহলে সেই অস হায় ইহুদীর মতো সেও কি বলতো,"ঈশ্বর যদি সত্যি থেকে থাকে, তার বিচার করতাম সবার আগে!"
অদ্ভুত বোধ নিয়ে আমাদের এই বসবাস! বড্ড অদ্ভুত এই চেতনা!