
Congratulations দোস্ত!! ভাবি আর বাচ্চা কেমন আছে?, হুম অবশ্যই আসবো। আঙ্কেল, আন্টিকে সালাম দিস। Bye..
মোবাইল রাখতেই নূপুর তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে, আবির অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলল জানো!! ফাহিম বাবা হয়েছে.. নূপুর শুনেই অনেক আনন্দিত হল! ফাহিম আবির আর নূপুরের খুব কাছের বন্ধু ছিল ভার্সিটি লাইফে, এখনো আছে। অনবরত আবির কে প্রশ্ন করে যাচ্ছে নূপুর, কেমন হয়েছে? কার মতো দেখতে হয়েছে!! এসব জিজ্ঞেস করনি কেন? আবির বলল ঐটুক বাচ্চা কার মতই বা হবে? হবে হয়তো ওর বাবা কিংবা মায়ের মতো, যদিও অতো ছোটো বাচ্চা কার মতো হয়েছে তা খুব একটা বোঝা যায় না। যেতে বলেনি? হুম বলেছে.. চল কালই যাই! নূপুর অনেক বেশী এক্সাইটেড ফাহিমের বেবী দেখার জন্য। আবির কিছু বলে না। মাথা নাড়িয়ে শুধু ইশারা করে..যদিও আবির জানে সে যাবে না।
আচ্ছা ওদের বিয়ে হয়েছে কয় বছর হল? মনে হয় দেড় বছর। নূপুর কিছু বলে না। উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায়...
আবিরের চোখের চশমাটা ঝাপসা হয়ে আসে, পুরনো স্মৃতি হয়তো মনে পড়ছে নূপুরের, আবিরও হারিয়ে যায় সেই দিন গুলোয়...
তখন মাত্র আবির এম বি এ শেষ করছে, নূপুর অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে. নূপুরের বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে তার পরিবারের কাছে, আবির জানতেই অনেক বেশী চিন্তায় পড়ে যায়। ভেবেছিল একটা চাকরিতে জয়েন্ট করেই বিয়ের প্রস্তাব দেবে নূপুরদের বাসায়। সেই সময়টাও দেখি এখন হাতে নেই! নূপুর কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে, আবির ওকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে বলে দিয়েছে।
এই মুহূর্তে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই..
অনেক জল্পনা কল্পনার পর আবির আর নূপুর কাজী অফিসে বিয়ে করে। প্রথমে অবশ্য দুই ফ্যামিলির কেউই মেনে নিতে চায়নি! অনেক জড় ঝাপটা পর অবশেষে সবাই মেনে নিলো। যদিও আবিরের বাবা চেয়েছিল তার বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে আবিরের।
ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ৫ মাস হয়েছে, আবির চাকরির জন্য এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে. নূপুর তার অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিন বাসায় ফিরে আবির দেখল নূপুর চুপ করে বসে আছে, কেঁদে চোখ দুটো ফুলিয়ে রেখেছে, আবিরকে দেখে যেন আর নির্বাক হয়ে গেল নূপুর! কি হয়েছে তোমার? কেউ কিছু বলেছে..
আবিরকে জড়িয়ে ধরল নূপুর অনেকটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল.. আবির আমি প্রেগন্যান্ট, আবির কথাটা শুনে মুহূর্তে খুশি হয়ে যায়। যদিও একটু পরে চিন্তার রেখা ফুটে উঠে ওর মুখে।
আবির আর নূপুর চেয়েছিল তাদের সন্তানের সব প্রয়োজন জেন পূরণ করতে পারে, নিজেদের সেই অবস্থানে নিয়ে গিয়েই বেবী নিবে। কিন্তু এখন? আবিরের এখনো চাকরি হয়নি আর নূপুরের সামনে ফাইনাল এক্সাম! এখন সন্তান নেওয়া মানেই আর বেশী সমস্যা পড়ে যাওয়া।
বাসায় জানাতেই কেউ খুশি নয় এই খবরে। আবিরের মা সাফ জানিয়ে দিয়েছে নূপুরকে, যদি তারা সন্তান নেয় তবে যেন তা তোমাদের বাড়িতেই হয়। আমি বাপু তোমাদের সেবা যত্ন করতে পারবো অসুস্থ মানুষ। আবিরকে একেক জনে একেক বুদ্ধি দিচ্ছে, কেউ বলছে এবরশন করে ফেল। এখনো তোদের সে সময় আসেনি! সামনে এগিয়ে যাবি, ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করবি। নিজের পায়ে দাঁড়াবি।
আর সব থেকে বড় কথা নিজের সন্তানকে তো একটা ব্রাইট ফিউচার দিবি! এখনি যদি থেমে যাস!! আবির ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কি করবে? নূপুর ভেতরে ভেতরে অনেক বেশী ভেঙ্গে পড়ে! আবিরকে হয়তো একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে...
একটু পর নূপুরকে নিয়ে যাওয়া হবে অপারেশন থিয়েটারে, নূপুর বেডে শুয়ে আছে, আবির হাত ধরে আছে নূপুরের, অনেক ভীত সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে নূপুরকে। আমার অনেক ভয় করছে আবির! আবির অভয় দেয় ভয়ের কিছু নেই, একটা ছোট্ট অপারেশন। আমারা কি ঠিক করছি? জানিনা, আর কোন উপায় নেই! আবির অনাগত সন্তানের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে না পেরে, নিজেকে খুনি মনে হচ্ছে..
প্রায় ১ঘন্টা অপারেশন চলল। নূপুরকে নিয়ে যাওয়া হল বেডে জ্ঞান ফিরেনি। অপারেশন সাকসেসফুল।
যদিও আবির আর নূপুরের জন্য সব থেকে সকিং নিউজটা অপেক্ষা করছে.. এবরশন করার পর থেকে নূপুরের প্রায় পেটে ব্যথা করতো ওগুলো পরীক্ষা করতেই আসল সত্যিটা বের হয়ে এলো। নূপুরের আগের অপারেশনের সময় অনেক রক্ত ক্ষরণ হয় যা বন্ধ করেনি তখন। এখন তাকে বাঁচাতে হলে আরেকটা অপারেশন করতে হবে কিন্তু তাতে হয়তো নূপুর আর কোনদিন মা হতে পারবে না। আবিরের মাথায় জেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! হয়তো তাদের পাপের সঠিক শাস্তি দিয়েছে সৃষ্টা।
আবির নূপুরের কথায় সম্মোহন ফিরে পেল! কাল সত্যি নিয়ে যাবে ফাহিমের বেবীকে দেখতে? হুম নিয়ে যাবো।
চোখের চশমাটা একটু ঠেসে দিয়ে আবির ভাবতে থাকে কি হতো সে দিন যদি সেই ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার সাহস দেখাতাম! একটু সমস্যা হয়তো ফেস করতাম তারপর তো সব ঠিক হয়ে যেত।
আজ তো প্রতিষ্ঠিত হয়েছি! কোন কিছুর অভাব নেই কিন্তু সেই সুখতো খুঁজে পাই না। আজ নিজেকে সব থেকে বড় অভাবী মনে হচ্ছে আবিরের। আগের মতো সেই ভালবাসাও অনুভব করে না নূপুরের প্রতি। "আরেকটা বিয়ে কর" হয়তো একদিন মায়ের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে, কাপুরুষের মতো। অথচ সব কিছুর জন্য তারাই দায়ী। আবির বারান্দায় এসে দাঁড়ায়! রাত নেমেছে শহরের রাস্তায়.. সব জড় পদার্থের মতো নীরব হয়ে আছে, পাশে কখন এসে নূপুর দাঁড়িয়েছে টেরি পায়নি আবির। নূপুর কান্না ভেজা কন্ঠে শুধু বলল আজ আমাদের বেবীটা থাকলে অনেক বড় হয়ে যেত তাইনা?
আবিরের গলা ধেয়ে আসলো অশ্রু টলমল চোখে শুধু ধুসর আকাশে সান্ত্বনা খুঁজতে লাগলো...
পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত।
ছবি:-নেট সংগ্রহ
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১০