
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঘড়ির দিকে তাকালাম । রাত ৩:১৭ মিনিট । প্রচন্ড সিগারেটের তৃষ্ণা হচ্ছে । কিন্তু সিগারেটের প্যাকেটটা খুজে পাচ্ছি না । রিমি মাঝে মাঝে এই কাজ টা করে । সিগারেটের প্যাকেট টা লুকিয়ে রাখে । যাতে সিগারেট খেতে না পারি । যখন খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করে তখন খেতে না পারলে নাকি পরে আগ্রহ কমে যায় –রিমির ধারনা । তাই সে মাঝে মাঝে এই কাজ করে ।
প্রচন্ড সিগারেটের তৃষ্ণা হচ্ছে । কিন্তু রিমিকে ডেকে জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছে করছে না যে প্যাকেট টা কোথায় । মেয়েটা গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে ।শেুধু সিগারেটের প্যাকেট টা কোতায় এটা জিজ্ঞাস করার জন্য ওর ঘুম ভাঙ্গানোটা অন্যায় হবে । খুব মায়া কাড়া চেহার ওর । ঘুমালে চেহারায় মায়া ভাবটা আরো চলে আসে ।
আলসে লাগছে , উঠতে ইচ্ছে করছে না । কেউ যদি একটি সিগারেট এনে দিত ! কিন্তু এটা সম্ভব না । তবে এমনটি হলে ভালো হতো । রিমি সব সময়ই আমাকে সিগারেট খেতে বারন করে । অবশ্য মাঝে মাঝে সেই আমাকে অনুমতি দেয় সিগারেট খেতে । রিমি সিগারেটের গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারে না ।
সিগারেট খেয়ে ওর কাছে গেলে ও নাক কুচকায় ।নিজের কাছেই খারাপ লাগে । কিন্তু দীর্ঘ দিনের অভ্যাস । বদলাতেও পারছি না ।
কিন্তু শান্তা এমনটি ছিল না । শান্তা আমার সাথে দেখা করতে এলে প্রায়ই সিগারেট নিয়ে আসত । ও এক প্যাকেট করে নিয়ে আসত । আমাকে সিগারেট খেতে দেখলে শান্তা বলত এ্যাই তোমাকে না সিগারেট টানলে পন্ডিত পন্ডিত লাগে ।
শান্তা খুব হাসত এই বলে । শান্তা মেয়েটা অন্য রকম ছিল । ও অবশ্য সিগারেট দিতে খুব করুন সুরে বলত প্লিজ কম করে খেয় । অন্তত আমার কথা ভেবে কম করে খেও । তোমার কিছু হলে আমি তো থাকতে পারব না ।
রিমির দিকে তাকালাম কি আশ্চর্য রিমিকে পাশে রেখে আমি শান্তা কে ভাবছি । আচ্ছা আমি কি রিমিকে কে ঠকাচ্ছি ? আমি তো সময় পেলেই শান্তাকে ভাবি । আমার চিন্তা চেতনা জুড়ে আছে শান্তা । তবে কি আমি শুধু শারিরিক টানে রিমির কাছে আসি ? না না তা কেন ? রিমি আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে । রিমির ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করতে পারি না ।
আসলে হৃদয়ের চাহিদা আর শারিরীক চাহিদা আলাদা । নতুবা আমার শরীর রিমিকে পেয়ে শান্ত থাকে কেন আর শান্তার স্মৃতি ভেবে আমি তৃপ্তি লাভ করি কেন ? বামা মা আর আমাদের সমাজের সনাতন ধারনায় সবাই বিশ্বাস করে একরাত একসাথেই থাকলে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যাবে । তাদের কি তাহলে ধারনা ভালোবাসা দৈহিক ? হৃদয়ঘটিত না ?
কিন্তু সব ঠিক থাকার পরও কেন শান্তাকে পেলাম না ? বাসা থেকে ঠিক মেনে নেয়নি শান্তা কে । শান্তা অনেক খাটো ছিল । আর বাসার সবাই এমন ভাবে ইমোশনালি আঘাত করল যে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হলাম । হয়ত আমি কাপরুষ , ঠিক বাস্তবতাকে ফেস করতে পারি না ।
রিমির দিকে তাকালাম, কি দারুন লাগছে মেয়েটাকে । মেয়েটা দিন দিন সুন্দর হচ্ছে । মায়াকাড়া ভাবটা আরো বাড়ছে দিন দিন । মেয়েটার দিকে তাকালে আটকে যাই । আচ্ছা এটা কি মায়া নাকি ভালোবাসা ?
রিমির ভালোবাসার কিছু গুন আছে , যার জন্য আমি খুব দ্রুত নিজেকে সমলাতে পেরেছি । ওর ভিতর ছেলেমানুষি বেশী । খুব আবেগ প্রবন । একটা কিছু হলে তার চোখ টলমল করে । দেখতে আমার ভারী ভালো লাগে । অবশ্য মাঝেমাঝে আমি ইচ্ছে করেই তাকে কাদাতে চেষ্টা করি । শুধু তার চোখের জমে ওঠা জল দেখার জন্য । অবশ্য পরক্ষনেই টেনে নিই তাকে কাছে । ওরে অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলেছি হয়ত ।
সিগারেটের তৃষ্ণা আর বোধ হচ্ছে না । আমি শুতে গেলাম । রিমি এখন ও গুটি শুটি মেয়ে শুয়ে আছে । আমি রিমির উপরে হাত রাখলাম । ঘুমের ঘোরেই রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরল । আমি আরেকবার তার ভালোবাসার বন্ধনে বাধা পড়লাম ।