এই সংবাদটা দেখে আমার শরীর শিউরে উঠেছিল।এই কনকনে শীতে আমি এবং আমরা কত আরামে আছি কিন্তু সেই গরীব লোকগুলো তারা কতই না কষ্ট পাচ্ছে। আর তাই বিবেকের তাড়নায় শুরু করলাম শীত বস্ত্র সংগ্রহের কাজ।
বন্ধুদেরকে জানালাম ব্যাপারটা বললাম দেখ দোস্ত আমি সেদিন রাতেও বাসায় ফেরার সময় দেখি রাস্তার পাশের মানুষগুলো ছালা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। আর আমরা লেপ/কম্বলের নিচে শুই। কত কষ্টই না করছে তারা চল কিছু গরম কাপড় সংগ্রহ করে বিতরণ করি।
কিন্তু তখনই কিছু বন্ধু বলে উঠল দেখ আমরা ভালো ঘরের পোলা মানুষের বাসায় বাসায় এভাবে যাওয়াটা কেমন দেখায় না? তাছাড়া সবাই কি কাপড় দিবে? আমি বললাম তোদের লজ্জা লাগলে থাক কিন্তু আমি পারছিনা আমাকে কাপড় সংগ্রহ করতেই হবে।
তারপর দেখি ধীরে ধীরে সবাই আমার সাথে এগিয়ে এলো কাপড় সংগ্রহের জন্য। কিছু বাসায় এমনভাবে বলল যে, তাদের কথা শুনে মনে হল আমরা ভীক্ষে করতে নামছি তারপরও আমি হাল ছারিনি কিছুক্ষন পর কাপড় পা্ওয়া শুরু করলাম তখন আর সেই মহিলার দুর্ব্যবহার মনে থাকল না।
আস্তে আস্তে দেখি আমাদের ৩টা বড় ব্যাগ কাপড়ে ভরে গেল সবার মুখ উজ্জ্বল হতে লাগল ২বন্ধূ গিয়ে আরো ২ টা বস্তা কিনে নিয়ে আসল। ৩০মিনিটে সেগুলোও ভরে গেল তারপর আরো ৫টা কিনলাম । আস্তে আস্তে সেগুলো্ও ভরে গেল।
তখন ওদের বললাম দেখছিস সমাজে ভালো মানুষ বেশি না খারাপ মানুষ??? একজনের খারাপ ব্যবহারের জন্য তো কাপড় সংগ্রহ করাই বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলি আর এখন!
ওরা বলল লেকচার বাদ দিয়া বল এখন সামনের প্লান কি? আমি বললাম খুব ভালো হতো যদি আমরা সেন্ট্রালি এই কাপড়গুলো বিতরণ করতে পারতাম কিন্তু আমাদের যে প্রশাসন দেখা যাবে ৯০% কাপড় বিক্রি করে দিয়ে ১০% হয়তো বিতরণ করবে!
তাই নিজেরাই একটা পিকআপ ভ্যান সংগ্রহ করে সেই বস্তাগুলো নিজেদের কাধে করে বয়ে নিয়ে পিকআপে উঠালাম। যাওয়ার সময় সবচেয়ে অবাক হলাম যে ব্যাপারটায় সেটা হলো আমাদের সবার এই কাপড় সংগ্রহের কাজ দেখে এক লোক তার গায়ের গরম কাপড়টাই খুলে দিলেন আর আমাদের চা নাস্তা খাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা দিলেন।
আমরা সবাই গতকাল রাত ১১.০০ টার দিকে বের হলাম গরম কাপড় বিতরণ করতে আমি প্রথমেই সবাইকে বললাম দেখ আমাদের মতো আরো অনেকেই শীক বস্ত্র বিতরণ করছে দেখা যাচ্ছে কোন এলাকার মানুষ ২বার পাচ্ছে আবার কেই একবারও না তাই চল আমরা এন্টিক জায়গা খুজে সেখানে আগে বিতরণ করি যেহেতু সাথে গাড়ি ছিল তাই সমস্যা হলো না।
যেখানেই যাই মানুষের চোখে মুখে যে কি আনন্দ সেটা আপনি কখনো কোন ছবিতে তেখতে পাবেন না সত্যিই তাদের আনন্দ দেখে আমার এবং আমাদের কত যে ভালো লেগেছিল তা ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে কি আনন্দ সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।আমাদের কষ্টটা বৃথা যায়নি।সারাদিনের ক্লান্তি একদম ভুলে গিয়েছিলাম ওদের আনন্দ দেখে।
হায় আমার দেশ সবাই যদি নিজ নিজ স্বার্থের পরেও একটু গরীবদের নিয়ে ভাবত!
অনেকেই ভালো কাজ করতে চায় তবে উদ্যোগ সবাই নিতে পারেনা! আপনারও যদি এমন কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আর দেরি করবেন না আর যা কিছু না পারেন অন্ততপক্ষে আপনার নিজ এলাকার কিংবা নিজ বিল্ডিংয়ের লোকজনের কাছ থেকে কিছু গরম কাপড় সংগ্র্রহের চেষ্টা করুন।
আমাদের বস্ত্র বিতরণের কিছু ছবি দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:৩১