মান ও সত্যতার দিক দিয়ে ফেসবুকে আমজনতার দেয়া রেস্টুরেন্টের রিভিউ কতটুকু গ্রহনযোগ্য - এরকম একটা টপিকে বেশ কয়েকদিন ধরে আলাপ চলতেছে। উত্তরার একটা রেস্টুরেন্টে অল্পসময় জুনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে কাজ করার সময় এটা নিয়ে বেশ কিছু অভিগ্গতা হয়।
আমার অনেকগুলা কাজের একটা ছিলো ডিজিটাল মার্কেটিং-এ বেশি জোর দেয়া। তো সেজন্য কেউ খেতে আসলে তাকে ফেসবুকে রিভিউ বা চেকইন দেয়ার কথা বলে মানুষ বুঝে ১০-৩০% ডিসকাউন্ট দেয়া হতো। এছাড়া দোকানের মালিক থেকে দারোয়ান, কারো কোনো বন্ধু-বান্ধব আসলে তাকে একটু ভিআইপি গেস্ট ফিলিংস দিয়ে, তাকে দিয়েও রিভিউ করানো হতো। স্বাভাবিক ভাবে কেউ ডিসকাউন্ট পাইলে খারাপ রিভিউ দেয় না। ভদ্রতা করে হলেও ভালো দুচারটা ভালো কথা বলে। এছাড়া দিনের অব্যবহৃত খাবারের ছবি তুলে সেগুলা দিয়েও নিজেরা নিজেরা পোস্ট করা হতো!
আরেকটা কাজ ছিলো ফেসবুকের যতগুলা খাবারের গ্রুপ আছে, সবগুলায় নিবিড় পর্যবেক্ষন করা। কেউ যদি খারাপ রেটিং দেয়, তাকে আলাদা ইনবক্সে ডেকে আরেকবার ফ্রি খাবারের সুযোগ দিতাম। বিনিময়ে ঐ রিভিউ ডিলিট করে আরেকটা ভালো রিভিউ দিতে বলা হতো। কে ডিলিট করবে, কে করবে না সেটা রিভিউকারীর প্রোফাইল, সাম্প্রতিক পোস্ট, লাইক করা পেইজ দেখে তার পারসোনালিটি নিয়ে আগেই ধারনা করে ফেলতাম। যার পারসোনালিটি ভালো তাকে ভুলেও এসব ফ্রি অফার করতাম না। ১০ টা রিভিউয়ের মধ্যে ৩টা খারাপ রিভিউ থাকলেও জিত আমাদের।
এগুলা সবই আমাকে শিখানো হইছিলো প্রথম দিনেই। এরকম আরো ট্রিক্স আছে। কেউ আমার রেস্টুরেন্ট নিয়ে খারাপ কিছু বল্লে সেটার প্রতিবাদ করার জন্য একটা গ্রুপ ছিলো। আমি নিজেও ঐ গ্রুপের অনেককে চিনতাম না। হয়তো আমার ম্যানাজার চিনতো। এরা কেউ রেস্টুরেন্টের ডিরেক্ট employee না। সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকে এই টাইপের মানুষজন। এই গ্রুপের কেউ যদি পোস্ট করে এই রেস্টুরেন্টটা কেমন? বাকি সব এসে কমেন্ট করবে - অসাম, ফার্স্ট ক্লাশ ব্লা ব্লা। আবার কেউ ঐ এলাকার শত্রু রেস্টুরেন্টের রিভিউ চাইলে এরাই গিয়ে বলবে - খুব বাজে, অনেক দাম! একদম সিন্ডিকেট অবস্থা!
এতকিছু বলার কারন, আমি নিজে এসব দেখে এরপর থেকে কোনোদিন কাছের মানুষ ছাড়া ফেসবুকের আর কোনো রিভিউ বিশ্বাস করি না। আমার রেস্টুরেন্ট কখনই ফেইক লাইক, ফেইক প্রোফাইলের রিভিউ, পোস্ট বুস্ট এসবে বিশ্বাস করতো না। এসবের পিছে টাকাও ঢালতো না। টাকা ঢাল্লে যেখানে রিয়েল প্রোফাইল সুন্দর সুন্দর রিভিউ দিবে সেখানে কেন ফেইক লাইকের পিছে টাকা ঢালবে? আমরা নিজেরাই সামান্য ১০০-২০০ টাকার ডিসকাউন্টের লোভে আরো ১০জনকে খারাপ খাবারের দাওয়াত দিতেছি। রেস্টুরেন্টের কোনোই লস নাই এখানে। এদের ভাবসাব দেখে যা বুঝলাম : খাবারের মান ও স্বাদ থেকে এরা বেশি প্রাধান্য দেয় সমায়িক হুজুগ সৃষ্টি করে বিশাল টাকা লাভ করার।
অথচ আমরা চাইলেই চটকনা মার্কা রিভিউ করে অনেক মুখোশধারী খারাপ রেস্টুরেন্টকে ভালো করে ফেলতে পারতাম বা তাদের লোক ঠকানো ব্যাবসা বন্ধ করে দিতে পারতাম!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৪