সতী প্রথার উৎস বেশ বিতর্কিত। বাল্মীকি রামায়ণ এবং বেদ এর মত প্রাচীন শাস্ত্রে সতী প্রথার কোন উল্লেখ নেই বরং সেইসময় বিধবা নারীরা বাড়ীতে ও সমাজে আত্ম-সম্মান নিয়ে জীবনযাপন করতেন। মহাভারতে কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যেখানে নারী আত্মহত্যা করে - কিন্তু তা কোন অনুশোচনা / চরম দুঃখের থেকে [রানী মাদ্রি সতী হন,সঙ্গমকালে তার স্বামী পান্ডুর মৃত্যুতে শোকে ]। পান্ডুর অন্য বিধবা রানী কুন্তি বিধবা হিসাবে ভালভাবে বেঁচে ছিলেন,যেমন হস্টিনাপুরের অন্যরা ছিলেন।
সুপ্রাচীন হিন্দুধর্মে জোরপূর্বক বিধবা নারীকে পোড়াবার কোন রীতি ছিলনা। আরও প্রমাণ হিসাবে বলা যেতে পারে , বুদ্ধ ও মহাবীর কখনো তৎকালীন সমাজে এই প্রথাটির চলিত থাকার কোন উল্লেখ করেন নি, এমনকি প্রাচীন বৌদ্ধ / জৈন ধর্মগ্রন্থে এর কোনটিইর উল্লেখ নেই। যদিও বুদ্ধ জীব হত্যা নিয়ে এত কথা বলেছেন, তাহলে কীভাবে তিনি ও অন্যরা নারীদের জোরপূর্বক হত্যা নিয়ে কোন উল্লেখ করেন নি ? আদি শংকরআচার্য এবং অন্যান্য ধর্ম সংস্কারকদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে। সুতরাং, এটা বলা যেতে পারে এই প্রথা সম্ভবত নগণ্যভাবে বিদ্যমান ছিল কিন্তু মানার জন্য কোন জোর জবরদস্তি ছিল না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কখন এসেছে এবং কেন? সেখানে পৌঁছানোর জন্য আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, কোথায় এই প্রথার প্রচলন ব্যাপক হয়ে ওঠে।
উত্তরপূর্ব ভারতে রাজপুত পরিবারগুলির মধ্যে সতীদাহ প্রথার নিয়ম ব্যাপক আকার ধারণ করে কিন্তু ভারতের অন্যান্য অংশে সতীর এরকম প্রচলন ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, তামিল সাহিত্যে, সতী সম্পর্কে কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে অনেক জনপ্রিয় নারী ব্যক্তিত্ব বিধবা ছিলেন।
এখন কথা হল, উত্তরপশ্চিম ভারত এর বিশেষত্ব কোথায়? এর কারণ নিহিত আছে ভারতে বহিঃশত্রুর আক্রমণের প্রবেশদ্বার ছিল উত্তরপশ্চিম ভারত, সেই কারণেই সেখানে সতীদাহ প্রথার উত্তান দেখতে পাই। আগ্রাসী বহিঃ শত্রুদের দ্বারা ঘিরে থাকা গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষাংশে জোরপূর্বক সতীদাহর ঘটনা কিছু কিছু ঘটেছে । সেই সময়ে লিখিত পুরাণগুলিতে সতীপ্রথা উল্লেখ করা হয়, কিন্তু তাতে পরস্পর বিরোধিতা ছিল। কেউ এই অনুশীলন এর প্রশংসা করে আবার অন্যরা এটি নিষিদ্ধ করে।
কিন্তু ১৪তম শতাব্দীতে ইসলামী আগ্রাসনের সাথেসাথে রাজপুৎ রাজত্ব গুলিতে এই প্রথার প্রচলন ব্যাপক ধারণ করে। বহিঃ শত্রুর আক্রমণের কারণে ব্যাপক হারে - গণধর্ষণ এবং দাসত্ব এড়াতে হিন্দু নারীরা জহর নামে গণ আত্মহত্যা করে। এর বিখ্যাত উদাহরণ হল - আলাউদ্দিন খিলজীর আক্রমণের সময় রানী পদ্মিনীর আত্মহত্যা। এই আত্মহত্যা একটি প্রধান কারণ হয়ে ওঠে, ভারতবর্ষে এই সতীদাহ প্রথার বিপুল প্রসারণ ও প্রশংসিত হওয়ার জন্য। হঠাৎকরে চারদিকে তার আত্মহুতির সম্মানে মন্দির তৈরি হতে থাকে এবং আত্মহত্যা একটি পুণ্যের বিষয় হয়ে ওঠে।
তার মৃত্যুর পর রানী পদ্মিনী একটি জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে ওঠে এবং সেইথেকে বিধবাদের আগুনে ঝাঁপ দেওয়া একটি রীতি হয়ে ওঠে সেই অঞ্চলে। যেসব নারীরা এটা প্রত্যাখ্যান করেছিল,হয় তাদের আগুনে নিক্ষিপ্ত ছিল অথবা কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
অবশেষে এই জঘন্য প্রথা এবং রানী পদ্মিনীর গল্প অন্যান্য রাজপরিবারে যেমন মারাঠা এবং বিজয়নগর সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই সময়ের দক্ষিণ এশিয়াকে বোঝার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল psychology of fear- ধর্মচ্যুত হবার ভয়। এখনো পাকিস্তানে হিন্দুদের দুঃখজনক জীবনযাপন ভারতের সাথে সীমান্ত অঞ্চলকে এবং রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে - সেটা হল সেই ভয়ের থেকেই। এই ভয়ই কিছু হিন্দুকে অতিরক্ষণশীল করে তোলে এবং যুক্তিবিজ্ঞান শুনতে অপারগ হয়ে ওঠে। এটি হিন্দুধর্মের সমস্ত মন্দতার উৎস। এখন লক্ষ্য এটাই, এই সম্প্রদায় তার সমস্ত ভয় ছুঁড়ে খোলসের বাইরে বেরিয়ে আসুক।
তথ্যসূত্র - ইন্টারনেট
আমার অন্যান্য পোস্টগুলি-
হিন্দুধর্ম ভাবনা -২
হিন্দুধর্ম ভাবনা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮