১৯৬৩ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। হৃদয়ের ডাক শোনার আগে অব্দি, তার জীবন বাকিদের মতই ছিল সাধারণ ও স্বাভাবিক যেমনটা হয় অসমের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক অনামি কিশোরের।
১৯৭৯ সালের বন্যার সময় যাদব পায়েং দেখলেন ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুচরে অনেক সাপ আটকে পড়ে আছে কিন্তু কয়েক দিন পরে সূর্যের তাপ এবং গাছের অনুপস্থিতির কারণে সেগুলি মরে পড়ে আছে। পরে তিনি সেখানে গাছ লাগাবার জন্য বন কর্মকর্তাদের কাছে আর্জি জানান কিন্তু তারা তাকে উল্টো বলে " এতই দরদ যখন, নিজেই গাছ লাগাও"।
এরপর যাদব একাই বালুচরে বাঁশ লাগানো শুরু করেন, যদিও তা খুবই কষ্ট সাধ্য কাজ ছিল।
এক বছর পরে ১৯৮০ সালে, আসাম বন বিভাগ দ্বারা ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে দুই শত হেক্টর জমির বনসৃজন পরিকল্পনা শুরু হয়, তখন বালুচরটি অরুণ ছাপরি নামে পরিচিত ছিল। যাদব সেই প্রকল্পে কাজের জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করেন এবং গাছ লাগানো শুরু করেন।
প্রকল্প পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হয়, কিন্তু যাদব তারপরেও অরুণ ছাপরিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজ হাতে আরও গাছ লাগানো এবং সেগুলিকে যত্ন করে বড় করে তোলার দায়িত্ব নেন।
তার একক প্রচেষ্টায় প্রায় 35 বছর পর, নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের চেয়ে বড় বনভূমির সৃজনে তিনি কৃতিত্ব অর্জন করেন! যাদব পেয়ং কোন নাম এবং খ্যাতি পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে একাজ করেননি বরং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে।যাদব পেয়ং এর হাতে তৈরি এই অরণ্য এখন Molai Kathoni নামে পরিচিত।
তার এই মহৎ প্রচেষ্টা পৃথিবীর অগোচরেই থেকে যেত, যদিনা একজন স্থানীয় বন্যপ্রাণী আলোকচিত্র ব্যক্তি জিতু কিলিতা ২০১০ সালে একটি স্থানীয় দৈনিক খবরকাগজে তার উপর নিবন্ধ প্রকাশ করত।
২৩শে এপ্রিল,২০১২ সালে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য the School of Environmental Sciences, Jawaharlal Nehru University থেকে "forest man of india" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও নানা দেশ থেকে নান পুরস্কার পান ও জাতিসঙ্ঘ থেকে আমন্ত্রন পান বক্তৃতা দেবার জন্য। ২০১৫ সালে তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার "পদ্মশ্রী" সম্মানিত হন।
যাদব পায়েং এর হাতে তৈরি ১৩৬০ একর ঘনঅরণ্য এখন পাঁচটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের জন্য ঘর, একশো হরিণ, বন্য শুয়োর, শত শত গবাদি পশু এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আস্তানা। এই অরণ্য, ১১৫ টি হাতির একটি দলের অস্থায়ী আবাস প্রতি বছর ৩-৪ মাসের জন্য।
একজন লোকের, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একা লড়াই করে জয়লাভ করার মত আশ্চর্য ইচ্ছাশক্তি আমাদের অবাক করে।যেখানে আমরা আমাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য গাছ কাটতে দ্বিধা করি না, তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ জন্য সমস্ত পার্থিব আনন্দ উৎসর্গ করেছেন।
তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট
Forest man
আমার অন্যান্য পোস্ট -
করিমুল হক - " বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা "
একজন নারী যিনি সবজি বিক্রি করে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন।
মহৎপ্রাণ মহারাজা দিগ্বিজয় সিং জাদেজা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পোল্যান্ড
একজন ডাক্তারের মৃত্যু
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ৯:৫৬