খুব কম লোকই আছেন যিনি কোন স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে। 65 বছর বয়সী এক নারী, সুচিকিৎসার অভাবে তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে।আর আজকে তিনি একটি আস্ত হাসপাতাল বানিয়েছেন,যাতে অন্য কারো তাঁর মত দুর্ভাগ্য না হয়।
সুভাষিনী মিস্ত্রি পশ্চিমবঙ্গে একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে করেন এবং ২৩ বছর বয়সে একটি সরকারি হাসপাতালে অসুস্থতার জন্য ভাল চিকিৎসার অভাবে তার স্বামী মারা যান। তিনি একজন দরিদ্র শ্রমিক ছিলেন। সুভাষিনী তার বাচ্চাদের সাথে একা হয়ে পড়েন।
পরবর্তী ২০ বছর ধরে, তিনি হোটেলে বাসন মেজে, জুতা পালিশ,নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২০ বছর ধরে কলকাতার পার্ক সার্কাসে সবজি বিক্রি করেছেন। কিন্তু বাড়তি এক টাকা ও বিলাসিতার জন্য খরচ করেন নি শুধুমাত্র নিজের স্বপ্নকে সাকার করার জন্য।
তাঁর কথায় "আমি প্রায় পাঁচ টাকা আয় করেছি। দুই টাকা বাড়ী ভাড়ার জন্য, দুই টাকা খাওয়ার জন্য ছিল এবং আমি এক টাকা বাঁচাতাম "।
সুভাষিনী জীবনের একমাত্র আশার আলো ছিল তার জ্যেষ্ঠ পুত্র অজয়। মেধাবী অজয়কে স্কুলে পড়ানোর খরচা বহন করার সামর্থ্য তাঁর ছিল না, তাই তিনি তাকে একটি অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেন। পরবর্তীতে অজয় একজন ডাক্তার হয়ে ওঠেন।
১৯৯৩ সালের শেষের দিকে, সুভাষিনী তার জীবনের দীর্ঘ সঞ্চয় থেকে কেনা এক একর জমিতে একটি ছোট একচালা দাঁড় করেন। এভাবে তাঁর আজীবন স্বপ্নের হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। তার ছেলে অজয় এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার অন্য একটি হাসপাতালে তাদের শিফটে কাজ করার পাশাপাশি এখানেও পরিষেবা দেওয়া শুরু করেন।
প্রথম দিন তারা ২৫২ জন রোগীর চিকিত্সা করেন। রোগীদের বাইরে লাইন দেখে সেদিন তিনি তাঁর চোখ দিয়ে আনন্দঅশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।তিনি অজয়কে বলেন "এটা যথেষ্ট নয়,আমাদের একটি উপযুক্ত হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে"।
তাই তিনি সবজি বিক্রি করতে রাস্তায় ফিরে গেলেন। তার অন্য ছেলে সুজয়,যিনি কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলেন, তার সাথে যোগ দিলেন এবং একসঙ্গে তারা আরও বেশি উপার্জন শুরু করেন এবং আরো সঞ্চয় শুরু করেন। এদিকে অজয় corporate company-র কাছে সাহায্যর জন্য দরবার শুরু করেন। এইভাবে স্থানীয় অধিবাসীদের, কোম্পানি ও নান দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থসাহায্যের মাধ্যমে ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫, একটি উপযুক্ত হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এক বছর পর, ৯ই মার্চ,১৯৯৬ তারিখে দু-তলা হিউম্যানিটি হাসপাতালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
আজকে তিন একর জমির মধ্যে হাসপাতাল দাড়িয়ে আছে যেখানে একদল সুচিকিৎসক আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দরিদ্রের জন্য জটিল অস্ত্রোপচার মাত্র 5000 টাকা থেকে কম নেওয়া হয় এবং ছোটখাট অসুস্থতার জন্য 10 টাকা ফি নেওয়া হয়।
তাঁর এই সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার তাকে "পদ্মশ্রী" পুরস্কারে ভূষিত করেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:৪১