নির্বাচনকালীন সাম্প্রতিক সহিংস পরিস্থিতিতে নাগরিকসমাজই বোধকরি সবচেয়ে অসহায় গোষ্ঠী। সেই অসহায় গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে কিছু অভিমত দেয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারছিনা আমরা। অভিমতগুলো আমার ফেইসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে দিয়ে চলেছি, তাই কোন কোনটির বাস্তবতায় কিছুটা পরিবর্তন পেলে তাতে কনফিউজ না হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
নাগরিক অভিমত-১
===========
হরতাল, অবরোধের সাম্প্রতিক কর্মসূচীগুলো খুব নির্মম আর পৈশাচিক চেহারা পেয়েছে। এর মূল শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভয়ঙ্কর কোন সন্ত্রাসী যেমন দাবী আদায়ের জন্য শিশু বা নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে এটাও অনেকটা তেমন। স্বাধীনতা যুদ্ধ ও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনগুলোতে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচী ছিল এবং তাতে সংখ্যাগড়িষ্ট জনগণ অংশগ্রহন করেছিল। বর্তমানে যা হচ্ছে তাতে বিরোধীদলের কট্টর সমর্থক ও ভারাটিয়া সন্ত্রাসী ছাড়া আর কেও সরাসরি অংশগ্রহন করছেনা। বরং এসব পৈশাচিক কর্মকান্ডের মূল ভিকটিম হচ্ছে শিশু, নারী, অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষসহ সাধারণ জনগন। রাজনৈতিকভাবে তেমন পেরে উঠছেনা বলেই নীতিবিবর্জিত এ ধ্বংসাত্বক পথ হয়তো বেছে নিয়েছে বিরোধীপক্ষ যা তাদের পক্ষে যাবেনা বলেই মনে হচ্ছে।
নাগরিক অভিমত-২
===========
"বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৪০টি দলের ভেতর মাত্র ১১টি দল সর্বদলীয় (বা বহুদলীয়) সরকারের এ নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে চায়। আর ২৪টি দল চায়না। ১টি দল এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, আর ৪টি দল আলোচনাতেই নেই। এই যখন বাস্তবতা, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থাটি ফিরিয়ে আনলে সমস্যাটি কোথায়, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যখন চরম আস্থাহীনতার সম্পর্ক বিরাজমান?"
এক পারিবারিক আড্ডায় জনৈক সিনিয়র সাংবাদিক বলছিলেন এমনটাই। উপরোক্ত তথ্য যদি পূরো সঠিক নাও হয় তবু বলা যায় দেশের মানুষের শান্তির স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের জন্য পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়াই উত্তম। এ পদ্ধতিটিতো পরীক্ষিত এবং উভয় বড় দলই এই পদ্ধতিতে একাধিকবার বিজয়ী হয়েছে। তাহলে সমস্যা কোথায়?
নাগরিক অভিমত-৩
===========
প্রশ্নঃ বিরোধী ১৮ দলীয় জোট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে দু’দফা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী শনিবার থেকে আবারও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ। এমন কর্মসূচির মাধ্যমে বিরোধী জোট সরকারের ওপর এখন পর্যন্ত কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছে?
উত্তরঃ বিরোধী জোট সরকারের উপর তেমন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি তবে ট্রেনে ঘৃন্য নাশকতা ও নিরীহ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কারণে সর্বস্তরের জনগনের প্রবল বিতৃষ্ণা অর্জন করতে পেরেছে। জনগনের তীব্র ঘৃনার কিছুটা যে সরকারের উপর যায়নি তা বলা যায়না তবে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির উদ্দেশ্য কাঙ্খিতমাত্রায় পূরনও হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে বিএনপি এমন কিছু মানুষের বুদ্ধি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে যাদের রয়েছে অপরিনামদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমহীনতার এক অদ্ভুৎ মিশেল।
নাগরিক অভিমত-৪
===========
জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সফরের মেয়াদ তিনি অন্তত আরো একদিন বাড়িয়েছেন। সফরের "সময় বৃদ্ধি"-র বিষয়টি ইতিবাচক ইংগিত বহন করে। প্রচেষ্টার এ পর্যায়ে তারানকো সাহেবের মনে হতে পারে- প্রধান দুই দল সমঝোতার বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে। অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যায়, এই কুটনীতিকের বহুপাক্ষিক আলোচনায় যতটা অগ্রগতি হয়েছে, দুই নেত্রী একত্রে বসলেও ততোটা হতোনা। কারণ উনাদের সরাসরি আলোচনায় যতটা সমাধানের কথা আসতে পারতো তারওচেয়েও হয়তো বেশী এসে যেত কে কতটা দোষ এযাবত করেছেন সেই অপ্রয়োজনীয় বিষয়টি।
নাগরিক অভিমত-৫
===========
একটা বিষয় খুব ব্যথিত করে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কেও কিছু বললেই এর বিপক্ষের লোকেরা আওয়ামীলীগ কবে কোন ভুল/খারাপ কাজগুলো করেছে সেই ফিরিস্তি দেয়া শুরু করে। আওয়ামীলীগ ভুল করলে সে দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদেরকে কেন নিতে হবে? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষ আওয়ামীপন্থী তা কে বলেছে? মুক্তিযুদ্ধে দলটির বড় অবদান থাকলেও মনে রাখতে হবে, আওয়ামীলীগ একটি দল যা সব মানুষের নয়, কিছু মানুষের দল এবং তারা ভুলেরও উর্দ্ধে নয়। আর মহান মুক্তিযুদ্ধ? অতি নগণ্য একটা গোষ্ঠী ছাড়া আমাদের সবার!
[আরেকটি বিনীত অনুরোধঃ দয়াকরে কোন দলীয় ট্যাগ লাগাবেন না। বড় দল দুটোসহ এদেশের বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলের বেশীরভাগ কর্মকান্ডই আমার অপছন্দ]