আমি খুব ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। আমার পরিবারের সবাই ও তাই। বছরে দুবছরে দেশের ভেতরে বা বাইরে ঘোরাঘুরি করি। দেশের বাইরে বলতে এর আগে নেপাল আর ভারতে ভ্রমণ হয়েছে। গত বছর ছুটি ছাটা সেভাবে পাইনি বলে আর কোথাও যাওয়া হয়নি। এবছর কোথায় যাওয়া যাই তাই ভাবছিলাম। ট্রাভেল কোম্পানি গুলোর অফার এ চোখ রাখছিলাম, লেক্সাসের অফার বেশ পছন্দ হল। একবারে সিংগাপুর+কুয়ালালাম্পুরের ভ্রমণ প্যাকেজ । আবার কোনও ইন্টারেস্ট ছাড়াই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ক্রেডিট কার্ডে ৬ মাসের ইনস্টলমেন্টে পেমেন্টের সুবিধাও দিচ্ছে ! ভাবলাম এটাই ভাল হবে ।
ভিসা-টিকেট সব ঠিকঠাক করার পর এলো সেই কাংখিত দিন । আমাদের ফ্লাইট ছিল গভীর রাতে । রাস্তার জ্যাম-ট্যাম বিবেচনা করে বেরিয়ে পড়েছিলাম ৯ টার পরই। আমরা প্রথমে যাব সিংগাপুর। সেখানে ট্রাভেল কোম্পানির আয়োজন মোতাবেক হোটেল, ঘোরাঘুরি থাকবে। তারপর যাওয়া হবে কুয়ালালামপুর। নির্ধারিত সময়ে প্লেন ছেড়ে গেল। সিংগাপুর পৌঁছে গেলাম। চ্যাংগি এয়ারপোর্ট থেকে ক্যাবে চড়ে আমরা রওনা হলাম হোটেলে। ছুটন্ত ক্যাব থেকেই দেখলাম, যে শহ টা অসম্ভব সুন্দর। এত যত্ন আর প্ল্যান করে তারা ছিমছাম ভাবে সাজিয়ে রেখেছে। কোথাও কোন কদর্যতা নেই। রাস্তার দুপাশে সারি সারি চোখ ধাঁধানো রং বেরংের ফুলের সারি। বাতাসে কোন দূষণ নেই। আধুনিক প্যাটার্নের বিল্ডিং আর সুশৃংখল রাস্তা, সাবওয়ে। যে কারণে প্রচু গাড়ি থাকা সত্ত্বেও কোন সমস্যা হচ্ছিল না। নিজের দেশের কথা মনে করে মন টা হুহু করে উঠল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সিংগাপুরের চেয়ে আমরা অনেক বেশিই পেয়েছি, কিন্তু অব্যাবস্থাপনার জন্য সব নিজেরাই নষ্ট করে চলেছি।
হোটেলে গেয়ে রুম বুঝে নিয়ে রেস্ট নিতে গেলাম সবাই। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েই দেখি ঝিরিঝিরি বৃষটি, ঠিক বাংলাদেশের মত। সিংগাপুর চির বসন্তের দেশ। এখানে শীত বলে কিছু নাই। সারা বছর এমন নাতিশীতোষ্ণ থাকে, যখন তখন বৃষ্টি হয় । দুপুরে খাওয়া দাওয়া একটু আগেই সেরে নিয়ে তারপর বের হলাম। গন্তব্য ইউনিভারসেল স্টুডিও । এখানে প্রবেশের ফি তা একটু বেশি, কিন্তু একবার ঢুকলে আফসোস করবে না কেউই ! বিখ্যাত সব ক্যারেক্টারে সাথে নাচানাচি আর ফটোসেশনের সুযোগ থাকছে। ফোর ডি সিনেমা,ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, জুরাসিক পার্ক, ভয়ংকর উত্তেজনপূর্ণ সব রাইড। কি নেই! এরপর খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম ‘বাসমতি’ রেস্তোরায়। রাতে গন্তব্য ছিল মেরিনা বে। সিংগাপুর ভ্রমণের এটা অন্যতম আকর্ষণ। রাতের আলো ঝলমল সৌন্দর্যের জুড়ি মেলা ভার।রিভার সাইড, আলোময় সব স্থাপনা, রেস্টুরেন্ট, লেজার শো। সব মিলিয়ে আবারো মুগ্ধ। পরদিন জুরাং বার্ড পার্কে পাখিদের সাথে আনন্দময় সময় কাটিয়ে গেলাম লিটল ইন্ডিয়ায়। মুস্তাফা মার্টে আর আশে পাশে ভালমতই শপিং হল, যদিও বাংলাদেশের টাকার সাথে তুলনা করতে কেনাকাটার শখ মিটে যায় !
এরপর যাব কুয়ালালামপুর। পৌঁছেছিলাম রাতে। পুরো শহর আলোয় ঝলমল সাজে সেজেছে। রাতে কাউবয় টাউনে শো দেখলাম। পরদিন থেকে এফামোসা এ্যানিমেল ওয়ার্ল্ড সাফারী পার্ক, বাতু ক্যাভস, গেন্টিং হাইল্যান্ড, কে. এল টাওয়ারে কদিন চুটিয়ে ঘোরা হল । সব মিলিয়ে অসাধারণ ট্যুর ছিল !
ট্যুর থেকে ফিরে ঘুরে ফিরে বারবারই মনে হয়েছে, আমাদের দেশে প্রকৃতি অঞ্জলি ভরে সৌন্দর্য আর সম্পদ দিয়েছেন। অথচ আমরা এইসব দেশ থেকে পিছিয়ে আছি। ওদের প্রাকৃতিক সম্পদ অতটা না থাকলেও শুধু মাত্র নিজেদের ব্যাবস্থাপনায় সবকিছু এত সুন্দর করে ফেলেছে। ওরা যদি পারে, আমরা কেন পারবনা?? অপেক্ষায় আছি সেদিনের যেদিন আমাদের দেশ টাও পর্যটনে এমন উন্নতি করবে!