somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো আদর মন্দ আদর

০৯ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
‘’কি যে সন্তর্পণে রাসু স্পর্শ করে গোপীর হাঁটু!’’
পদ্মা নদীর মাঝি পড়াতে পড়াতে সিস্টার শিখা হঠাৎ আমাদের বললেন, ‘’মেয়েরা! লাইনটা খেয়াল কর।‘’ তারপরে বুঝিয়ে দিলেন নানা রকম স্পর্শের কথা। মন খারাপ হলে বন্ধু হয়ত কিছুই বলছে না, শুধু কাঁধে হাত রেখে দিয়েছে। সাফল্যে বন্ধু ‘’সাব্বাস’’ বলে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। বাবা-মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেক সময় আমরা দেখি রিক্সায় করে এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা যাচ্ছে। প্রেমিক শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে প্রেমিকার কোমর। এটাও এক ধরনের স্পর্শ। এ স্পর্শে ঐ মেয়েটির যেরকম অনুভূতি হচ্ছে, রাস্তায় যে ভিক্ষা করে খোঁড়া মেয়েটা তার অনুভূতিও নাকি একই রকম হবে। এমন কি আমারও। প্রতিটি স্পর্শই আলাদা রকমের। ক্লাসে সেদিন সিস্টার খুব জোর দিয়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘’মেয়েরা! প্রতিটা স্পর্শ তোমাদের আলাদা করে বুঝতে হবে।‘’ টিউবলাইট আমি তখনও বুঝতে পারিনি রাসু কেন এত সন্তর্পণে গোপীর হাঁটু স্পর্শ করেছিল। তবে সেদিন সিস্টার শিখার বলা কথাগুলো ভুলিনি। সেদিন তিনি আরো অনেক কথা বলেছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি আমার মায়ের চেয়েও এই সিস্টার শিখা আমাকে অনেক বেশি সচেতন করে দিয়েছেন। হয়ত আমার মা আমাকে একটা কিছু মানা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা এমন ভাবে ব্যাখ্যাহীনভাবে মানা করেছেন যে, আমার খুব জেদ হত সেই কাজটাই করার। নেহাত লক্ষ্ণী মেয়ে (সবাই তো তাই বলত!) ছিলাম বলে করিনি। কিন্তু সচেতনতা যদি কেউ সৃষ্টি করে থাকে তবে সেটা এই সিস্টার শিখা। কত কিছু যে শিখেছি! এমন কি কারো সামনে উচ্চারণ করা যায় না, এমন স্ল্যাং পর্যন্ত! সিস্টারকে ধন্যবাদ ঐ স্ল্যাংটা সম্পর্কে ধারণা দেবার জন্য। তা না হলে আমার সামনে কেউ ওটা বললে কখনো কি বুঝতাম?


২.
সিস্টার শিখা আমাদের যেভাবে সচেতন করে দিয়েছেন, এভাবে প্রতিটা বাবা-মায়ের উচিত তাঁদের সন্তানদের সচেতন করে তোলা। বিশেষ করে ভাল আদর ও মন্দ আদর এই বিষয় গুলো নিয়ে সন্তানের সাথে খোলাখুলি আলাপ করা উচিত। ছোট শিশুরা বিকৃত রুচির মানুষ (!) দের দ্বারা নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পরিচিত লোকজনের দ্বারা ওরা ব্যবহৃত হয়।

যা পরবর্তীতে শিশুর মনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এ ব্যাপারে ওদের সচেতন করে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। এজন্য অভিভাবক হিসেবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করছি।

 ছোট শিশুদেরকে তাদের দেহের প্রতিটি অংগ-প্রতঙ্গের নাম শেখাতে হবে এবং সঠিকভাবে।
 কোন অংগগুলো গোপন তা ওদের বলে দিতে হবে।
 গোপন অংগগুলো যে কাউকে দেখানো বা কারো দ্বারা স্পর্শ করানো যাবে না, শিশুকে তা বলে দিতে হবে।
 শিশুকে বলে দিন, যদি কখনো কাউকে (যেমন ডাক্তার) গোপন অংগ দেখানো বা স্পর্শ করার প্রয়োজন পরে, তবে অবশ্যই সেটা তার বাবা-মায়ের সামনে হতে হবে।
 শিশুকে বলে দিন, ওর গোপন অংগ যদি কেউ দেখতে বা স্পর্শ করতে চায় অথবা কেউ যদি তার নিজের গোপন অংগ শিশুকে দেখাতে বা তাকে দিয়ে স্পর্শ করাতে চায়, তবে সে যেন অবশ্যই খবরটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার বাবা-মাকে জানায়।
 কারো সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময়, জড়িয়ে ধরা বা চুমু/আদর ইত্যাদি স্পর্শ যদি শিশুর কাছে অস্বস্তিকর মনে হয় তবে সে যেন ঐ ব্যক্তিকে ‘’না’’ বলে দেয়, শিখিয়ে দিন।
 সাধারনত দেখা যায় Abuser রা শিশুকে শিখিয়ে দেয়, কথাটি যেন সে কাউকে না বলে। তাই আপনার শিশুটিকে আগে থেকেই শিখিয়ে রাখুন, সে Abused হলে তা যেন লুকিয়ে না রাখে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাবা-মায়ের সাথে যেন শেয়ার করে। আর কথাটা জানার ফলে শিশুর যে কোন রকম কোন ক্ষতি হবে না, এ ব্যাপারেও তাকে আশ্বস্ত করতে হবে।
 এ ধরনের তথ্যগুলো শিশুকে একদিনেই শিখিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। প্রতিদিন একটু একটু করে তাকে ধারণা দিন।
 শিশুরা অনেক সময় বাবা-মায়ের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতে চায় না। এক্ষেত্রে তার পছন্দের ব্যক্তিটি সম্পর্কে তথ্য জেনে নিতে হবে।
 শিশু যেন বাবা-মায়ের সাথে সব কিছু শেয়ার করে, সে জন্য একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে নিতে হবে।একদিনে কোন সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় না। তাই প্রয়োজন শিশুকে সময় দেওয়া। সারাদিন সে কী করল, স্কুলে কার সাথে খেলা করল, কীভাবে খেলা করল জেনে নিতে হবে। শিশুর স্কুলের পরে কোন কর্মকাণ্ডে (যেমন খেলা, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি) জড়িত থাকলে, সেগুলো সম্পর্কেও প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে।
 শিশুর স্কুলের অন্যান্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হতে হবে।
 শিশু যদি খুব বেশি টিভি দেখে বা গেম খেলে, তবে বাবা-মাকেও তাদের সাথে টিভি দেখতে বা গেম খেলতে হবে। যদি শিশুদের যৌন নির্যাতনের উপর কোন টিভি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তবে শিশুর সাথে বসে দেখুন। এ ব্যাপারে কথা বলে তাকে সচেতন করে তুলুন।


মনে রাখতে হবে, ছোট শিশুরা সব বোঝে। তবে ওরা বোঝে ওদের মত করে। যে কোন ধরনের শিক্ষাই ওদের দেওয়া সম্ভব, যদি সেটা ওদের বয়স উপযোগী করে দেওয়া যায়। প্রতিটি শিশুর শৈশব যেন হয় নিরাপদ।

৮ আগস্ট, ২০১১

পরের পর্ব পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে ঃ পর্ব ৩--http://www.somewhereinblog.net/blog/eijeduniya/29574759
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩২
২৭টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×