‘’কি যে সন্তর্পণে রাসু স্পর্শ করে গোপীর হাঁটু!’’
পদ্মা নদীর মাঝি পড়াতে পড়াতে সিস্টার শিখা হঠাৎ আমাদের বললেন, ‘’মেয়েরা! লাইনটা খেয়াল কর।‘’ তারপরে বুঝিয়ে দিলেন নানা রকম স্পর্শের কথা। মন খারাপ হলে বন্ধু হয়ত কিছুই বলছে না, শুধু কাঁধে হাত রেখে দিয়েছে। সাফল্যে বন্ধু ‘’সাব্বাস’’ বলে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। বাবা-মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেক সময় আমরা দেখি রিক্সায় করে এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা যাচ্ছে। প্রেমিক শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে প্রেমিকার কোমর। এটাও এক ধরনের স্পর্শ। এ স্পর্শে ঐ মেয়েটির যেরকম অনুভূতি হচ্ছে, রাস্তায় যে ভিক্ষা করে খোঁড়া মেয়েটা তার অনুভূতিও নাকি একই রকম হবে। এমন কি আমারও। প্রতিটি স্পর্শই আলাদা রকমের। ক্লাসে সেদিন সিস্টার খুব জোর দিয়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘’মেয়েরা! প্রতিটা স্পর্শ তোমাদের আলাদা করে বুঝতে হবে।‘’ টিউবলাইট আমি তখনও বুঝতে পারিনি রাসু কেন এত সন্তর্পণে গোপীর হাঁটু স্পর্শ করেছিল। তবে সেদিন সিস্টার শিখার বলা কথাগুলো ভুলিনি। সেদিন তিনি আরো অনেক কথা বলেছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি আমার মায়ের চেয়েও এই সিস্টার শিখা আমাকে অনেক বেশি সচেতন করে দিয়েছেন। হয়ত আমার মা আমাকে একটা কিছু মানা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা এমন ভাবে ব্যাখ্যাহীনভাবে মানা করেছেন যে, আমার খুব জেদ হত সেই কাজটাই করার। নেহাত লক্ষ্ণী মেয়ে (সবাই তো তাই বলত!) ছিলাম বলে করিনি। কিন্তু সচেতনতা যদি কেউ সৃষ্টি করে থাকে তবে সেটা এই সিস্টার শিখা। কত কিছু যে শিখেছি! এমন কি কারো সামনে উচ্চারণ করা যায় না, এমন স্ল্যাং পর্যন্ত! সিস্টারকে ধন্যবাদ ঐ স্ল্যাংটা সম্পর্কে ধারণা দেবার জন্য। তা না হলে আমার সামনে কেউ ওটা বললে কখনো কি বুঝতাম?
২.
সিস্টার শিখা আমাদের যেভাবে সচেতন করে দিয়েছেন, এভাবে প্রতিটা বাবা-মায়ের উচিত তাঁদের সন্তানদের সচেতন করে তোলা। বিশেষ করে ভাল আদর ও মন্দ আদর এই বিষয় গুলো নিয়ে সন্তানের সাথে খোলাখুলি আলাপ করা উচিত। ছোট শিশুরা বিকৃত রুচির মানুষ (!) দের দ্বারা নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পরিচিত লোকজনের দ্বারা ওরা ব্যবহৃত হয়।
যা পরবর্তীতে শিশুর মনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এ ব্যাপারে ওদের সচেতন করে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। এজন্য অভিভাবক হিসেবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করছি।
ছোট শিশুদেরকে তাদের দেহের প্রতিটি অংগ-প্রতঙ্গের নাম শেখাতে হবে এবং সঠিকভাবে।
কোন অংগগুলো গোপন তা ওদের বলে দিতে হবে।
গোপন অংগগুলো যে কাউকে দেখানো বা কারো দ্বারা স্পর্শ করানো যাবে না, শিশুকে তা বলে দিতে হবে।
শিশুকে বলে দিন, যদি কখনো কাউকে (যেমন ডাক্তার) গোপন অংগ দেখানো বা স্পর্শ করার প্রয়োজন পরে, তবে অবশ্যই সেটা তার বাবা-মায়ের সামনে হতে হবে।
শিশুকে বলে দিন, ওর গোপন অংগ যদি কেউ দেখতে বা স্পর্শ করতে চায় অথবা কেউ যদি তার নিজের গোপন অংগ শিশুকে দেখাতে বা তাকে দিয়ে স্পর্শ করাতে চায়, তবে সে যেন অবশ্যই খবরটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার বাবা-মাকে জানায়।
কারো সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময়, জড়িয়ে ধরা বা চুমু/আদর ইত্যাদি স্পর্শ যদি শিশুর কাছে অস্বস্তিকর মনে হয় তবে সে যেন ঐ ব্যক্তিকে ‘’না’’ বলে দেয়, শিখিয়ে দিন।
সাধারনত দেখা যায় Abuser রা শিশুকে শিখিয়ে দেয়, কথাটি যেন সে কাউকে না বলে। তাই আপনার শিশুটিকে আগে থেকেই শিখিয়ে রাখুন, সে Abused হলে তা যেন লুকিয়ে না রাখে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাবা-মায়ের সাথে যেন শেয়ার করে। আর কথাটা জানার ফলে শিশুর যে কোন রকম কোন ক্ষতি হবে না, এ ব্যাপারেও তাকে আশ্বস্ত করতে হবে।
এ ধরনের তথ্যগুলো শিশুকে একদিনেই শিখিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। প্রতিদিন একটু একটু করে তাকে ধারণা দিন।
শিশুরা অনেক সময় বাবা-মায়ের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতে চায় না। এক্ষেত্রে তার পছন্দের ব্যক্তিটি সম্পর্কে তথ্য জেনে নিতে হবে।
শিশু যেন বাবা-মায়ের সাথে সব কিছু শেয়ার করে, সে জন্য একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে নিতে হবে।একদিনে কোন সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় না। তাই প্রয়োজন শিশুকে সময় দেওয়া। সারাদিন সে কী করল, স্কুলে কার সাথে খেলা করল, কীভাবে খেলা করল জেনে নিতে হবে। শিশুর স্কুলের পরে কোন কর্মকাণ্ডে (যেমন খেলা, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি) জড়িত থাকলে, সেগুলো সম্পর্কেও প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে।
শিশুর স্কুলের অন্যান্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হতে হবে।
শিশু যদি খুব বেশি টিভি দেখে বা গেম খেলে, তবে বাবা-মাকেও তাদের সাথে টিভি দেখতে বা গেম খেলতে হবে। যদি শিশুদের যৌন নির্যাতনের উপর কোন টিভি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তবে শিশুর সাথে বসে দেখুন। এ ব্যাপারে কথা বলে তাকে সচেতন করে তুলুন।
মনে রাখতে হবে, ছোট শিশুরা সব বোঝে। তবে ওরা বোঝে ওদের মত করে। যে কোন ধরনের শিক্ষাই ওদের দেওয়া সম্ভব, যদি সেটা ওদের বয়স উপযোগী করে দেওয়া যায়। প্রতিটি শিশুর শৈশব যেন হয় নিরাপদ।
৮ আগস্ট, ২০১১
পরের পর্ব পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে ঃ পর্ব ৩--http://www.somewhereinblog.net/blog/eijeduniya/29574759
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩২