somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁধার ...

২৫ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাঢ় অন্ধকার। অন্ধকার অথবা অন্ধত্ব- ঠিক ধরতে পারিনি প্রথমটায়। নিস্তব্ধ চারপাশ। হঠাৎ জ্বলে ওঠা তীব্র সাদা আলো চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিলো। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আসছে শরীর। নড়তে পারছি না। হাত, পা, মুখ-বাঁধা। চিৎকার করে যন্ত্রণাটা হালকা করার কোনও পথ নেই। এভাবে থাকতে থাকতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যাবার পর আলোতে চোখ সয়ে এলো। বুঝতে চেষ্টা করলাম, কোথায় আছি। আশে-পাশে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তীব্র আলোটা স্পট লাইটের মত শুধু আমাকেই আলোকিত করে রেখেছে, আশে-পাশে দেখার উপায় নেই।

*

অন্ধকার , স্যাঁতসেঁতে এক দূর্গ। মেঝেতে তার পেট্রল আর গ্রীজের প্রলেপ। যেকোন মুহূর্তে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। অন্ধকারে দেয়াল হাতড়ে সিঁড়ি খুঁজছি। কে যেন হাতটা ধরে সিঁড়ির কাছে পৌঁছে দিলো। সংকীর্ণ, খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নামছি, আন্দাজ করে পা ফেলছি, সাবধানে। পা পিছলে গেলে মুহুর্তেই তলিয়ে যেতে হবে অতল অন্ধকারে। ধীরে ধীরে বাতাস ভারী, গুমোট হয়ে উঠছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সিঁড়ি বেয়ে নামছি তো নামছিই। যেন শেষ নেই এই সিঁড়ির।

*

বাসটা মোড়ের কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। বেশ নির্জন, সুপ্রশস্ত একটা রাস্তা। ডিরেকশন অনুযায়ী এই চৌরাস্তার মোড় থেকে ডানদিকে যেতে হবে আমাকে। আশে-পাশে রিকশা তো দূরের কথা একটা মানুষ পর্যন্ত নেই। উপায় না দেখে হাতের ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। সামনে এগোলে মানুষ দেখতে পাবো আশা করছিলাম। কিন্তু যতই সামনে এগোচ্ছি জায়গা যেন ততই লোকালয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এগোতে এগোতে ঘন একটা বনের মত জায়গায় চলে এসেছি। ঠিকানা ভুল করলাম না তো ? নাহ, চিরকুটে লেখা নির্দেশ অনুযায়ী স্টারলাইন বাসের শেষ স্টপেজ এই মোড়টায় আমি নেমে যাবো আর সেখান থেকে ডানে এগোলে পৌঁছে যাবার কথা। মনে সংশয় নিয়েই আরো একটু এগোই। একসময় মনে হতে থাকলো, বনের শেষের দিকে চলে এসেছি। বন পেরিয়ে সুবিশাল একটা মাঠ । মাঠের পাশ দিয়ে এই রাস্তা ধরে একদম শেষ মাথায় দেখা যাচ্ছে একটা চারতলা , সাদা বিল্ডিং। নাহ, ঠিকানা ভুল হয়নি তাহলে।

আমাকে রুম দেওয়া হয়েছে ২০৩ নং রুমে। ৩ বেডের একটা রুম। বাকি দুইজন রুমমেটের সাথে পরিচয় হলো। বেশ হাসি-খুশি আর হেল্পফুল। স্বস্তি পেলাম, দিন খুব একটা খারাপ কাটবে না এখানে।

প্রথম কয়েকটা দিন আসলেও খারাপ কাটলো না। মাসখানেক পর হঠাৎ একদিন সকালে বাড়ি থেকে ফোন এলো, বাড়ি ফেরা জরুরী, সম্ভব হলে সেইদিনই। দ্রুত বেরিয়ে সেই ঘন বন পেরিয়ে শহরে যাই, স্টারলাইনের ফিরতি টিকেট কিনতে। বাসের সময় হয়ে আসছে, প্রথম দিনে যে মোড়টায় নামিয়ে দিয়েছিল ঠিক ওখানেই দাঁড়াতে হবে। ফিরে এসে দ্রুত গুছিয়ে রাখা ব্যাগ নিতে রুমে ঢুকলাম। দরজা খুলে রুমে পা দিতে যাবো, তাকিয়ে দেখি মেঝে নেই, কিছুই নেই। বিছানা নেই, আসবাব পত্র নেই, রুমমেটরা নেই- কিছুই নেই। ২০৩ নং রুমের খোলা দরজাটা দিয়ে উঁকি দিলে নিচে দেখা যায় শুধু অতল অন্ধকার।




সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:০৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আহত আততায়ী

লিখেছেন রাজীব নুর, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩০



সভ্য নগরের মানুষ যেনবা বনমানুষ।
মানুষকে মানে না মানুষ;
আর মানুষের হানাহানি দেখে হাসে বনের মানুষ।

পথে না বেরোলে জানতামই না-
কতটা রপ্ত করেছি আমরা অবজ্ঞা অবহেলা ও পরচর্চা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ টাকার চাল ইতিহাসের সেরা দাম (এখন ৮৫), এই দামে ওনাদের চোখে পানি আসেনা৷

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

আমার বাবা সরকারি চাকরী করছে, একাই বিশাল যৌথ ফ্যামিলি চালাইসে৷ যার ফলে প্রচুর ঋণ হইসে৷ কিন্তু কোনোদিন চুরি করেন নাই৷ গ্রামীন ব্যাংক থেকে বাবা ১০ হাজার টাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ওয়ান ম্যান আর্মি!!!!!

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

পেপ্যাল লোগোটি বিবিসি ওয়েব পেইজ থেকে সংগৃহিত।

ভূমিকা

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন এক অনস্বীকার্য শক্তি। আপওয়ার্ক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×