
দীর্ঘ জলাশয়ের ধার ঘেঁষে শত শত ইউক্যালিপ্টাস, সেগুন আর কৃষ্ণচূড়ার সারি। সুদীর্ঘ গাছগুলোর ছায়ার নিচে পীচঢালা এক পথ। সে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম পুরনো তিনতলা একটি দালানের এর সামনে। শ্যাওলা ধরা, সানশেডের উপর থেকে বটের ঝুড়ি নেমে আসা একটা দালান। খুব চেনা মনে হলো। মনে হলো, এর প্রতিটি জানালা, দরজা এমনকি ইটগুলোও যেন ভীষণ আপন! অদৃশ্য কিছু একটা টেনে এনেছে এখানে।
হঠাৎ সামনের দৃশ্যটা যেন বদলে যেতে শুরু করলো। ঝাপসা হয়ে আসতে থাকা সেপিয়া রঙের দৃশ্যগুলো ধীরে ধীরে উজ্জ্বল, রঙিন কিছু দৃশ্যে রূপান্তরিত হতে লাগলো। নীরবতা ভেঙে করিডোরগুলো ভরে গেল হাজার শিশু-কিশোরের কোলাহলে। নিশ্চুপ পৃথিবী জেগে উঠছে।
ঐ তো কলপাড়ে দেখা যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের একটা জটলা। টিফিনের বিরতি। অসংখ্য শিশুর কলকল ধ্বনিতে প্রাঙ্গন মুখরিত। হৈ হৈ করতে করতে ছুটে চলেছে ক্যান্টিনের দিকে। দু টাকার ক্রীম রোল অথবা তিন টাকার ডালপুরী শেষ হয়ে যাবার আগেই পৌঁছুতে হবে ।
আরে! মাঠের ঐ পুব কোণটায় ওরা কারা? ক্লাস ফোরের সেই চার বান্ধবী না ? আজকে তো ওদের পিকনিক! কেউ এনেছে খিচুড়ি, কেউ চন্দ্রপুলি, কেউ আবার নারকেলের বরফী আর আরেকজনের ভাগে পড়েছে কোল্ড ড্রিংক্সের দায়িত্ব। এরকম ছোটখাট পিকনিক ওরা প্রায়ই করে থাকে।
এই রে! পেয়ারা বাগানটা থেকে আজকে আবার দুষ্টুগুলোকে ধরে ফেলেছে বুঝি। পেয়ারাগুলো বড় হবার আগেই সাবড়ে দেবার দুষ্টু বুদ্ধি! আর ঐ যে, জলপাই গাছটারও কি বেহাল দশা করে দিয়েছে। জলপাই না পেলে কি হবে, টক টক পাতাগুলোর মজাই বা কম কীসে!
ঢং ঢং ঢং! ওয়ার্নিং বেল পড়ে গেছে। ক্লাসের দিকে ছুট লাগিয়েছে সবাই।
আবার নীরব হয়ে আসে চারপাশ।
সচকিত হই। দৃশ্যগুলোর রঙ পালটে যায় আবার। এবার আর সেপিয়া নয়, পুরো সাদা-কালো হয়ে যায়। চেয়ে দেখি, দাঁড়িয়ে আছি নিউরণের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা প্রিয় বিদ্যাপীঠের প্রাঙ্গনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১২ রাত ১২:১৮