[ডিসক্লেইমার: পাহাড়ে উঠার ম্যানুয়াল ব্যাক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। একেকজনের স্টাইল একেক রকম। নিচের লিখাটা সম্পূর্ন আমার জন্য প্রযোজ্য। আমার একজন প্রিয় লেখক পাওলো কোয়েলহোর বল্গে পাহাড়ে উঠার ম্যানুয়াল টা পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে নিজের সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে এটা লিখলাম। আমি এমন কিছু ¤¤¤¤ করে ফেলি নাই। মাত্র নেমেছি আমি, পথ তো অসীম। প্রতিনিয়ত শিখছি , এই ম্যানুয়াল ও দিন দিন পাল্টাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাল্টাবে। এতকিছু একটা কারনেই লিখা- কালকে বেঁচে থাকব কিনা জানি না। পরে যদি আফসোস থেকে যায়?]
১ পাহাড়ে উঠার কারন টা জানা জরুরী-
আমার ভালো লাগে তাই এমনি এমনি পাহাড়ে উঠি। এমন কিছু বললে একদম ম্যান্দা মারা হয়ে যায়…
তাই একটু কাব্য করেই বলি, আমি রাগী, আমি হিংসুক অহংকারী। অপরদিকে
দানবীয় পাহাড় দাম্ভিকতার গম্ভীর্য গায়ে মেখে আমার দিগন্ত আটকে রাখে।
সে দম্ভ করে বলে-
দেখ আকাশ আমায় চুম্বন করে
আর দিগন্ত আমার দাস,
মেঘ ও করে কুর্নিশ
আমি দূর্ভেদ্য অবতার।
….আমি স্বপ্ন দেখেছি আকাশ ছোঁয়ার, মেঘ খাওয়ার আর বির্স্তীন দিগন্তে সাঁতার কাটার।
স্বপ্নের পথে আমি অবিচল….
তাই আজ আমি প্রকৃতির আভরনে নিজেকে সাজানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এক দুর্ধ্ষ গুপ্তচরের মতই পাহাড়ের সাঁচে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করছি।
তার নিয়মেই তাকে আমি হারাব। তার দানবীয় অহমকে পরাস্ত করব।
এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে উঠব, আমি আকাশ ছোঁব
, মেঘের জলে গোসল করব।
কিন্তু দিগন্তে আমার আবাস গড়া আর হবে না…
হাজার পাহাড় পরাস্ত করে দিগন্তে পৌছালেই আর একটি দিগন্তের হাতছানি….
আমার আর দিগন্তের মাঝে বাধা হয়ে আসতেই থাকবে দৃঢ়কায় পাহাড় আর আমি উঠতেই থাকব….
এটা আমার পাহাড়ে উঠার কারন। তাই নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দেই পাহাড়ে উঠার আগে তাই পাহাড়ে উঠার কারন টা জানার চেষ্টা কর।
হুদাই পিক আপ করে পাবলিক হিরো হবার জন্য কষ্ট কর না। এতে হিট পাবা মাগার গিফট পাবা না চান্দু। পাহাড় সবাইকে সারপ্রাইজ গিফট দেয় না….হুহ !
২ প্ল্যানিং পর্ব অনেক ভাইটাল -
একটা নিয়ার টু পারফেক্ট প্ল্যানের উপর নিভর্র করে এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
তাই প্ল্যানিং এ যথেষ্ঠ সময় দাও। সবদিক বিবেচনা করে রাখো। সব সময় ব্যাক আপ প্ল্যান রেখে কাজ কর।
বিস্তারিত প্ল্যানিং এ আর গেলাম না। (আমার প্ল্যানিং সিক্রেটস শেয়ার করতে অনাগ্রহী )
৩ টীমের সদস্য: যতজন না হলেই নয় -
সদস্যদের পারস্পরিক বোঝাপোড়া কমার হার টীমের সদস্য সংখ্যার সমানুপাতিক।
মানে হল- যত জন তত মত।
আর যত মত তত কনফিউশন। কনফিউশন মানেই পাহাড়ে উঠার দফারফা।
আসল কথা হল আমি খুব হিংসুটে তাই আকাশের চুম্বন যত কম মানুষের সাথে ভাগাভাগি করা যায় আর কি….
৪ অন্যের দেখানো পথে চলা টা জরুরী নহে-
সব যদি আগে থেকে জেনেই যাও তো লাভ টা হল কি?
অচেনা রাস্তা, অজানা আবহাওয়া, আচানক বিপদ সম্পর্কে আগেই জেনে যাবার পর মজার আর বাকি কি থাকে।
নিজে নিজে কিছু করার চ্যালেঞ্জ নাও। পায়ের ছাপ লোকেট করে চিনতে শিখ, তারপর ফলো কর। এতে আত্মিক ক্ষুদার নিবারন ঘটবে অন্যথায় নয়।
একা একা নিজে নিজে ট্রাই করলে প্রথমবারই তুমি সফল নাও হতে পার। কিন্তু যখন পারবে তখন সেই অনুভুতিটির কোন তুলনা হবে না।
৫ প্রকৃতির অংশ হয়ে যাও-
যতটা পার প্রকৃতির অংশ হয়ে যাও। সামনে পানি আসলে মাছ হয়ে যাও,
বিশাল পাথর আসলে টিকটিকি, বনের পাল্লায় পরলে বানর, বুনো জন্তু আক্রমন করলে দুর্ধষ শিকারী আর বরফ এলে ইয়েতি।
মানুষ এলে হতে হবে নম্র। প্রকৃতির নিয়ম কানুন জানতে ও মানতে হবে। নিয়ম ভেঙ্গে তোমার স্বপ্নকে ধূলিস্মাত কর না।
৬ নাই মামা-কানা মামা পুরান কনসেপ্ট; ভালো মামা বিনে পাহাড় উঠা নিষেধ-
আনকমফর্টেবল টীমে জয়েন করা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা একি কথা। এতে সবার আনন্দ মাটি হয়ে যায়। পথ চলার অনন্দ না থাকলে পথের আর কোন মূল্য থাকে না।
৭ চামের উপর চুম্বন নাও, চাপা বাইড়ানোর দরকার নাই-
এক্ষেত্রে পাওলোর সাথে একমত হতে পারলাম না। আমার অভিজ্ঞতা খারাপ। একবার শেয়ার করে খুব ভয়াবহ রকমের ফলাফল পেয়েছি।
এই ব্যাপারে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকতে পারে, কিন্তু তাল গাছ আমার।
এই বিষয়ে একটা কোট করার লোভ সামলাতে পারছি না-
“ পথ পথিকের কাছে যায় না, পথিকই পথের খোঁজ করে নেয়।
যে প্রকৃতই যেতে চায় সে তথ্যের অপেক্ষায় থাকে না। যার যাবার সে এমনি যাবে আমার ইনফোর অপেক্ষায় থাকবে না। কোন পথিক যথি পথে নামে তবে আমি অবশ্যি তাকে পথ দেখিয়ে দিব। কিন্তু পথের হদিস দিয়ে রেখে পথিকের সুনামির দায় নিতে রাজী নই আমি।”
৮ পথ টাই মূল কথা-
আকাশ চুম্বন, স্বপ্ন পূরন- সবই ঠিক আছে। কিন্তু মনে রেখ মজা টা কিন্তু পথ চলার মাঝেই নিহিত। তাই পথে মনোযোগ দাও। চোখ মেলে দেখ চারপাশে কি আছে। প্রকৃতিকে অনুভব কর। উপভোগ কর তার বিশালতাকে…..
৯ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটবেই-
তুমি যতই পারফেক্ট প্ল্যান বানাও ঘটনা ঘটার কোন মা বাপ নাই। সব সময় ধরে রাখো, তুমি ঠিক যা চাচ্ছো না, তখন ঠিক তাই ঘটবে। সেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সাথে তুমি কিভাবে খাপ খাইয়ে চলতে পার তার উপর নির্ভর করে তোমার স্বপ্নের অস্তিত্ব।
১০কঠোরতা সাফল্যের চাবাকাঠি-
পাহাড়ে উঠা কোন ছেলেখেলা নয়। এই পথে আরাম, শান্তি আর স্বস্তির প্রত্যাশা করা নিজের দক্ষতার সাথে প্রতারনা করা। আরামের মরিচিকায় আটকে পরে পাহাড়কে ভুলে যেও না।
[আমি কখনো আবেগ তাড়িত হয়ে কিছু লিখি না। কিন্তু আমার এই পোস্ট টি ব্যাতিক্রম। আমি এক ধরনের জিদ থেকে এই অপরিপক্ব কাঁঠাল টা পয়দা করেছি। সেদিন ফেইসবুকে দেখি আমার মোটামটি সব কয়টা ফ্রেন্ড পাওলোর নীচের ব্লগটা শেয়ার করেছে। পাহাড়ের প্রতি আমার টানের কথা জেনে অনেকেই আমাকে সেই লিঙ্কে ট্যাগ করে দিয়েছে। অস্থির-পিনিক-উরাধুরা-ক্লাইম্বিং মাউন্টেনিয়ারিং এর বাইবেল...।ব ব্লা ব্লা ব্লা সব কমেন্ট। পাওলোর এই ব্লগ টা পড়ে আমার কেন জানি মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো। ম্যানুয়াল বানানোর ও কে? এটা কি নিয়মসিদ্ধ কোন ব্যপার যে আমাকে এই সংবিধান মেনেই চলতে হবে? আমার মতে নিয়মসিদ্ধ মতবাদ আর মাউন্টেনিয়ারিং পরস্পরবিরোধী দুটো জিনিস। পাহাড়কে তুমি কোন নিয়মে বেধেঁ রাখতে পার না। পাহাড় এক এক জনের কাছে এক এক রকম। একেক জনের উপ্লব্ধি এখানে বিভিন্ন। তাই কোন একটি ম্যানুয়ালে আমি তুমি পাওলো পাহাড়কে বেধেঁ দিতে পারি না। আমি বিরক্ত ছিলাম আমার বন্ধুদের প্রতি, ওরা একটা লেখা পড়ল (বেশীর ভাগই পড়ে না-শুধু শেয়ার করে দেয়। পাওলোর ব্লগ শেয়ার করা এখনকার পপুলার ট্রেন্ড), সেটা নিয়ে কি একটু চিন্তাও করবে না? সে এই ব্যপার গুলো কিভাবে চিন্তা করছে? কখনো কি নিজেকে এই প্রশ্ন গুলো করে দেখেছি? পাওলো একজন বিখ্যাত লোক বলেই কি ও যা বলবে, যা লিখবে তা নিয়ম হয়ে যাবে? কি হাস্যকর। আর সত্যি বলতে পাওলোর এই ব্লগ টাই আমার ভালো লাগে নাই। তার সাথে আমি একমত হতে পারি নাই, এজন্যই হয়ত। কিন্তু তবুও কি একটা যেন বাদ পরে গিয়েছিল। তার ব্লগ পড়তে পড়তেই আমার জিদ উঠে যায়। ম্যানুয়াল আবার কি জিনিস? এইসব হাবিজাবি প্রশ্নের কাব্যিক উত্তর? হাহ !!! হাস্যকর। আমি অবশ্যই তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ-অনুভুতি কে সম্মান জানাই। পাওলোর কাছে এটা তার ব্যাক্তিগত ম্যানুয়াল হতেই পারে। কিন্তু এটাই সবার জন্য নিয়ম হয়ে যেতে পারে না।
এই বল্গ পোস্ট টি সারকাস্টিক দিক দিয়ে লিখা-চূড়ান্ত রকমের আবেগ তাড়িত লেখা। সারকাজাম টা সবাই ধরতে পারে নাই। কেউ আমাকে বিরাট বড় কেউ ভেবে বসে আছে, কেউ বা আমাকে গালি দিয়েছে, আমার অপরিপক্ব চিন্তা ও লেখা পড়ে অনেকেই মুচকি হেসেছেন- কিন্তু কেউ এই পোস্ট লিখার কারন টা ধরতে পারেন নাই। আমি ব্যর্থ। আমি বুঝাতে চেষ্পাটা করেছি ম্যানুয়াল-ট্যানুয়াল বলে আসলে কিছু নাই। এটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার। পাওলো তার টা লিখতে পারলে আমিও পারব। আর তোমরা ও তোমাদের টা নিয়ে চিন্তা করতে পার, লিখতে পারো- জানাতে পারো। কিন্তু কোন কিছুকে অন্ধের মত ফলো কর না, এটা ঠিক না- কিছু মেনে নেয়ার আগে সেটা নিয়ে চিন্তা কর]
আপডেটঃ আজকে বড়দিন, ক্রিসমাস, হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মদিন। ফেসবুকে সবাই সবাইকে উইশ করছে। অবাক হয়ে গেলাম এই উইশ করা নিয়েও বিরুদ্ধ মতবাদ দেখে। কোন এক মুমিন(!!) এর ভাষ্যমতে শুধুমাত্র এই উইশ করা না করার মাঝেই নাকি আমার ঈমান নির্ভর করছে। জাকির নায়েক নাকি এটা বলেছেন। জাকির নায়েক এটা বলতেই পারেন। এটা তার নিজস্ব মতামত। এটাকে তুমি অন্ধের মত ফলো কেন করছো? তোমাকে কি আল্লাহ বিবেক দেয় নাই? চিন্তা শক্তি দেয় নাই? কে কি বল্লো কিছু না জেনে না বুঝেই ফাল পারছো কেন? এর কোন উত্তর নাই। চিন্তা করে দেখলাম মানুষ এমন ই। পাওলো বলি বা জাকির বলি- সবাই আবেগ দ্বারা তাড়িত- নিজে নিজে কিছু চিন্তা করতেও তো কষ্ট হয়। খ্যাত (বিখ্যাত/কুখ্যাত) ব্যাক্তি রা চিন্তা করুক। আমরা কিছু একটা মেনে নিব নে…
প্যাশন এমন একটা জিনিস যেটার কোন কার্য-কারন নাই, কোন মাপকাঠি নাই- একে কোন নিয়ম বা ম্যানুয়ালে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে চাওয়াটাই বোকামী।
পরিশেষে, পাহাড়কে ভালবাসো। পাহাড় ও তোমাকে ভালবাসবে।
অনুপ্রানিতঃ [link|http://paulocoelhoblog.com/2010/08/11/manual-for-climbing-mountains-3/|1 minute reading: Manual for climbing mountains [Paulo Coelho's Blog]]
দুখী মানবের ব্লগ