somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘বিএনপি - জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল মুখে যতই গণতন্ত্রের জন্য নাকি কান্না কাঁদুক, একটা ব্যাপারে দুই দলই একমত, রাজতন্ত্র ছাড়া দল টেকানো সম্ভব না। সমস্যাটায় প্রথম পড়েছিল আওয়ামীরা। যে মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু সহ তাঁদের শীর্ষ চার নেতার নিধন হল, তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় শীর্ষ পদ দখলের কামড়াকামড়ি। প্রায় চার টুকরা হওয়ার পথে রওয়ানা দেয় দলটি। নৌকার হাল ধরতে অবশেষে আসতে হয় শেখ বংশের জীবিত দুই বংশধরের একজনকে।
এর কিছুদিন পরেই একই সমস্যায় পড়ে, দেশের অপর বৃহৎ দলটি। তাদেরও কমবেশি একই অবস্থা হয়েছিল। ম্যাডাম এসে কাস্তে হাতে তুলে না নিলে দলটি টুকরো হতো না ‘ভ্যানিস’ হতো তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে সেযাত্রা বেঁচে যায় এবং এরপর থেকে ঝড় ঝাপটা এলেও দলটি টিকে ছিল।
এরশাদ সাহেবের বদান্যতায় প্রায় নয় বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দল দুটির অনুগামীর সংখ্যায় যেমন কমতি হয়নি তেমনই নেতৃত্ব নিয়েও তেমন কোন ঝামেলা হয়নি। যদিও বিভিন্ন পদে কে অধিষ্ঠিত হবেন তা দল দুটির শীর্ষ নেত্রী কর্তৃক নাজিল হত কিংবা কাউন্সিল হলেও কোন কর্মীই সাহস করে জানাতেন না, তিনি নেতা হতে চান। ফলে দল দুটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদ বলে তেমন কিছু ছিল না।
দল পরিচালনার জন্য যে একনায়কতন্ত্রকে সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন দুই নেত্রী, সেই সমাধানই সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হল, ১/১১তে। দুই শীর্ষ নেত্রী বন্দী হলেন। একটি দলে তখন হবু উত্তরাধিকারী চলে এসেছিল, তিনিও বন্দী হলেন। শীর্ষ পদ ফাঁকা হওয়ায় নেতা হতে আগ্রহী সেইসব নেতাদের হঠাৎ করে বিবেক জাগল। মনে পড়ল, ‘আরে তাইতো, দলে তো গণতন্ত্র নেই! কিছু একটা করা দরকার।’
সমাধান হিসেবে যা আসলো, তা ছিল দল দুটির ওপর আসা পুরনো সমস্যার নতুন এডিশান। সেই দুই পারিবারিরক প্রতিনিধিদ্বয় আসবার পূর্বে যে সমস্যা হয়েছিল, তা আবার ঘটবার সম্ভাবনা দেখা দিল। কাহিনী একটু বেশি আঘাত হানলো বিএনপিকে। হয়তো এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতার সংখ্যা বেশি ছিল কিংবা তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিমাণ বেশি ছিল। ঘটনা বেশ অনেকদূর গড়াল। তবে শেষরক্ষা হল রাজতন্ত্র দিয়ে। ম্যাডাম ফেরত এসে দলকে আবার ‘একটি দল’ বানালেন।
আওয়ামীদের অবস্থাও খুব ভালো কিছু ছিল না। বেশ বড় বড় নেতার ভেতরেই বিবেক জেগেছিল। আওয়ামীদের দুঃসময়ে যারা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি করেছিলেন, সম্ভবতঃ নিজেদের ভেতর ভাগ বাটোয়ারা নির্ধারণ করে, তাঁরাও নেমে পড়েছিলেন শূন্য হওয়া শীর্ষ পদ দখল করতে। পরেননি, এবং তাঁদের এই অসম সাহস তাঁদের পরবর্তী জীবনও বেশ দুর্বিষহ করে দেয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই বড় দলই সেই ‘এপিসোড’ থেকে শিক্ষা নেননি। কেউই দলে কোন সেকেন্ড ম্যান গণতান্ত্রিক ভাবে নির্ধারণের ঝুঁকি কিংবা প্রচেষ্টা নেননি। তবে তাঁর ফলাফল এখনও আওয়ামীরা ভোগ করেননি। কারণ তাঁদের ওপর সেই অর্থে বড় কোন দুর্যোগ আসেনি। উপনেতা কিংবা সাধারণ সম্পাদকও দলীয় নেত্রীর ইচ্ছামাফিক হয়েছে। কাউন্সিল হলেও কেউ আর এখন মুখ খোলে না। কেউই জানান না, তিনি কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নেত্রীকে অধিকার দিয়ে দেন, কোন পদে কে বসবেন, সেই হুকুম নাজিল করার। এবং যথারীতি ‘লিস্টি’ আসে শীর্ষ নেত্রীর মুখ থেকে।
১/১১ পরবর্তী সময়ে হওয়া নির্বাচনে আওয়ামীরা ক্ষমতায় আসায়, তাঁদের সেই অর্থে বড়সড় কোন সমস্যা হয়নি। ‘বিবেক জাগা’ সেইসব নেতাদের দলে রাখলেও বেশ অপ্রয়োজনীয় করে রেখেছেন। তবে নেত্রী, মূল সমস্যার কোন সমাধান করেননি। দলে গণতন্ত্র তো আনেনই নি, বরং সবাইকেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি ‘বিক্রি হওয়া কিছু মানুষ দিয়ে তৈরি’। তাই কাউকে ‘সেকেন্ড ম্যান করা সম্ভব না। যদি কেউ হয়, সে হবে ‘আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মানুষটি’।
১/১১ সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় বিএনপিকে। একে তো নির্বাচনে পরাজয় হয়, তারওপর দলে দেখা দেয় অন্তর্কলহ। ঢাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। পুরনো নেতা আর নতুন নেতাদের মধ্যে লড়াই। ফলে মহাসচিব পদে আবার আনা হয়, ম্যাডাম কর্তৃক ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তি। পছন্দের লোক বসানোর বসানোর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসবার কোন ইচ্ছে নেত্রী দেখালেন না। সেই মহাসচিবের মৃত্যুর পরও যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হল, তিনিও সেই একই ফর্মুলায় নাজিল হলেন। ফলাফল হল ভয়ঙ্কর। ম্যাডামের অবর্তমানে কে হবেন দলের কান্ডারী, তা কেউ জানে না।
‘জিয়া অরফ্যানেজ’ আর ‘জিয়া চ্যারিটেবল’ এই দুই মামলা ট্রাম্প কার্ড হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন, আওয়ামী নেত্রী। ব্যাপারটা ব্যবহার করবেন কি না তা নিয়ে সম্ভবতঃ বিএনপি কিছুটা দ্বিধায় ছিল। হয়তো ভেবেছিল, এতোটুকু ভদ্রতা অন্ততঃ আওয়ামীরা দেখাবে। হয়তো ভেবেছিল, শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতারের মত সিদ্ধান্ত নিবে না। হয়তো ভেবেছিল, ‘কখন পরস্থিতি পাল্টে যায়, এই ভেবে’ হয়তো আওয়ামীরা শীর্ষ নেতৃত্বকে ছেড়ে কথা বলবে।
মঙ্গলবারে যখন তড়িঘড়ি আয়োজন করা সাংবাদিক সম্মেলনের খবর আসলো, তখন মনে হয় না সাংবাদিকদের বুঝতে বাকী ছিল, সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ আওয়ামীদের ভেতরে থাকা তাঁদের গুপ্তচররা জানিয়েছে, আওয়ামীরা তাঁদের সেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ দেখিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ না করে সরাসরি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি যেভাবে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তাতে ম্যাডামকে বাইরে রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে।
মূল যে সমস্যা দল দুটির ভেতরে আগেও ছিল এবং এখনও আছে, তা হচ্ছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, দ্বিতীয় আর কোন নেতা নেই। দলে গণতন্ত্র না থাকায়, কোন নেতা কতোটা জনপ্রিয় তা কেউই জানেও না। কোন কাজ করার সুযোগ না থাকায়, কেউই জানেন না, ‘স্ট্রেটেজি’ তৈরিতে কে কতোটা দক্ষ। ফলে সেই পুরনো সমস্যা নতুন করে বেশ বড়সড় বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
‘ট্রাম্প কার্ড’ সম্ভবতঃ অচিরেই ব্যবহার হবে। তবে সেই পরিস্থিতিতে কি করবে, কিভাবে তাঁরা দল চালাবেন, কিভাবে আন্দোলন করবেন, তা যে তাঁরা জানেন না তা যেভাবে ‘শুকনো মুখ’ নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতারা হাজির হলেন, তা দেখে বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। তাই যখন তাঁরা আওয়ামী প্ল্যান জানালেন, তখন একটি ব্যাপার বেশ স্পষ্টভাবে তাঁদের চেহারায় জ্বলজ্বল করছিল, তাঁদের অসহায় মুখ বলছিল, ‘ম্যাডাম গ্রেফতার হলে বিএনপির কি হবে?’
সময় হয়তো হাতে খুব বেশি নেই। ৫ই জানুয়ারী আসছে। সেই সময়ে কিছু করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও মনে হচ্ছে, আওয়ামীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই শীতকালটা কোন ঝামেলা ছাড়াই পার করতে যেকোন দিন আসতে পারে আওয়ামী আঘাত। এবং সেই আঘাত কিভাবে মোকাবেলা করবে, কে নেতৃত্ব দিবে, তা এখনও খুব একটা স্পষ্ট না। সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও দেশে নেই এবং তাঁর মাথায়ও ঝুলছে মামলা, তাই তিনিও মনে হয়না ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরবেন। ফলে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধির অবর্তমানে নেতৃত্বের কি হবে ব্যাপারটা বিএনপি স্পষ্ট করবে, না সাসপেন্স থ্রিলার গল্পের মতো দেশবাসীর মনে জাগিয়ে রাখবে সেই জটিল প্রশ্ন, ‘বিএনপি - জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×