somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দিতে পারিস একশ ফানুশ এনে? আজন্ম সলজ্জ সাধ, একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই!"

২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ স্যার, একশ ফানুশ ওড়ানোর এই ইচ্ছেটা আপনার পূরণ হয়েছিল কিনা জানা নেই তবে এইটুকু জানি যে আপনার অকাল প্রয়াণে মনের মাঝে তীব্র বেদনার পাহাড়সম যে ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে বারংবার সেগুলোকে যদি একেকটি ফানুশ করে উড়িয়ে দিতে পারতাম আপনার কাছে তবে আপনি ঠিক বুঝে যেতেন আপনাকে কত ভালোবাসি।

স্যার, আমেরিকার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আপনি এক লেখাতে আপনার এক ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। নিজের দেশের অনেক প্রতিভাবান চিকিৎসককে আমেরিকার নামকরা সব হাসপাতালে চাকরিরত দেখে আপনার আফসোস হয়েছিল কেন দেশমাতৃকার এই যোগ্যতর সন্তানগুলো নিজের দেশের জন্য ভাল কিছু করার পরিবেশ পায়না। আপনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশেই প্রথম শ্রেণীর একটি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করার। আপনি পারলেন না। আপনার কলমের সুনিপুণ পরশে আপনি যেমন 'কোথাও কেউ নেই' বা 'শঙ্খনীল কারাগার' এর শেষ দৃশ্য এঁকে কোটি হৃদয়কে কান্নার স্রোতে ভাসিয়ে ছিলেন, বোধ করি বিধাতা স্বয়ং সেই থেকে শিখেছিলেন কিভাবে কাঁদাতে হয়। তাইতো বড্ড অসময়ে তিনি আপনাকে নিয়ে গেলেন আমাদের মাঝ থেকে।

কৈশোর জীবনের শুরুতে আরও অনেকের মত এই নগণ্য আমাকেও হিমু নামক এক মহাপুরুষ হবার যে পাগলামো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে জীবনে অনেক পাগলামো করা হয়ে গেছে ঠিকই, শুধু মহাপুরুষ হবার পথে একটা কদমও ফেলতে পারিনি। আপনি চলে গেছেন, প্রতি বছর নতুন নতুন হিমু উপাখ্যান রচনা করে পাগলামোর সেই সাঁকোটাকে নাড়িয়ে দেবার জন্যে কেউ থাকল না আর। আপনার বিদায়ের এই বিষাদঘন সময়ে আরেকবার নতুন করে একটি পাগলামো করবো বলে ঠিক করেছি।

স্যার, আমি মহাপুরুষ হতে পারিনি। একজন নগণ্য চিকিৎসক হয়েছি। দেশের অনেক বড় সড় প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকদের ন্যায় তথাকথিত কসাইগিরিও শুরু করতে পারিনি এখনো। ভেবেছিলাম একজন প্রথিতযশা সার্জন হব। কসাইয়ের মত নয়, রোগীর শরীরে একজন শিল্পীর মত ছুরি কাঁচি চালাবো তার আরোগ্য কামনায়। এই ইচ্ছেটা আজ বিসর্জন দিলাম আপনার জন্য। ঠিক করেছি অনকোলজি পড়ব। পৃথিবীর সেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। আল্লাহ্‌ যদি আমাকে যথেষ্ট সময় এই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন তবে নিশ্চয়ই একদিন আপনার অপূর্ণ একটি সাধ পূরণ করবো আমি। প্রতিজ্ঞা করছি বাংলাদেশে বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার ইন্সটিটিউট আমি অবশ্যই তৈরি করবো।

কৈশোরে, তারুণ্যে আপনার লেখার ঘোরে আবদ্ধ হয়ে অসংখ্য পাগলামো করা এই পাগলটাকে আপনি একবার আশীর্বাদ করে দিন স্যার। একজন হুমায়ূন আহমেদ হয়তো আর কোনোদিন এই মাটিতে জন্ম নেবেনা তবু শব্দ দিয়ে অপূর্ব সব ছবি আঁকা আপনার মত একজন সুনিপুণ চিত্রকারের বাঁধ ভাঙা জোছনাবিহীন, টিনের চালের টুপুর টাপুর শব্দহীন অযাচিত যে বিদায় দৃশ্য বিধাতা রচনা করেছেন সেরকম কোন বিদায় দৃশ্য তিনি যেন আর কখনো রচনার সুযোগ না পান! আমাকে আশীর্বাদ করুন; কষ্ট করার, নিজ লক্ষ্যে অবিচল সাধনা করার হিমালয়সম প্রচেষ্টা যেন আমৃত্যু করে যেতে পারি। আর তাই দেখে আপনার অবেলার এই বিদায়ের মত আর কোন করুন বিদায় দৃশ্য আঁকতে গিয়ে স্বয়ং বিধাতার যেন বুকটা কেঁপে ওঠে!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×