শিরোনামের লাইনটি নচিকেতার সম্ভবত রাজশ্রী শিরোনামের একটা গান থেকে নেয়া। সবারই হয়ত পরিচিত এই গান।
হাইস্কুল-কলেজ-মেডিকেলে গানটা শোনার সময় এই লাইনটা শুনে খটকা লাগত মাঝে মাঝে।
এখন মধ্যবয়েস। ঢাকার মধ্যবিত্তের জীবন আমার। নিজে বাবা হয়েছি।
সমাজ আর চারপাশের প্রেক্ষাপটে গানের এই লাইন দুটি বার বার যেন মনের মধ্যে ফিরে ফিরে আসে।
সন্তান জন্ম নিয়েছে শিশু হিসেবে। তাকে 'আমার' ছেলে/মেয়ে হিসেবে তৈরী করতে হবে, যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক - সামাজিক- মানসিক -নৈতিক - ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ; যাতে সমাজে সে একজন মানুষ হয়ে ওঠে। আগলে রাখতে হবে বিরুপ পরিস্থিতি আর ক্ষতিকর মানুষ ও জিনিস থেকে।
সে আমার ছেলে/মেয়ে থেকে একদিন কারো বন্ধু হবে, একদিন কারো প্রেমিক/প্রেমিকা হবে, হবে স্বামী/স্ত্রী, বাবা/মা, চাচা-মামা-খালা-ফুফু হবে কখনো, একদিন হয়ত শ্বশুর /শ্বাশুড়ি হবে, দাদা-দাদী /নানা-নানিও হবে।
কর্মক্ষেত্রে কর্মী হবে, বস হবে। শিক্ষক হবে-ছাত্র হবে। ডাক্তার হবে-রোগী হবে। ক্লায়েন্ট হবে-কাস্টমার হবে।
কাকে দেখে হবে?
আমাকে দেখে, তার পরিবার আর আশেপাশের সবার মধ্যের সম্পর্কগুলো দেখে।
অথচ এই সম্পর্কগুলো দিন দিন স্বার্থের টানে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে চলেছে। এতে সমাজ দুর্বল হয়ে চলেছে। রাষ্ট্রের অস্থিমজ্জা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
আর এই সম্পর্কগুলোর মাঝে আমরা ক্রমাগত দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছি। সন্তানের জন্য প্রশ্ন কিনে নিচ্ছি, তাকে শেখাচ্ছি খারাপ কাজ। নিজেরা আমরা দুর্নীতি করে এনে ভাবছি ছেলে/মেয়ে 'মহামানব' হয়ে যাবে!
সবকিছুর শুরু ব্যক্তির পরে পরিবার থেকে।
প্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হল "পরিবার"। " শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে এখনো সেরকম শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারেনি সামাজিক মানুষ তৈরীতে।
পাশ্চাত্যে পরিবারগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা ভংগুর বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা শক্তিশালী করেছে, ইউনিফর্মিটি দিয়ে মানুষগুলোকে ন্যূনতম সামাজিক করার ব্যবস্থা করেছে।
তাই মাঝে মাঝেই ভাবি, "কোন সভ্যতা প্রজনন করি, কি আমার দায়ভার? "