ভিটামিন-এ সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই অবগত ।সব বয়ষের মানুষের জন্য ইহা প্রয়োজন বিশেষ করে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ , বেড়ে ওঠা , চোখের দৃষ্টির বিষয়সহ আরো অনেক প্রয়োজনে উদ্ভিদ উৎস হতে হোক কিম্বা প্রানিজ উৎস থেকে হোক ইহা আমাদের প্রতিদিন গ্রহন করতে হয় ।এর অভাবে যেমন নানাবিধ সমস্যা হয় তেমনি অতিরিক্ত গ্রহনেও মারাত্বক প্রতিক্রিয়া হয় যা আমরা অনেকেই জানিনা । ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন এর অংশ হিসেবে সরকার প্রতিবছর ৬ মাস হতে ৫ বছর বয়ষী বাচ্চাদের বিনামুল্যে প্রদান করে থাকে । একটি দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইহা ভালো খবর । কিন্তু এই ভিটামিন খাওয়নোর পুর্বে কি আমরা চিন্তা করে দেখছি এর ক্ষতিকর দিকগুলো ? দেখি নাই বলেই প্রতিবছর ভিটামিন-এ খাওয়ানোর পর দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা হয় ।যা আমরা এ বছরও দেখেছি ।
এখন আমরা দেখব একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন-এ দরকার ।
০-৬ মাস বয়সি - ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (১৩৩৩ আইইউ)
৭-১২ মাস বয়সি - ৫০০ মাইক্রোগ্রাম (১৬৬৭ আইইউ)
১-৩ বছর বয়সি - ৩০০ মাইক্রোগ্রাম (১০০০ আইইউ)
৪-৮ বছর বয়সি - ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (১৩৩৩ আইইউ)
৯-১৩ বছর বয়সি - ৬০০ মাইক্রোগ্রাম (২০০০ আইইউ)
১৪-১৮ বছর বয়সি - ৯০০ মাইক্রোগ্রাম (৩০০০ আইইউ)-ছেলে,৭০০ মাইক্রোগ্রাম (২৩৩৩ আইইউ)-মেয়ে
>১৯ বছর বয়সি - ৯০০ মাইক্রোগ্রাম (৩০০০ আইইউ)
আমেরিকার খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ড ( এফএনবি) জানুয়ারী ২০০১ সালে ভিটামিন –এ গ্রহনের এই সীমা নির্ধারন করে ।
একজন মানুষের প্রতিদিন ভিটামিন-এ গ্রহন সর্বোচ্চ কতটুকু হতে পারে তা এখন জানব । :
০-১২ মাস বয়সি - ৬০০ মাইক্রোগ্রাম (২০০০ আইইউ)
১-৩ বছর বয়সি - ৬০০ মাইক্রোগ্রাম (২০০০ আইইউ)
৪-৮ বছর বয়সি - ৯০০ মাইক্রোগ্রাম (৩০০০ আইইউ)
৯-১৩ বছর বয়সি - ১৭০০ মাইক্রোগ্রাম (৫৬৬৭ আইইউ)
১৪-১৮ বছর বয়সি - ২৮০০ মাইক্রোগ্রাম (৯৩৩৩ আইইউ)
>১৯ বছর বয়সি - ৩০০০ মাইক্রোগ্রাম (১০০০০ আইইউ)
এখন জানব সরকারীভাবে কতটুকু খাওয়ানো হচ্ছে ?
৬ মাস- ১১ মাস =১০০০০০
১২ মাস -৫ বছর= ২০০০০০
কখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?
১) ভিটামিন-এ এর মাত্রা যদি ২৫০০০ আইইউ বা তার উপরে চলে যায় তাহলে বিষক্রিয়া হতে পারে ।
২) যদি মানসম্মত না হয় ।
৩) সঠিকভাবে সংরক্ষন না করা হলে ।
৪) লম্বা সময় ধরে খেলে ।
উপরের হিসেবে দেখা গেলো যতটুকু প্রতিদিন আকজন মানুষের প্রয়োজন তার থেকে অনেক বেশি সরকারীভাবে একদিনে খাওয়ানো হচ্ছে ।হিসেব অনুযায়ী দেখা যায় একটা বাচ্চার একদিনে যতটুকু ভিটামিন-এ দরকার তার থেকে অনেক বেশি তার শরিরে প্রবেশ করানো হয় ।যার ফলে হাইপারভিটামিনোসিস-এ অর্থাৎ ভিটামিন-এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ।কারন অতিরিক্ত ভিটামিন ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর । যা মারাত্বক আকার ধারন করার কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা আছে । ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ডি এর বিষক্রিয়া অনেক মারাত্বক ।
কি কি পার্শ্ব পতিক্রিয়া হয় ?
-বমি বমি ভাব কিম্বা বমি
-মাথায় প্রেসার বেড়ে যাওয়া।( ইহা হইতে মৃত্যুও হইতে পারে )
-পাতলা পায়খানা
-অরুছি
-পেটে ব্যথা
-মাথা ব্যথা
-মাথা ঘোরা
-ঝাপ্সা দেখা
- গোশ্ত পেশির অসংগলতা
-অস্থির থাকা
-দুর্বল
-ঝিম ঝিম ভাব
-চামড়া ও ঠোট শুকিয়ে যাওয়া
-অতিরিক্ত ঘাম
-ভাঙ্গা ভাংগা নখ
-মাড়ির সমস্যা
-চুল পড়া
-গিটে ব্যথা
-ওজন কমে যাওয়া
-বাচ্চাদের মাথার নরম অংশ ফুলে যাওয়া ।
-মানষিক অবষাদ
-অজ্ঞান যাওয়া
-লিভারের ক্ষতি
-জ্বর
-রক্তস্বল্পতা
- বাচ্চার বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া
-ক্যালসিয়াম বেড়ে যাওয়া ।
কি করা উচিত ?
১) ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহনের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করা ।
২) শরিরের প্রয়োজন অনুযায়ী ডোজ ঠিক করা ।
৩) যাদের শারীরিক লক্ষন দেখে মনে হবে ভিটামিন-এ এর অভাব আছে কেবল মাত্র তাদের খাওয়ানো ।
৪) খালি পেটে না খাওয়ানো।
৫) মানের দিকে খেয়াল রাখা ।
৬) সঠিকভাবে সংরক্ষন করা।
৭) এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও করনিয় সম্পর্কে অবহিত করা ।
উপরের আলোচনায় বুঝা গেল যে ভিটামিন-এ অতিরিক্ত গ্রহনের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তা আমাদের স্রেফ গুজব বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই । সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে কৌশল নির্ধারন করার কথা চিন্তা করা উচিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৬