স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিখ্যাত স্লোগান
১। হানাদার পশুরা বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করেছে- আসুন আমরা পশু হত্যা করি।
২। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মুক্তিযোদ্ধা এক একটি গ্রেনেড। শুধু পার্থক্য এই গ্রেনেড একবার ছুঁড়ে দিলে নিঃশেষ হয়ে যায়, আর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের বার বার গ্রেনেড হয়ে ফিরে আসে।
৩। গ্রেনেড গ্রেনেড গ্রেনেড-শত্র“র প্রচন্ড গ্রেনেড হয়ে ফেটে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধারা।
৪। বাংলার প্রতিটি ঘর আজ রণাঙ্গন-প্রতিটি মানুষ সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার জ্বলন্ত ইতিহাস।
৫। শত্র“পক্ষের গতিবিধির সমস্ত খবরাখবর অবিলম্বে মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রে জানিয়ে দিন।
৬। কোনো প্রকার মিথ্যা গুজবে কান দেবেন না, বা চূড়ান্ত সাফল্য সম্পর্কে নিরাশ হবেন না। মনে রাখবেন যুদ্ধে অগ্রাভিযান ও পশ্চাদাপসারণ দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
৭। প্রতিটি আক্রমণের হিংসাত্মক বদলা নিন। সংগ্রামকে ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে দিন।
৮। শত্র“ কবলিত ঢাকা বেতার কেন্দ্রের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হবেন না। এদের প্রচার অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্যই হল আমাদের সাফল্য সম্পর্কে দেশবাসির মনে সংশয়, সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
৯। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মাঝি, কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি, বীর ক্ষেত মজুর হাতে তুলে নিয়েছে মারণাস্ত্র। এদের বুকে জ্বলে উঠেছে অনির্বাণ আগুন। এরা মরণপণ করে রুখে দাঁড়িয়েছে নরখাদক দস্যূ সৈন্যের মোকাবিলা করতে।
১০। সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
১১। বর্বরতার জবাব আমরা রণাঙ্গনেই দিচ্ছি, রক্তের বদলে রক্ত নেব। চূড়ান্ত বিজয় আমাদের হবেই হবে।
১২। বাংলাদেশে আজ শত্র“ হননের মহোৎসব, প্রতিটি হানাদার দস্যূও বিশ্বাসঘাতকতা খতম করুন। ওদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিন, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে অটুট থাকুন।
১৩। পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্যসামগ্রী ব্যবহার বর্জন করুন। শত্র“র বিরুদ্ধে অবরোধ গড়ে তুলুন।
১৪। ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেয়া কুকুর গুলোকে খতম করে আসুন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ি।
১৫। আপনর ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সরকারই বাংলাদেশের বৈধ সরকার। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ছাড়া আর কোনো হানাদার সরকারের আনুগত্য রাষ্ট্রদ্রোহিতারই শামিল।
১৬। মুক্তিবাহিনী লড়ছেন আমার জন্য, আপনার জন্য। বাংলাদেশের ইজ্জতের জন্য।
১৭। স্বাধীনতার প্রশ্নে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি আজ ঐক্যবদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের সবল হাতের হাতিয়ার শত্র“র কলিজায় ঘা মারছে। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
১৮। স্বাধীনতা কারো যৌতুক হিসাবে পাওয়া যায় না। তা কিনে নিতে হয় এবং একমাত্র রক্তের মূল্যেই স্বাধীনতা কেনা সম্ভব। বাড়ালি সে মূল্য দিয়েছে, দিচ্ছে এবং আরো দেবে।
১৯। আমাদের মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ করছে শত্র“র থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র দিয়ে, এমনিভাবে মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিহত অগ্রগতি চলছে দুর্বার গতিতে। তারা আর থামবে না কোনোদিন থামবে না। দেশকে শত্র“মুক্ত করার পূর্বে, চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বে এই যুদ্ধ থামবে না।
২০। জল্লাদ বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করুন। নিকটর্তী মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে খবর দিন।
২১। বিদেশী শাসক এবং হানাদারদের সৃষ্ট কলঙ্কের ইতিহাস বাঙালিরা এবার মুছে ফেলবে।
২২। বাংলাদেশের সর্বত্র শত্র“ হননের প্রতিযোগিতা চলছে। রক্ত চাই, শুধু রক্ত।
২৩। প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে আজ প্রতিহিংসা প্রচন্ড উত্তাপ। হানাদার হত্যা করাই আজ আমাদের একমাত্র কর্তব্য।
২৪। চূড়ান্ত বিজয় আমাদের সন্নিকটে। সর্বশক্তি দিয়ে দস্যূ সেনাদের আক্রমন করুন।
২৫। বাংলার শ্যামল মাটি আজ পুঞ্জীভূত বারুদের গোলা প্রতিটি ঘর এক একটি দূর্ভেদ্য দূর্গ; বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ অপরাজেয় মুক্তিযোদ্ধা। যেখানেই থাকুন না কেন শত্র“কে প্রচন্ড আঘাত করুন।
২৬। বাংলার মুক্তিযুদ্ধে শহীদানের প্রতিটি রক্তবিন্দু- আজ উদ্দীপ্ত করেছে স্বাধীনতা সূর্যকে।
২৭। মুক্তি বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমনে জঙ্গীশাহীর বর্বর খান সেনারা আজ দিশেহা। প্রতিটি রণাঙ্গনের হানাদারেরা হচ্ছে পর্যুদস্ত, আরো জোরে আঘাত হানুন। শত্র“কে চিরতরে নিশ্চি˝ করুন।
২৮। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রাম একণ চূড়ান্ত বিজয়ের পথে। বাংলার নব দিগন্তে আজ প্রত্যুয়ের নতুন বিশ্বাস।
২৯। বাংলার নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকেই আজ দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা। সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই সম্বিলিত শক্তির মোকাবেলায় হানাদার পশুরা চিরতরে নিশ্চি˝ হয়ে যাবে।
৩০। বঙ্গবন্ধুর অগ্নিমন্ত্রে উদ্বুদ^ সাড়ে সাতকোটি মানুষের সম্বিলিত বজ্রকন্ঠ স্তব্ধ করে দিয়েছে জঙ্গীশাহীর উদ্ধত কামানকেও।
৩২। সাবাস মুক্তিযোদ্ধা ভায়েরা। বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী পশুদের নির্মম গণহত্যার প্রতিশোধ নাও। আরো জোরে আঘাত কর।
৩৩। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর পতাকা আজ পত পত করে উড়ছে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে। নব দিকদিশারী এই পতাকাকে জানান আপনার সশ্রদ্ধ সালাম।
জনপ্রিয় কয়েকটি গান
১ জয় বাংলা,বাংলার জয় গানের প্রথম কলি
গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকার
আনোয়ার পারভেজ সুরকার
শাহনাজ বেগম ( রহমতুল্লাহ ) শিল্পী
২ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি গানের প্রথম কলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতিকার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরকার
কোরাস (সমবেত) শিল্পী
৩ কারার ঐ লৌহকপাট
কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম
কোরাস
৪ কেঁদোনা কেঁদোনা মাগো
৫ সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা
আবদুল লতিফ
আবদুল লতিফ
শাহনাজ বেগম
৬ শোন একটি মুজিবরের থেকে
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
আংশুমান রায়
৭ মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে
গোবিন্দ হালদার
আপেল মাহমুদ
আপেল মাহমুদ
৮ ঐ বগিলারে কেন বা আরু
হরলাল রায়
রথীন্দ্রনাথ রায়
৯ অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা
টি এইচ শিকদার
কোরাস
১০ অত্যাচারের পাষাণ জ্বালিয়ে দাও
আল মুজাহিদী
কোরাস
১১ তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর
কোরাস
১২ পূর্ব দিগন্তে, সূর্য উঠেছে
গোবিন্দ হালদার
কোরাস
১৩ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
গোবিন্দ হালদার
স্বপ্না রায়
১৪ আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে প্রেব্রুয়ারী
আবদুল গাফফার চৌধুরী
আলতাফ মাহমুদ
কোরাস
১৫ আমি এক বাংলার মুক্তি সেনা
নেওয়াজিস হোসেন
কোরাস
১৬ সালাম সালাম হাজার সালাম
ফজল-এ-খোদা
মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
১৭ জগৎবাসী বাংলাদেশকে যাও দেখিয়া
সরদার আলাউদ্দীন
১৮ সাত কোটি আজ প্রহরী প্রদীপ
সারওয়ার জাহান
১৯ মুক্তির একই পথ সংগ্রাম
শহীদুল ইসলাম
কোরাস
২০ জনতার সংগ্রাম চলবেই
সিকান্দার আবু জাফর
কোরাস
২১ বিচারপতি তোমার বিচার
সলিল চৌধুরী
কোরাস
২২ আমি শুনেছি আমার মায়ের কান্না
ফজল-এ-খোদা
মান্না হক
২৩ নোঙ্গর তোল তোল
নঈম গহর
কোরাস
২৪ ব্যারিকেড,বেয়নেট, বেড়াজাল
আবু বকর সিদ্দিক
কোরাস
২৫ ছোটদের বড়দের সকলের
রথীন্দ্রনাথ রায়
জনপ্রিয় কিছু অনুষ্ঠান
চরমপত্র
রম্যকথিকা
পরিকল্পনাঃ আবদুল মান্নান
কথকঃ এম আর আখতার মুকুল
ইসলামের দৃষ্টিতে
ধর্মীয় কথিকা
কথকঃ সৈয়দ আলি আহসান
জল্লাদের দরবার জীবন্তিকা (নাটিকা)
লেখকঃ কল্যাণ মিত্র
ভয়েসঃ রাজু আহমেদ এবং নারায়ণ ঘোষ
বজ্রকন্ঠ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের অংশবিশেষ
দৃষ্টিপাত
কথিকা
কথকঃ ডঃ মাজহারুল ইসলাম
বিশ্বজনমত
সংবাদ ভিত্তিক কথিকা
কথকঃ সাদেকীন
বাংলার মুখ
জীবন্তিকা
প্রতিনিধির কন্ঠ
অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের ভাষণ
পিন্ডির প্রলাপ
রম্যকথিকা
কথকঃ আবু তোয়াব খান
দর্পণ কথিকা
কথকঃ আশরাফুল আলম
প্রতিধ্বনী
কথিকা
কথকঃ শহীদুল ইসলাম
কাঠগড়ার আসামী
কথিকা
কথকঃ মুস্তাফিজুর রহমান
এছাড়া আরো ছিলেন
গীতিকারঃ- সিকান্দার আবু জাফর, আবদুল গাফফার চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, আসাদ চৌধুরী, টি এইচ শিকদার প্রমুখ।
শিল্পীঃ- সমর দাস, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, অরুন গোস্বামী, মান্না হক, মাধুরী চ্যটার্জী, এম চান্দ, ইয়ার মোহাম্মদ, প্রবাল চৌধুরী, কল্যানী ঘোষ, উমা খান, নমিতা ঘোষ, স্বপ্না রায়, জয়ন্তী লালা, অজিত রায়, সুবল দাশ, কাদেরী কিবরিয়া, লাকি আখন্দ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহালনবীশ,ফকির আলমগীর, মকসুদ আলী সাই, তিমির নন্দী, মিতালী মূখার্জী, মলয় গাঙ্গুলী, রফিকুল আলম প্রমুখ।
সঙ্গীত কম্পোজঃ- প্রনোদিত বড়ুয়া।
যন্ত্র সঙ্গীতঃ- শেখ সাদী, সুজেয় শ্যাম, কালাচাঁদ ঘোষ, গোপী বল্লভ বিশ্বাস, হরেন্দ্র চন্দ্র লাহিড়ী, সুবল দত্ত, বাবুল দত্ত, অবীনাশ শীল, সুনীল গোস্বামী, তড়িৎ হোসেন খান, দিলীপ দাশ গুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, জুলু খান, রুমু খান, বাসুদেব দাশ, সমীর চন্দ, শতদল সেন প্রমুখ।
ঘোষকঃ- শেখ সাদী, শহিদুল ইসলাম, মোতাহের হোসেন, আশরাফুল আলম, অনিল কুমার, আবু ইউনুছ, জাহেদ সিদ্দিকী, মনজুর কাদের।
লাইব্রেরিয়ানঃ- রঙ্গলাল দেব চৌধুরী।
স্টুডিও কর্মকর্তাঃ- এস এম সাজ্জাদ।
নিয়মিত সম্প্রচারসমূহ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠান হলো পবিত্র কোরআনের বাণী, চরমপত্র, মুক্তিযুদ্ধের গান, যুদ্ধক্ষেত্রের খবরাখবর, রণাঙ্গনের সাফল্যকাহিনী, সংবাদ বুলেটিন, ধর্মীয় কথিকা, বজ্রকণ্ঠ, নাটক, সাহিত্য আসর এবং রক্তের আখরে লিখি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল অনুষ্ঠান এম আর আখতার মুকুল উপস্থাপিত চরমপত্র। এখানে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অসংলগ্ন অবস্থানকে পুরনো ঢাকার আঞ্চলিক ভাষার সংলাপে তুলে ধরতেন। চরমপত্রের পরিকল্পনা করেন আবদুল মান্নান। আরেকটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান জল্লাদের দরবার পরিচালনা করতেন কল্যাণ মিত্র। অনুষ্ঠানটিতে ইয়াহিয়া খানকে “কেল্লা ফতে খান হিসেবে” হাস্যরসাত্মকভাবে ফুটিয়ে তোলা হত। “বজ্র কণ্ঠ” অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের অংশবিশেষ সম্প্রচার করা হত। বেতার কেন্দ্রে তরুণ শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও অনুপ্রেরণাদায়ক গান করতেন। সম্প্রচারের জন্য এসময় অনেক গান ও কবিতা লেখা হয়। কেন্দ্রের গায়কেরা পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে তহবিল সংগ্রহ করেন। এছাড়াও বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলা, ইংরেজি ও উর্দুতে সংবাদ সম্প্রচার করা হত।
চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কজন বেতারকর্মী সিদ্ধান্ত নেন যে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে তারা বেতারের মাধ্যমে কিছু প্রচার করবেন। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তারা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন এবং তার নতুন নাম দেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। তবে তারা নিরাপত্তার কারনে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্তিত বেতার কেন্দ্রকে কাজে না লাগিয়ে শহর থেকে কিছু দূরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে চলে যান এবং ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে প্রথম প্রচার করেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি। সে সময়েই এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি আবার পাঠ করেন।
এরপর তারা ২৭ মার্চ সকালে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাহারা বসানোর উদ্দেশ্যে পটিয়ায় অবস্থানরত মেজর জিয়ার কাছে এ ব্যপারে সাহায্য চাইতে যান। সেখান থেকে তারা জিয়াউর রহমানকে সাথে করে কালুরঘাট ফেরত আসেন। সেদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ রাত ৮টায় এক নতুন লিখিত ও সম্প্রসারিত বক্তব্যের মাধ্যমে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন । এর পরদিন ২৮ মার্চ মেজর জিয়ার অনুরোধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র এই নাম হতে বিপ্লবী অংশটি বাদ দেয়া হয় এবং নতুন নাম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ২৮ মার্চ প্রথম অধিবেশনে বিমান হামলায় করনীয় সম্পর্কে নির্দেশমালা প্রচারিত হয়, এবং দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথম একটি কথিকা পাঠ করা হয়। ৩০ মার্চ প্রভাতী অধিবেশনে প্রথম বারের মত জয় বাংলা, বাংলার জয় গানটি প্রচারিত হয়। ৩০ মার্চ দুপুরের অধিবেশন শেষ হবার পর প্রায় ২টা ১০ মিনিটের দিকে বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানিরা বিমান হামলা করে, এ বিমান হামলায় কেউ হতাহত না হলেও বেতার কেন্দ্র এবং সম্প্রচার যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সেখান থেকে সম্প্রচার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠাতা দশজন সদস্য দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আগরতলা ও ত্রিপুরার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও বেতারকেন্দ্রের কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার (৫০ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ) প্রদান করে। এসময় সকল বেতারকর্মীদের ধীরে ধীরে মুজিবনগরে নিয়ে আসা হতে থাকে। ঢাকা হতেও ঢাকা বেতারের শিল্পি ও কুশলীরাও আসতে থাকেন। প্রথম অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয় ২৫ মে । কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ৫৭/৮ নং দোতলা বাড়িটিতে রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের আবাসের কক্ষের সাথের একটি কক্ষে উক্ত ট্রান্সমিটার দিয়ে সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। পরে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীরা অন্য বাড়িতে ঊঠলে সেই ৫৭/৮ বাড়িটিই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থায়ী কার্যালয় রূপে গড়ে ওঠে। এরপর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান নিয়মিত ভাবে সম্প্রচারিত হতে থাকে
তথ্যসূত্র :
উইকিপিডিয়া
http://www.swadhinbangla-betar.org
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৪