ইদানিং অনেকেই আমাকে ফেসবুক ইনবক্সে মেসেজ করতেসে আবার অনেকে পোস্ট লিখে আমাকে ট্যাগ করতেসে, মূল কথাটা এই রকম “১৬ ডিসেম্বরে আমরা সবাই প্রোফাইল পিকচার দিব জাতীয় পতাকা । বাংলাদেশে এটার মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড করব । এটা সবার সাথে শেয়ার করেন প্লিজ”
ওকে আমি আছি তোমাদের সাথে । কিনতু আমাদের মনে রাখতে হবে, সবুজ রঙের উপর যেনতেন সাইজের একটা লাল গোল্লা বসায়া দিলেই বাংলাদেশের পতাকা হয়ে যায় না ।
মাপজোখের অনেক ব্যাপার আছে, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্থের অনুপাত হতে হবে ১০:৬, আবার বৃত্তের ব্যাসার্ধ হতে হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের ১ ভাগ । আবার বৃত্তটা পতাকার মাঝে বসবে না, কিভাবে বসবে তারও নিয়ম কানুন আছে । এমনকি সবুজ ও লাল রঙেরও একটা পারফেক্ট মান আছে, যে কোন সবুজ বা লাল হলেই হবে না । Wikipedia এর এই লিঙ্কে তার পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে, http://goo.gl/KQmo4P
কেউ কেউ বলতে পারেন এত মাপজোখের কি দরকার? একটা হইলেই হইল । নারে ভাই মিজারমেন্ট-টা ঠিক না থাকলে সেটা আর বাংলাদেশের পতাকাই হইল না ।
এক রাম ছাগলকে দেখলাম পতাকার মাঝে নিজের ছবি ও আজেবাজে কথা লিখে প্রোফাইল পিকচার করে রেখেছে । দেখেন কি অবস্থা ...
তাই এ কথাটি জানানো জরুরী মনে করছি, বাংলাদেশের পতাকার উপরে কোন কিছু লেখা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ । এমনকি দেশের নামটাও লেখা যাবে না । তাই প্রোফাইল পিকচার দিতে গিয়ে দেখা যাবে, কেউ কেউ অতি আবেগে লিখা রাখল “আমার সোনার বাংলা” ... কেউ বৃত্তের মাঝে নিজের ছবি দিয়া রাখল ... কেউ লিখা রাখল “কই তুমি কইতরী, তুমাকে বালুবাসি” না, না এগুলা কিচ্ছু করা যাবে না। তাহলে দেখা যাবে পতাকা দিয়ে বিশ্বরেকর্ড করতে গিয়ে আমরা রেকর্ড করেছি ঠিকই তবে সেটা দেশ প্রেমের না বরং পতাকা বিকৃতির বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেছি ।
তাই উচিৎ হবে কোন ভাল ফটোশপ এক্সপার্টকে দিয়ে একটা স্ট্যান্ডার্ড ফ্ল্যাগ ইমেজ তৈরি করা ও মেসেজের পাশাপাশি সেটা সবার সাথে শেয়ার করা । তাহলে আর পতাকা বিকৃতির ভয় থাকবে না। আমরা সবাই সেই এক ইমেজ ব্যাবহার করব । দেখতেও ভাল লাগবে, সব বাঙ্গালির প্রোফাইলে সেইম এক ইমেজ ।
আর একটা কথা । ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে পতাকা দিয়া রাখলেই দেশপ্রেম হয় নারে ম্যান । যারা রেকর্ড করার জন্য এটা করতে চান তাদের সাথে আমি নাই, যারা দেশকে ভালবেসে এটা করতে চান আমি তাদের দলে । বাঙ্গালির অস্তিত্ব জানান দিতে পতাকা কভার পিকচারের রেকর্ড করতে হবে কেন?
আজ আমরা ফেসবুকে পতাকা কভার/প্রোফাইল পিকচারের রেকর্ড করব আর কালই সেটা অন্য কেউ ভাঙ্গব। এমন নড়বড়ে ঠুনকো রেকর্ডের ভাগীদার আমি হইতে চাই না, যেটা চাইলেই ভাঙ্গা যায় । আরে, দেশ প্রেমের যে রেকর্ড আমরা করসি, সেটা কেউ আজ পর্যন্ত ভাঙ্গতে পারসে? পারে নাই, পারে না, পারবও না।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে ধুইয়া দেশের জমিনটারে পবিত্র করসি আমরা । ২ লক্ষ বীরাঙ্গনার ইজ্জতের মূল্য দিয়া কিনতে হইসে আমাদের স্বাধীনতার পতাকা । তাই আমাদের পতাকার দামটা অনেক বেশি । অনেক অনেক বেশি । পতাকার মাঝের লাল ঐ বৃত্তটা আমার ভাইয়ের রক্ত দিয়ে রঙ করা । আমার কিশোরী বীরাঙ্গনা বোনের ইজ্জতের ছোঁয়া দিয়া বানানো ঐ পতাকার সবুজ জমিনটা । তাইতো সবুজ জমিনের উপর ঐ বৃত্তটা এত বেশি লাল, এত বেশি পবিত্র । আছে আর কোন জাতির কাছে এমন দামী পতাকা ? কইতে পারব কেউ ?
প্রোফাইল পিকচারে পতাকা দিলেই দেশ প্রেম হয় নারে পাগলা । ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ বীরাঙ্গনা, ১৬ কোটি বাঙ্গালির হৃদয়ে যে পতাকা আইকা রাইখা গেসে, সেই রেকর্ডের পর আর নতুন কোন রেকর্ড লাগে ? লাল সবুজ ঐ পতাকাটাতো বাঙ্গালির বুকের মধ্যেই থাকেরে পাগলা, বুকের এই বাম পাশে ...
( দ্বীন মুহাম্মদ সুমন -- ০১ ডিসেম্বর, ২০১৪ )
আমার ফেসবুক প্রোফাইল : https://www.facebook.com/dinmuhammadsumon
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৪