পৃথিবী নামক একটি শ্যামল গ্রহের অধিবাসী আমরা। সেকেন্ডে ১৬ মাইল বেগে সূর্যের চারদিকে ছুটে চলেছি। আর সূর্য পৃথিবীসহ গ্রহগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যতার ভেতর দিয়ে সেকেন্ড ৪২ মাইল গতিতে ধাবমান, আমরা তো মহাজাগতিক পথিক। সতত মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে বহমান আমাদের গন্তব্য কী? মহাবিশ্বের সূচনাইবা হয়েছিল কীভাবে?
একটি বিন্দুর মহাবিস্ফোণের মধ্য দিয়ে এ মহাবিশ্বের সূচনা। মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং হলো এমন একটি ঘটনা, যার আগে বর্তমান বিশ্বের পদার্থ, শক্তি, স্থান, কাল একটি মাত্র বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। পর্যবেক্ষিত ফলাফল নির্দেশ দেয় যে, আজ থেকে প্রায় ১৫শ' কোটি বছর আগে জাগতিক বিশ্বের সবকিছুর আঁধার এই বিন্দুর বিরাট বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই মহাবিশ্বের সূচনা হয়। কেউ যদি প্রশ্ন করে, ওই বিন্দুর বাইরে কী ছিল তাহলে সে প্রশ্ন অর্থহীন। এটিই মহাবিশ্বের প্রথম ঘটনা। আদি মহাবিশ্বে বিরাজমান পদার্থের ঘনত্বের হেরফেরের ফলে গ্যালাক্সি এবং নক্ষত্রগুলো গঠিত হয়েছিল, যা রাতের আকাশকে অপরূপ রূপে অলঙ্কৃত করেছে।
কত গ্যালাক্সি আছে এ মহাবিশ্বে, এর মধ্যে আমাদের অবস্থানই বা কী? অপরিমেয় মহাশূন্যে নক্ষত্রগুলো যথেচ্ছভাবে ছড়ানো নয়। বরং তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন বিশাল সব সরণির সদস্য। এই নক্ষত্র পরিবারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বও বিশাল। প্রতি পরিবারে নক্ষত্র সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি। এই নক্ষত্র পরিবারগুলোই হলো এক একটা গ্যালাক্সি। আমাদের সূর্য হলো এরকম এটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র সদস্য, আকাশে দৃশ্যমান ‘ছায়াপথ’ হলো মিল্কিওয়ের অংশমাত্র। অবশ্য বর্তমানে মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ বলতে সমগ্র গ্যালাক্সিকেই বোঝায়। রাতের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালে আমরা প্রায়ই অনুজ্জ্বল আলোক নির্মিত পথ দেখতে পাই। স্মরণাতীতকাল থেকেই এই মৃদু আলোক-নির্মিত পথটি পাশ্চাত্যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং প্রাচীন ভারতবাসীদের কাছে আকাশ গঙ্গা বা ছায়াপথ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতো প্রায় দশ হাজার কোটি গ্যালাক্সি এ মহাবিশ্বে আছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ বছর পূর্বে পিথাগোরাসের কাছে আয়োনীয় বিজ্ঞানী অ্যানাক্সিমেনিস একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন-যখন চোখের সামনে দাসত্ব ও মৃত্যু বিরাজমান সে অবস্থায় নক্ষত্ররাজি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে কষ্ট করা কতখানি অর্থবহ? এরকম প্রশ্ন আড়াই হাজার বছর পরেও শুনতে হয়। জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নির্ধারণ না করতে পারলেই আমরা অনেকেই এ ধরনের প্রশ্ন করি। ডিসকাশন প্রজেক্ট-এর বিজ্ঞান বক্তৃতায় আমাকেও প্রায় প্রশ্ন করা হয়, চোখের সামনে দারিদ্র্যতা আর মানুষের মৃত্যু ঘিরে আছে তখন এই নক্ষত্র, এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয়তা কী, কিই বা সম্পর্ক সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে? সম্প্রতি সিডরের মতো মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট ঘটনাবলী আমাদের দেখিয়েছে বাস্তুসংস্থান নীতি লঙ্ঘিত হলে কী মহাবিপর্যয় ঘটতে পারে। আর এই বাস্তুসংস্থান নীতি বা প্রকৃতির ভারসাম্যের ব্যাপারটি বিজ্ঞানই আমাদের সবচেয়ে ভালোভাবে জানাতে পারে। জানাতে পারে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে, মহাবিশ্বের তুলনায় মানবজীবন কত ক্ষুদ্র সময় অধিকার করে থাকার কথা। তুচ্ছ সব কারণে বিভেদের প্রাচীর তুলে দেওয়া, মানবজাতির সামগ্রিক অবস্থান থেকে ব্যক্তি বা জাতিস্বার্থকে আলাদা করে ফেলা কত বিপদজ্জক হতে পারে তা উপলব্ধি করতে পারবো, অনুভব করতে পারবো মানুষের সঙ্গে মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কত গুরুত্বপূর্ণ।
কত গ্যালাক্সি আছে এ মহাবিশ্বে, এর মধ্যে আমাদের অবস্থানই বা কী? অপরিমেয় মহাশূন্যে নক্ষত্রগুলো যথেচ্ছভাবে ছড়ানো নয়। বরং তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন বিশাল সব সরণির সদস্য। এই নক্ষত্র পরিবারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বও বিশাল। প্রতি পরিবারে নক্ষত্র সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি। এই নক্ষত্র পরিবারগুলোই হলো এক একটা গ্যালাক্সি। আমাদের সূর্য হলো এরকম এটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র সদস্য, আকাশে দৃশ্যমান ‘ছায়াপথ’ হলো মিল্কিওয়ের অংশমাত্র। অবশ্য বর্তমানে মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ বলতে সমগ্র গ্যালাক্সিকেই বোঝায়। রাতের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালে আমরা প্রায়ই অনুজ্জ্বল আলোক নির্মিত পথ দেখতে পাই। স্মরণাতীতকাল থেকেই এই মৃদু আলোক-নির্মিত পথটি পাশ্চাত্যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং প্রাচীন ভারতবাসীদের কাছে আকাশ গঙ্গা বা ছায়াপথ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতো প্রায় দশ হাজার কোটি গ্যালাক্সি এ মহাবিশ্বে আছে।
আর মনে রাখতে হবে নক্ষত্রগুলো নিছক মানুষের কাছে কৌতূহল তৈরি করেনি, রাতের অন্ধকারে পৃথিবীর অভিযাত্রীদের হাজার হাজার বছর পথ দেখিয়াছে, পথ দেখাবে চিরকাল। সূর্য নামের উত্তাপ পৃথিবীর জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ক্ষয়ক্ষতি দেখার উদ্দেশ্য পটুয়াখালীর গলাচিপা যাওয়ার সময় লেবুখালী নদীর তীরে যখন অন্ধকার চারিদিকটা গ্রাস করে রেখেছিল তখন ছায়াপথ ধরে থাকা নক্ষত্রগুলোর প্রচণ্ড কিন্তু নিরুত্তাপ আলো স্বস্তি দিয়েছিল, ভাবিয়েছিল অন্ধকার আর আলোর পার্থক্য নিয়ে যেমনটি প্রাচীনকালের মানুষদের করেছে।
আসিফ
ডিসকাশন প্রজেক্ট
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১১ রাত ২:২৯