গত রাতে একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরেছি। কারওয়ান বাজার থেকে ইটিসিতে (সিটিং বাসে) উঠলাম। ড্রাইভারের বাম পাশে মহিলা সিটে শাড়ি পরিহিতি একটা তরুণী বসে আছে। বিবাহিত কিনা অবিবাহিত শিউর না, যদিও এখনও গরম সেভাবে পড়েনি তবুও কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পার হতেই ওই তরুণী বেশ কয়েকপিস টিস্যু ফেলে দিয়েছে মুখের ঘাম মুছে। যাইহোক ফার্মগেট পার হবার পরই মনে হচ্ছে বাসটি কোন আনাড়ির ড্রাইভার চালাচ্ছে, হঠাৎ হাঠাৎ ব্রেক খেয়ে বাস লাফ মেরে উঠে, আবার মাঝে মাঝে এমনভাবে গাড়ি ডাইনে বায়ে কাটে যেন গাড়ি এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছে। অলরেডি পেছন থেকে অনেকে বলাবলি করছে- ওই ড্রাইভার, তুই কি ভ্যান গাড়ির ড্রাইভার নাকি রিক্সার ড্রাইভার। আবার কেউ কেউ বলছে- হালারপো গাজা খাইয়া গাড়ি চালায় মনে হয়। আমি গেটের পাশের সিটে বসায় ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে রহস্যটা বোঝার চেষ্টা করলাম, বুঝলাম ড্রাইভার একবার সামনে তাকায় আবার বামপাশে তাকায়। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সে যত বার টিস্যু দিয়ে মুখে ঘষা মারে ড্রাইভার হালারপো ততবার তারে দিকে তাকায়। আর তখনি গাড়ি লাফালাফি শুরু করে, পাবলিক এত চিল্লাচিল্লি করছে তবুও ড্রাইভারের কোন হুশ নাই। বুকে থুথু দিয়ে ভালোভাবে সিটে বসলাম। মেয়েটি যখনই টিস্যু মুখের দিকে নেয় তখনই আমি সিট শক্ত করে ধরি। ফলাফলে আমার আর সমস্যা হয়নি, তবে মনে মনে ব্যাপক ভয়ে ছিলাম। একবার ভাবছিলাম বলব ওই হালারপো বারবার মাইয়া মাইনেষর দিকে তাকালে তো একসিডেন্ট করবি। ব্যাটা শিকার যাবেনা তাই বলিনি, তার ওপর তার তাকানোর কোন প্রমাণও তো নাই। কথায় আছে ঘটনা সত্য কিন্তু সাক্ষী দূর্বল। বাস তালতলা যাওয়া পর্যন্ত পাবলিক ড্রাইভারকে ইচ্ছামত গালাগালি করছে গাজাখোর বলে। পাবলিক যেখানে চিল্লাপাল্লা করে বাস গরম করে ফেলেছে ভয়ে সেখানে মেয়েটিকে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। সে শুধু একটু পরপর টিস্যু দিয়ে ঘামে মুখের নষ্ট হয়ে যাওয়া মেকাপ মুঝছে। ড্রাইভার যে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ির বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে সেদিকেও তার নজর নেই, আসলে সুন্দরীরা মৃত্যুর সময়ও মনে হয় মেকাপের চিন্তাই করে। নয়তো সবাই ভয়ে আতংকিত আর সে...। যাইহোক শেওড়াপাড়ায় নামার জন্য সিট থেকে উঠলাম, পেছন থেকে এক লোক ধাক্কা মারল। আমাকে বলল সরেন তো ভাই , গাজাখোরের বাচ্চারে আজ গাড়ি চালানো শিখিয়ে দেব। বুঝলাম পরিস্থিতি ভালোনা তাই নেমে গেলাম। লোকটি ড্রাইভারের ঘাড়ের ওপর গিয়ে মাইর দেয়ার জন্য বারবার হাত উঠাচ্ছে। আমি বাহির থেকে উঁকি মেরে দেখলাম, মেয়েটি এখনও বারবার টিস্যু দিয়ে মুখে ঘষাঘষি করছে। আজব তরুণী, আজব ড্রাইভার!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭